২১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৪৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২১, ২০১৬
ঢাকা: নিয়তিই বোধ হয় ঠিক করে রেখেছিল, টাইব্রেকারে নেইমারের শটটাই হবে নির্ধারক। প্রথম চার শটে দুই দলই গোল করার পর জার্মানির নিলস পিটারসেনের শট ফিরিয়ে দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক ওয়েভারটন।
নেইমার গোল করতে পারলেই ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে চির আক্ষেপ হয়ে থাকা অলিম্পিকের সোনা। ‘চাপ’ কাকে বলে, নেইমারের কাছে জেনে সেই সংজ্ঞাটা নতুন করে লেখা উচিত।
সেই চাপ জয় করে নেইমার গোল করলেন। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের রাজকুমারের পায়েই ঘুচল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বয়ে যাওয়া সেই আক্ষেপ। অলিম্পিক ফুটবলের সোনা ব্রাজিলের।
মারাকানা তখন ফেটে পড়েছে উল্লাসে। কোনো ফুটবল ম্যাচে গ্যালারি থেকে এমন গর্জন উঠতে পারে, আজ মারাকানায় না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব হতো না। পুরো ম্যাচজুড়েই তা উঠেছে। নেইমারের শট জালে জড়াতেই যা হলো, সেটি রীতিমতো শব্দ-বিস্ফোরণ!
নেইমার তখন শুয়ে পড়েছেন মাঠে। চার বছর আগে লন্ডন অলিম্পিক ফুটবলের ফাইনাল শেষ হওয়ার পর ওয়েম্বলিতেও শুয়ে পড়েছিলেন। সেই নেইমার ছিলেন পরাজিত সৈনিক। এ দিন তিনি বিজয়ী সেনাপতি।
রোমাঞ্চ আর নাটকীয়তায় ঠাসা মহাকাব্যিক ১২০ মিনিটের ম্যাচ শেষে স্কোর ১-১। ম্যাচে ব্রাজিলের গোলটিও নেইমারের। ম্যাচের ২৭ মিনিটে দুর্দান্ত এক ফ্রি কিক থেকে। মারাকানা তখন উল্লাসে মাতাল।
সেটিতেই অদ্ভুত এক নীরবতা নেমে এল দ্বিতীয়ার্ধে জার্মান অধিনায়ক ম্যাক্সিমিলান মেয়ার ১-১ করে ফেলার পর। ‘মারাকানাজো’ ফিরে আসার শঙ্কা যে তখন ঘিরে ধরেছে ব্রাজিলিয়ানদের।
১৯৫০ বিশ্বকাপে উরুগুয়ের বিপক্ষে ওই ম্যাচেও তো ব্রাজিল এগিয়ে গিয়েছিল প্রথমে। তার পর উরুগুয়ের সমতাসূচক গোল। খেলা শেষ হওয়ার ১১ মিনিট বাকি থাকতে গিঘিয়ার ওই মরণশেল।
আবারও কি ডুবে যেতে হবে অমন বিষাদসিন্ধুতে! নির্ধারিত ৯০ মিনিটের মতো অতিরিক্ত সময়েও ম্যাচে আধিপত্য বলতে যা বোঝায়, তা ছিল ব্রাজিলেরই। তবে এটাও তো সত্যি যে, প্রথমার্ধেই তিন-তিনবার ব্রাজিলের পোস্টে বল লাগিয়েছে জার্মানরা।
ফাইনালের আগে জার্মানির কোচ বলছিলেন, তার দলের তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য এটা দারুণ একটা অভিজ্ঞতা হবে। ৮০ হাজার দর্শকের সামনে মারাকানায় খেলা বলে কথা!
তা অভিজ্ঞতা একটা হলো বটে, জার্মানরা তো ৮০ হাজার দর্শকের সামনে খেললেন না, খেললেন তাদের বিপক্ষে। মাঠের ১১ জনের চেয়েও যেটি কখনো কখনো বড় প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছিল।
গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইনদের ব্যঙ্গাত্মক গানের জবাবে ব্রাজিলিয়ানরাও পেলে-ম্যারাডোনাকে নিয়ে একটা গান বেঁধেছিল। গানের কথাগুলো মোটামুটি এ রকম—‘এক হাজার গোল/এক হাজার গোল/শুধুই পেলের/ম্যারাডোনা তো কোকেন নেয়।’
ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা এই ম্যাচে নেই। তার পরও মারাকানামুখী জনতার মুখে ওই গান। ম্যাচের আগে, ম্যাচের সময়ও ওই গানেই মুখরিত স্টেডিয়াম। আর একটু পর পর ‘ব্রাজিল’ ‘ব্রাজিল’ গগনবিদারী চিৎকার।
জার্মানি সমতা এনে ফেলার পর অবশ্য ওই দর্শকের পেলে-ম্যারাডোনাকে নিয়ে ভাবার মতো অবস্থা ছিল না। তখন শুধুই ‘ব্রাজিল-ব্রাজিল’ চিৎকারে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে ফেলা। অতিরিক্ত সময়ে শুরু হলো নতুন ‘খেলা’।
জার্মানদের পায়ে বল গেলেই গ্যালারি থেকে উঠল শিসের শব্দ! সেটি এমনই তীব্র যে, রীতিমতো কানে লাগছিল। টাইব্রেকারে জার্মানদের শট নেওয়ার সময় তা আরও তীব্র। চাপ এই ম্যাচে কোনো দলের জন্যই কম ছিল না।
ব্রাজিলের ওপর ছিল ফুটবল পাগল পুরো দেশের প্রত্যাশা মেটানোর চাপ। জার্মানির জন্য গর্জনশীল মারাকানা। কে আগে সেই চাপে ভাঙে, টাইব্রেকারটা যেন ছিল তারই পরীক্ষা। যেটিতে শেষ পর্যন্ত ভাঙলেন নিলস পিটারসেন। ওয়েভারটন অবশ্য বলতে পারেন, আমার কৃতিত্ব কেড়ে নিচ্ছেন কেন, পিটারসেনের শটটা তো আমিই ঠেকালাম!
নেইমারের ব্রাজিল তখন সোনার পদক গলায় বিজয়মঞ্চে দাঁড়িয়ে। বাজছে ব্রাজিলের জাতীয় সংগীত। নেইমারদের সঙ্গে যেটি গাইছে পুরো স্টেডিয়াম। অনেকের চোখেই জল দেখতে পাচ্ছি। এত এত দিনের দুঃখ ভোলার আনন্দের কান্না।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D