১২ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:৩৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৩, ২০১৮
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া আগামী মে মাসে বাংলাদেশ সফরে আসবেন।
সম্প্রতি আসামের গুয়াহাটিতে এ তথ্য নিশ্চিত করে বাংলাদেশে দীর্ঘ ১৮ বছর কারাগারে বন্দি জীবন কাটানো অনুপ চেটিয়া বলেন, ‘মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। দীর্ঘ ২২ বছর বাংলাদেশে ছিলাম। সেখানে অনেক স্মৃতি। সেই স্থানগুলো দেখতে ও পরিচিতজনদের সঙ্গে সাক্ষাত করার ইচ্ছা।’
আসামের স্বাধীনতার দাবি থেকে সরে এসে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে শন্তি আলোচনায় উলফার একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অনুপ চেটিয়া। এ কারণে তিনি স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছেন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি তিনি আসামে বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার আন্দোলন থেকে সরে আসলেও স্বাভাবিক জীবন-যাপনে নানা জটিলতা রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের নজরদারিতে থাকতে হয়। আমার মনে হয় তারা এখনো আমাকে অবিশ্বাস করে। তারা মনে করে পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন উলফা (স্বাধীন) সাধারণ সম্পাদক পদটা এখনো শূণ্য রেখেছে আমার জন্য। আমার চলাফেরায় কঠোর নজরদারি করা হয়। এ জন্য আমি পরেশ বড়–য়াদের অনুরোধ করেছি আপনারা সাধারণ সম্পাদক পদটাতে কাউকে বসান।
বর্তমান সময়ের তিক্ত কয়েকটি অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে অনুপ চেটিয়া বলেন, সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় স্বপরিবারে বেড়াতে গিয়েছিলাম। দেশে ফিরতে বিমানবন্দরে কয়েক ঘন্টা আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এতে বোঝা যায় তারা আমাকে এখনো সন্দেহ করে।
বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা চুড়ান্ত করলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন এই আলোচনাপন্থী উলফা নেতা। তিনি বলেন, ঢাকা বেড়াতে গেলে দু’ পক্ষই (ভারত ও বাংলাদেশের গোয়েন্দারা) নানা বিষয় ভাববে। তবে আমার এই সফরটার উদ্দেশ্যই হল আবেগ ও স্মৃতি রোমন্থন। কারণ সেখানে (বাংলাদেশ) দীর্ঘ ২২ বছর ছিলাম।
তিনি বলেন, জেলে যাওয়ার আগে ৫ বছর মুক্ত ছিলাম। পরিচয় লুকিয়ে অনেক মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিলাম। তারা অনেকে মারা গেছে শুনেছি। যারা বেচে আছে তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে চায়। ঢাকার মোহাম্মাদপুর, ধানমন্ডি, কলাবাগান, মিরপুর, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল, চট্টগ্রামে অনেক স্মৃতি রয়েছে। সেসব স্থানগুলো দেখতে চায়। এ ছাড়াও রাঙামাটি অসমীয়া মানুষরা বসবাস করে তাদের দেখার ইচ্ছা আছে।
প্রসঙ্গত, আসামের স্বাধীনতার দাবিতে ১৯৭৯ সালে ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা) প্রতিষ্ঠা করেন অনুপ চেটিয়া ও পরেশ বড়ুয়া। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক। তখন থেকে উলফা আসামের স্বাধীনতার জন্য ব্যাপক সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করে। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সশস্ত্র কর্মকা- চালানোর এক পর্যায়ে ভারত সরকার অনুপ চেটিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অপহরণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ছাড়াও তার বিরুদ্ধে একাধিক খুনের অভিযোগ আনে ভারত সরকার। ১৯৯১ সালে অনুপ চোটিয়াকে গ্রেফতারও করে আসাম সরকার। কিন্তু কিছু দিন পরই জামিন পেয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন তিনি।
দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ২১ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডের একটি বাসা থেকে দুই সঙ্গীসহ গ্রেফতার হন অনুপ চেটিয়া। ওই সময় তার কাছ থেকে বাংলাদেশী পাসপোর্ট, স্যাটেলাইট টেলিফোন ও বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি অনুপ চেটিয়ার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় প্রথম বৈদেশিক মুদ্রা আইনে একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। পরে পাসপোর্ট ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরও দুটি মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। এসব মামলায় আদালত তার বিরুদ্ধে জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়।
এদিকে গ্রেপ্তারের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরের জন্য ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ দেয়া হয়। তবে ২০০৩ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করায় হস্তান্তর নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। আইনি জটিলতা ও দুই দেশের মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকার কথাও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতকে বলা হয়েছিল।
তবে বর্তমান সরকার আমলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরে জটিলতা নিরসন হয়। ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর উলফার শীর্ষ এই নেতাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে। এর সঙ্গে শেষ হয় দেড় যুগের বিতর্ক।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D