‘আর তো সহ্য করা যায় না’

প্রকাশিত: ১১:১৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২, ২০১৮

‘আর তো সহ্য করা যায় না’

‘কী করব? আর তো সহ্য করা যায় না। বন্ধু-বান্ধব বা ৫০ জনকে এক জায়গায় জড়ো করতে করতে দেখা যাবে বিষয়টিই চাপা পড়ে গেছে। তাই একাই দাঁড়িয়ে গেলাম। আমাকে দেখে যদি অন্যরা উদ্বুদ্ধ হয়।’ কথাগুলো বলছিলেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আফসানা কিশোয়ার লোচন।

তিনি আজ সোমবার সকাল সোয়া ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত রাজধানীর পথে দাঁড়িয়ে ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

আফসানার হাতে থাকা বড় প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘একজন পুরুষই পারে আগামীকালের একটি সম্ভাব্য ধর্ষণ বন্ধ করতে।’ তারপর হ্যাশট্যাগে লেখা ‘ধর্ষণ বন্ধ করুন’, ‘বি আ রিয়েল ম্যান’, ‘স্টপ রেইপ’।

রাত আটটার দিকে টেলিফোনে আফসানা কিশোয়ার জানান, তিনি উত্তরার রাজলক্ষ্মী ফুটওভার ব্রিজ ও আজমপুর ফুটওভার ব্রিজের ওপরে দাঁড়িয়ে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন।

তিনি বলেন, ‘কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কথা হচ্ছিল বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলছে। কিছু একটা করা দরকার। তারপরই এভাবে প্রতিবাদ জানানোর চিন্তা মাথায় আসে। সাড়ে ছয় বছর বয়সী একমাত্র মেয়েকে স্কুলে দিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী দাঁড়িয়ে যাই। অফিস থেকে আজ ছুটি নিয়েছিলাম। ছুটিটাকে কাজে লাগালাম। বাসায় আর কাউকে জানাইনি। শুধু ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বের হই।’

আফসানা জানান, প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন শেষে আফসানা নিজের ফেসবুকে তা পোস্ট করেন। কর্মসূচি পালনের সময় সবাই উৎসাহ দিয়েছে তা নয়।

আফসানার মা মারা গেছেন। বাবা ও স্বামী এ প্রতিবাদের কথা জানেন কি না, প্রশ্নে হেসে আফসানা বলেন, ‘বাবা এখন পর্যন্ত জানেন না। স্বামী ফেসবুকে দেখেছেন। বাসার সবাই আমাকে চেনে। স্বামী আর আমি একসঙ্গে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। তাই স্বামী এ ব্যাপারে আমাকে কিছু বলবেন না।’

আফসানার মতে, এ ধরনের আন্দোলন শুধু নারীরা করলে হবে না, আন্দোলনে পুরুষদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

আরো পড়ুন…

ধর্ষণের প্রতিবাদে এইচএসসি পরিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

সোমবার এইসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিলো কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থী শান্তার। কিন্তু প্রতিবেশী মাইনুল হোসেনের লালসার শিকার হয়ে পরীক্ষায় একদিন আগে রবিবার প্রাণ হারাতে হলো এ শিক্ষার্থীর।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নের ব্রাহ্মনকচুরী গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ মিয়ার মেয়ে কলেজ পড়ুয়া শান্তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো প্রতিবেশী লাল মিয়ার মাস্টার্স পড়ুয়া ছেলে মাইনুল হোসেনের।

গত ২৫ মার্চ প্রেমিকাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। পরে এক পর্যায়ে শান্তাকে বিয়ে করা সম্ভব নয় বলে ফোন করে জানায় মাইনুল। এইকথা শুনে ২৬ মার্চ সকাল ৯টার দিকে নিজ ঘরে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে শান্তা। পরে থাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবারের লোকজন।

পরে সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকায় প্রেরণ করেন। কিন্তু; ঢাকা মেডিকেল কলেজে আইসিইউ বেড না পাওয়ায় তাকে ভর্তি করা হয় জাপান-বাংলাদেশ ফেন্ডশীপ হাসপাতালে। সেখানে দুই দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ভর্তি করা হয় সেন্টাল হসপিটালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত রবিবার দুপুরে মৃত্যু হয় শান্তা আক্তারের।

কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় শান্তার বাবা ফিরোজ মিয়া বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন নিহত শান্তার ভাই মিজান মিয়া।

এদিকে, ওই ছাত্রীর মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌছার পর থেকে ঘরে তালা দিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন প্রেমিক মাইনুল ও তার পরিবারের সদস্যরা।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট