২রা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:৫৬ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৯, ২০১৮
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেসব শিক্ষার্থীর নামে মামলা হয়েছে বা যারা গ্রেপ্তার বা রিমান্ডে আছে, তাদের সাধারণ ক্ষমা করে দেয়ার প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে বুধবার ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। এতে উপাচার্যরা শিক্ষার্থীদের সাধারণ ক্ষমার অনুরোধ করলে তাতে ‘না’ বলে দেন শিক্ষামন্ত্রী।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের অনুরোধের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে গেছে এবং বেআইনি কাজ করেছে, তাদের মাফ করার তারা কে? সেটা দেখবে আইন।
তিনি আরো বলেন, যারা ‘অপরাধ করেছে’ তাদের অবশ্যই আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সংঘাতময় পরিস্থিতির পর বুধবার বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে জরুরি মতবিনিময়ে বসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী সভায় বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারাই অপরাধ করুক না কেন, মাফ করে দেন। জেনারেল অ্যামনেস্টি দিয়ে দেন। তাহলে তারা সঠিক পথে ফিরে আসবে।
আর বাইরে থেকে যারা উসকানি দিয়েছে, শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করেছে, তাদের খুঁজে বের করুন।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর রাজধানী অচল করে টানা বিক্ষোভ দেখায় শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের নবম দিন সোমবার রাজধানীতে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের কঠোর অবস্থানের মধ্যে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
ওই দিনের ঘটনায় বাড্ডা ও ভাটারা থানার দুই মামলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৭৫ জনকে আটক করে পুলিশ, পরে তাদের মধ্যে ২২ জনকে পাঠানো হয় রিমান্ডে।
অধ্যাপক মান্নান বলেন, শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হওয়ায় ‘অনেক ক্ষেত্রে সংঘাত এড়িয়ে যাওয়া’ সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা যখন রাস্তায় নামল, তখন আমাদেরকে অনেক কৌশলী ভূমিকা পালন করতে হয়েছে। তাদেরকে বলেছি, তাদের সবগুলো চাওয়া পাওয়ার পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভবিষ্যতেও আমরা তাদের বোঝাতে পারব। আর আমরা যে কোনো পরিস্থিতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই।
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক শিক্ষার্থীদের ক্ষমার দাবি জানিয়ে বলেন, আমরা দেখতে চাই, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের রিমান্ডে নিয়েছে, তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বহিরাগতদের’ হামলার প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রাখতে পারব। বাইরে থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি যেন কেউ করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন পদক্ষেপ নেয়।
হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে তাদেরকে ক্ষমা করে দিলে পরবর্তী সময়ে আমরা তাদেরকে সামলে রাখব। না হলে তারা পরে আরও বাড়তে পারে।
আর যারা প্ররোচনা দিয়েছে, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে, যাতে তারা একটা শিক্ষা পায়।
নিজেরা ভেতর থেকে উদ্যোগ নেওয়ায় পুলিশ ছাড়াই হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শান্ত রাখা সম্ভব হয়েছে বলে জানান উপাচার্য। পুলিশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমরা বলেছি, খবরদার আপনারা আসবেন না, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের শান্ত রাখতে পারব।
নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম, আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডালেম চন্দ্র বর্মণসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীদের ক্ষমা করার আহ্বান জানান।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি যেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নেয়- সেই দাবিও সভায় তুলে ধরেন প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী।
বনানীর সবগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে পদক্ষেপ নেওয়ায় সেখানে কোনো সংঘাত হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি বেশি সামনে এগিয়ে পদক্ষেপ নেয়, তাহলে উত্তেজনা আরও বাড়ে, কমে না।
উপাচার্যদের এসব বক্তব্যের পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, নিরপরাধ কোনো শিক্ষার্থীকে যেন কোনোভাবে হয়রানি করা না হয়- তা তিনি দেখবেন। কিন্তু কেউ যদি আইনে প্রমাণিত হয়, বা আইনের মাধ্যমে বের হয় যে অন্যায় কাজ করেছে, কিংবা অপরাধ করেছে, তাকে কে মাফ করে দেবে?
মন্ত্রী বলেন, যারা গুজব ছড়িয়েছে, ঘটনাটাকে খারাপের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছে, সেখানে যদি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে আমরাতো তা বন্ধ করে দিতে পারি না।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গত ৫ অগাস্ট কলেজ অধ্যক্ষদের সঙ্গে মতবিনিময় করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পরদিন আর আন্দোলনে যায়নি মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, পরদিন ছাত্র-ছাত্রীরা নামেনি। দেখলাম, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেমে যায়। এর মধ্যে আন্দোলন ঘিরে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা চলে। ফোনে নির্দেশ দেওয়া হয়, আপনারা দেখেছেন। তার মানে এটাকে কেউ না কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহার করেছে।
উপাচার্যদের বক্তব্যের সূত্র ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কথা আসছে- সবাইকে মাফ করে দেন। আমরা কে এখানে মাফ করে দেওয়ার। আমিতো আগেই বলে দিলাম, সমাধান হয়ে গেছে আগের দিন। এখানে যদি কেউ উদ্দেশ্যমূলক যায়, সেটা কে মাফ করবে? আইন দেখবে সেটা।
জরুরি পরিস্থিতিতে যোগাযোগ ও পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ইউজিসিতে একটি সেল খোলার আহ্বান জানান কয়েকজন উপাচার্য।
সে প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, নরমালি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে ইউজিসির যোগাযোগ আছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আলাদা উইং আছে। জরুরি পরিস্থিতির জন্য একটি সেল আমরা শিগগিরই করে দেব।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক বেনজীর আহমেদ, নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল করীম, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ইয়াসমিন আরা বক্তব্য দেন।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D