ঢাবি ভিসির বাসভবনে হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় চার মামলা

প্রকাশিত: ১১:৪৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১১, ২০১৮

ঢাবি ভিসির বাসভবনে হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় চার মামলা

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ এবং উপাচার্যের বাসায় হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় রমনা থানায় চারটি মামলা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জানান, উপাচার্যের বাসায় হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।

‘এছাড়া পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে করা একটি মামলাসহ মোট চারটি মামলা হয়েছে।’

 তবে এসব মামলায় মোট কয়জনকে আসামি করা হয়েছে বা আসামির তালিকায় কাদের নাম রয়েছে- সেসব বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা মামলায় কী কী ক্ষতির কথা বলা হয়েছে, সে তথ্যও জানা যায়নি।

উপাচার্য আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার বাসায় যারা এসেছিল তারা মুখোশ পড়ে এসছিল। লাশের রাজনীতি করতে এসেছিল। প্রাণনাশের জন্য এসেছিল। দেশকে অস্থিতিশীল করতে এসেছিল।’

অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই হামলা চালিয়েছে ‘বহিরাগত সন্ত্রাসীরা’। এর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কোনো সম্পর্ক নেই।

ওই হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বিকালে সংসদে বলেন, ‘যারা ভাংচুর লুটপাটে জড়িত, তাদের বিচার হতে হবে। লুটের মাল কোথায় আছে, তা ছাত্রদেরই বের করে দিতে হবে।’

সরকারি চাকরিতে কোনো কোটাই থাকবে না : সংসদে প্রধানমন্ত্রী

যেহেতু কোটা চাচ্ছে না সেহেতু সরকারি চাকরিতে কোনো কোটাই থাকবে না বলে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার বিকেলে সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘোষণা দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে সমঝোতার পরও আন্দোলন চালিয়ে গিয়ে অর্থ কী?

শেখ হাসিনা বলেন, সবদিক বিবেচনা করেই কোটা প্রথা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু যেহেতু চাচ্ছে না সেহেতু কোটা প্রথা থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুঃখ পেলাম কোটা সংস্কার নিয়ে করা আন্দোলনে। আন্দোলন কী ? লেখাপড়া বন্ধ করে রাস্তায় বসে থাকা? হাসপাতালে যেতে পারছে না মানুষ।’

তিনি আরো বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরাই করেছি। কিন্তু এখন গুজব ছড়ানো হচ্ছে এসব দিয়ে।’

ছাত্র নিহত হয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিথ্যা গুজব ছড়ানোর স্ট্যাটাস কে দিল? অঘটন ঘটলে দায়িত্ব কে নিত?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভিসির বাড়িতে আক্রমণ ন্যক্কারজনক ঘটনা।’ তিনি আরো বলেন, ‘ছবি দেখে মনে হয়েছে ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ কয় দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস বন্ধ। পরীক্ষা বন্ধ হলো। রাস্তায় যানজট। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ। মানুষ কষ্টে থাকবে কেন। কোটা পদ্ধতি থাকারই দরকার নেই। আমি কেবিনেট সেক্রেটারিকে বলেই দিয়েছি, সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত নিতে।’

এর আগে বাংলাদেশে কোটা পদ্ধতির সংস্কার নিয়ে যে আন্দোলন হচ্ছে সেটা নিয়ে বুধবার সংসদে এক প্রশ্ন উত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন থেকে সব কোটা পদ্ধতি বাতিল।

সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের একটি সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত জানান।

তিনি বলেন,‘কোটা পদ্ধতি থাকলেই এ ধরণের আন্দোলন হবে বার বার হবে। প্রতিবন্ধী বা ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী যারা আছেন তাদেরকে আমরা অন্যভাবে চাকরীর ব্যবস্থা করে দিতে পারবো।’

‘মেধার মাধ্যমে যেভাবে বিসিএস পরিক্ষা হয় সেভাবে হবে’ বলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘নারীদের জন্য কোটা রাখা হয়েছিল কিন্তু এখন তারাই আন্দোলন করছে।’

মেয়েদের রাতের বেলায় আন্দোলন করা, একটা সময়সীমা বেধে দেয়ার পর সেটা না মানা এসব কিছু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন,‘সংস্কারের কথা বলতে গেলে… আবার কয়েক দিন পরে এসে আরেক দল এসে বলবে আবার সংস্কার চাই। তো কোটা থাকলেই হল সংস্কার। আর না থাকলে সংস্কারের কোন ঝামেলাই নেই। কাজে কোটা পদ্ধতি থাকারই দরকার নেই। আর যদি দরকার হয়, তাহলে আমি বলে দিয়েছে আমাদের কেবিনেট সেক্রেটারি আছে, কমিটি আছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আছে তাদের নিয়ে তারা কাজ করবে’।

তিনি ক্লাসে ফিরে যাওয়ার কথা বলেন শিক্ষার্থীদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসায় হামলার তীব্র নিন্দা জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে শিক্ষার সুযোগ দিয়েছি, সেই শিক্ষা গঠনমূলক কাজে ব্যবহৃত না হয়ে, এখন গুজব ছড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে’।

কোটা সংস্কারের দাবিগুলো কী ছিল?

কোটা সংস্কারে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদ’এর ব্যানারে যে পাঁচটি বিষয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলছে সেগুলো হল –

•কোটা-ব্যবস্থা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা (আন্দোলনকারীরা বলছেন ৫৬% কোটার মধ্যে ৩০ শতাংশই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ। সেটিকে ১০% এ নামিয়ে অঅনতে হবে)

•কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া

•সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়স-সীমা- ( মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে চাকরীর বয়স-সীমা ৩২ কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০। সেখানে অভিন্ন বয়স-সীমার দাবি আন্দোলনরতদের।)

•কোটায় কোনও ধরনের বিশেষ পরীক্ষা নেয়া, যাবে না ( কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাকরি আবেদনই করতে পারেন না কেবল কোটায় অন্তর্ভুক্তরা পারে)

•চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় একাধিকবার কোটার সুবিধা ব্যবহার করা যাবে না।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট