সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এরশাদ

প্রকাশিত: ১২:০৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৪, ২০১৮

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এরশাদ

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করছে জাতীয় পার্টি আজ শনিবার। সমাবেশে অংশ নিতে উদ্যানে আসছেন নেতাকর্মীরা। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে উদ্যানে প্রবেশ করছে।

শনিবার (২৪ মার্চ) সকাল ১১টায় সমাবেশ শুরু হবার কথা থাকলেও ইতোমধ্যে সমাবেশস্থল ভরে গেছে। সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে। দলীয় স্লোগান দিয়ে তারা মাতিয়ে তুলেছেন পুরো এলাকা।

সকাল ১১টায় মহাসমাবেশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। ইতোমধ্যেই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এসে উপস্থিত হয়েছেন। সকাল ৯টা বিশ মিনিটে এরশাদ উদ্যানে পৌঁছান। তিনি সভাপতিত্ব করবেন আজকের সভার। পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেবেন।

মহাসমাবেশ বর্ণাঢ্য করতে নেয়া হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। শাহবাগ থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত নানা রঙের ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে একাধিক তোরণ।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এবং উত্তর ছাড়াও দোহার, নবাবগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁ, নরসিংদী, সাভার, ধামরাই, কালীগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী মহাসমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়াও বরিশাল, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের প্রত্যস্ত অঞ্চল থেকে বাস, ট্রেন এবং লঞ্চে নেতাকর্মীরা মহাসমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন।

আরো পড়ুন…
আমার সময়ে দেশের এই অবস্থা হলে আমি আত্মহত্যা করতাম : এরশাদ
বগুড়া:‘এখন ছেলেরা কি করছে। ছেলেরা ইয়াবা, ফেনসিডিল খায়, পানের দোকানেও এখন এসব পাওয়া যাচ্ছে। কেন খায়? কর্মসংস্থান না থাকায় হতাশায় যবুকরা নেশাগ্রস্ত হচ্ছে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করলে সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। ছেলে এমএ পাস করার পর কনস্টেবলের চাকরির জন্য ১০ লাখ টাকা লাগে। এসআইয়ের চাকরির জন্য ২০ লাখ টাকা লাগে। পিয়নের চাকরির জন্য ১০ লাখ টাকা লাগে। আমার সময়ে দেশের এই অবস্থা হলে আমি আত্মহত্যা করতাম’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

শনিবার দুপুরে বগুড়া পর্যটন মোটেলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়া উদ্দিন বাবলু ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বগুড়া জেলা জাপার সভাপতি শরিফুর ইসলাম জিন্নাহ এমপি ও দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ওমর এমপি।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দলীয় শক্তি প্রয়োজন। আমরা দেখাতে চাই জাতীয় পার্টি কতটা শক্তি সঞ্চয় করেছে। আগামীতে আমরা জনগণের রায় নিয়ে এককভাবে ক্ষমতায় যেতে চাই। আমাদের মূল লক্ষ্য হবে মহাসমাবেশের মাধ্যমে দেশের মানুষকে দেখানো, আমরা নির্বাচন করে এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।’

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ আমি। তবে আমার বয়স হয়েছে, এটা আমি মানি না, বিশ্বাস করি না। আমার একটাই লক্ষ্য আগামীতে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া। এসময় তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় গেলে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নিরাপদ। আমরা কাউকে জেলে দেব না।

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতে চাইলে আগামী ২৪ মার্চ সবাইকে ঢাকায় আসতে হবে। ঢাকার সমাবেশে যোগ দিতে হবে। আমার বয়স ৮০ কিংবা ৯০ বছর সেটা বড় কথা নয়। আপনারা আমার সঙ্গে আছেন এটাই বড় কথা।

বর্তমান সরকারের উন্নয়নের সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, আমার সময়ে ঢাকা থেকে ৬ ঘন্টায় রংপুরে গেছে মানুষ। এখন উন্নয়নের মহাসড়কে সময় লাগে ১২ ঘণ্টা। আমার সময় মানুষ খুন হয়নি, আর এখন দেখেন। এ সরকারের সময়ে নাকি উন্নয়ন হয়েছে। প্রতিদিন দেখছি বাল্যবিয়ে হচ্ছে এবং ভয়ে পিতা-মাতা তার মেয়েকে স্কুলে পাঠায় না। আমার সময়ে এমন ছিল না। আমার সময় আপনার মেয়ে আমার মেয়ে ছিল।

বর্তমান সরকারের ব্যাংক খাত ও অর্থনীতি বিষয়ে এরশাদ বলেন, শেয়ার মার্কেটে টাকা হারিয়ে অনেকেই আত্মহত্যা করেছেন। শেয়ার বাজারের টাকাগুলো বড়লোকেরা নিয়েছে। এখন ব্যাংক ডাকাতি হয়, ব্যাংকেও টাকা নেই। এমনকি আমার ব্যাংকেও টাকা নেই। পৃথিবীর কোথায়ও শুনিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডাকাতি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকে ডাকাতি হয়েছে। অনেক তদন্ত হয়েছে, কিন্তু কারা এর পেছনে তা এখনো জানা যায়নি।

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। জনগণের মনে এরশাদ সরকারের স্বর্ণালি যুগের কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। জাতীয় পার্টির ওপর মানুষের আস্থা বেড়ে গেছে।’

জাপা মহাসচিব আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি তিনশ’ আসনে এককভাবে মনোনয়ন দিয়ে গণবিপ্লব ঘটাবে। নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি শুরু করেছি। এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই ২৪ মার্চ ঢাকায় মহাসমাবেশ। এটি হবে স্মরণকালের বৃহত্তম সমাবেশ।