২৮শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:৫৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ২২, ২০১৮
খালেদা জিয়ার মামলায় ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড কার্লাইল আইনি পরামর্শ দেবেন৷ আর এই পরামর্শের জন্য তিনি বাংলাদেশে আসতে প্রস্তুত৷ তবে তাঁর নাম ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা৷
বুধবার বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লর্ড কার্লাইলকে খালেদা জিয়ার মামলার আইনি পরমর্শক হিসেবে নিয়োগের কথা জানান৷
আলোচনায় যুদ্ধাপরাধীদের মামলা প্রসঙ্গঃ
লর্ড কা্র্লাইলকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী নিয়োগের তথ্য প্রকাশের পরই ঢাকায় এক সমাবেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘নিজের আইনজীবীর প্রতি কোনো বিশ্বাস নাই বলে তিনি (খালেদা জিয়া) একজন বিদেশি আইনজীবীকে নিয়োগ করেছেন৷ সেই আইনজীবী কে? সেই আইনজীবী হলো, ওই একাত্তরের ঘাতক মীর কাসেম আলীর আইনজীবী হয়েছিল লন্ডনের সেই কুখ্যাত আইনজীবী৷’
এ নিয়ে বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশররফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের জানা নাই৷ আর জামায়াত কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেছিল কিনা তা-ও আমরা জানি না৷ আমরা খালেদা জিয়ার মামলায় আইনি সহায়তার জন্য একজন দক্ষ আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছি৷ তার দক্ষতা দেখেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷’
লর্ড কা্র্লাইলের সঙ্গে ই-মেলে যোগাযোগ করা হয়েছিল৷ তিনি ই-মেলের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধীর মামলার আইনজীবী ছিলাম না৷’ তবে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এবং ফাঁসি কার্যকর হওয়া মীর কাশেম আলীর পক্ষে বিবৃতি দেয়ার কথা স্বীকার করেন৷
তিনি দাবি করেন, ‘যে ট্রাইব্যুনাল মীর কাশেম আলীকে দণ্ড দিয়েছে, আমি সেই ট্রাইব্যুনালের কর্মপদ্ধতির সমালোচনা করেছিলাম৷ কমনওয়েলথভুক্ত আইনজ্ঞরা, যারা বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক আদালতের (আইসিটি) কাজ পর্যবেক্ষণ করছিলেন, তাদের কাছে এই আদালতের প্রক্রিয়া কমন ল’র নীতির সঙ্গে সামঞ্জম্যপূর্ণ মনে হয়নি৷ আমি মনে করি, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যুদ্ধাপরাধের বিচার হওয়া গুরুত্বপূর্ণ৷ আমি যুক্তরাজ্যের যুদ্ধাপরাধ আইনের একজন অন্যতম সংসদীয় প্রবক্তা৷’
লর্ড কার্লাইল ও বাংলাদেশ বিষয়ক সেমিনার:
হাউস অব লর্ডসের ক্রসবেঞ্চের সদস্য লর্ড কার্লাইল কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভের চেয়ারম্যান৷ ব্রিটিশ গোয়েন্দা সেবা প্রতিষ্ঠান এম-সিক্সটিনের সাবেক প্রধান স্যার জন স্কারলেটের সঙ্গে মিলে কৌশল ও রাজনৈতিক ঝুঁকি পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান এসসি স্ট্র্যাটেজি লিমিটেড পরিচালনা করেন তিনি৷ ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের স্বাধীন পর্যবেক্ষক ছিলেন এই আইনজীবী৷
লর্ড কারলাইল সাধারণত গুরুতর অপরাধ, স্থানীয় সরকার এবং লাইসেন্স, পরিকল্পনা ও পেশাগত নিয়ম-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সরকারি আইনের মামলায় বেশি অংশ নিয়ে থাকেন৷ সংসদীয় অধিকার ও আচরণ সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে৷ এছাড়া বড় ধরনের বাণিজ্যিক প্রতারণা মামলার বেসামরিক ও অপরাধের দিকগুলোতে তিনি বিশেষ পারদর্শী৷ এমন অনেক মামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি৷
২০১৬ সাল থেকে লন্ডনে লর্ড কার্লাইল বাংলাদেশ বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করে আসছেন৷ সেমিনারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটই প্রাধান্য পায়৷ হাউস অব লর্ডসের প্রয়াত সদস্য লর্ড অ্যাভবেরি এর আগে এই সেমিনারের আয়োজন করতেন৷
২০১৬ সালে তার মৃত্যুর পর লর্ড কার্লাইল এই আয়োজন করে আসছেন৷ ওই বছর তিনি দুই দফা সেমিনারের আয়োজন করেন৷ গত বছরের জুলাই মাসে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে বিবদমান প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপের আয়োজন করেছিলেন৷ তবে বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ওই বৈঠকে যোগ দিলেও আওয়ামী লীগের নেতারা যোগ দেননি৷
‘আমি আইনজীবী, ক্যাম্পেইনার নই’
খালেদা জিয়ার মামলায় আইনি সহায়তা দেয়ার পাশাপশি আন্তর্জাতিকভাবে খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনত প্রচারণা চালাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে লর্ড কারলাইল বলেন, ‘এখানে আমার ভূমিকা একজন আইনজীবীর৷ রাজনীতিবিদ বা প্রচারকর্মীর নই৷’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি একজন আইনজীবী হিসেবে ফি নেবো৷ তবে তার পরিমাণ গোপন বিষয়৷’
ই-মেলে লর্ড কার্লাইল জানান, ‘বাংলাদেশের আদালতে সরাসরি একজন আইজীবী হিসেবে আইনি লড়াই চালানোর আমার সুযোগ নেই৷ তবে খালেদা জিয়ার মামলার কার্যক্রম একজন আইনজীবী হিসেবে আদালতে প্রত্যক্ষ করতে পারবো৷ আমি খালেদা জিয়ার মামলার জন্য বাংলাদেশে আসতে চাই৷ খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করবো৷ মামলায় আইনগত পরামর্শ দেবো৷’
তিনি আরো জানান, ‘আমি এরইমধ্যে জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট মামলার কাগজপত্র দেখতে শুরু করেছি৷ মামলাটি যে উপায়ে তদন্ত করা হয়েছে তা দেখে আমি উদ্বিগ্ন৷ খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়ার বিষয়টিও আমাকে বিচলিত করেছে৷ রাষ্ট্রপক্ষ যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেছে তার গুণগত মান, সেগুলো সঠিক নিয়মে সংগ্রহ করা হয়েছে কিনা এবং সঠিক তথ্য আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে কিনা, আমার তাতে আগ্রহ আছে৷ আমি সেগুলো পরীক্ষা করে দেখবো৷’
কেন লর্ড কার্লাইল?
এ প্রসঙ্গে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘দলের মহাসচিব পরিস্কার করেই বলেছেন, কার্লাইল খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলকে আইনগত পরামর্শ দেবেন৷ তিনি আলালতে আইনি লড়াই করবেন না৷ আর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যত মামলা আছে, সব মামলায়ই তিনি এই আইনগত পরামর্শ দেবেন আইনজীবী প্যানেলকে৷ তিনি এই ধরনের মামলা আন্তর্জাতিকভাবে কীভাবে দেখা হয়, কীভাবে মোকাবেলা করা হয়, সে তথ্যও জানাবেন৷ আর তিনি যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি মানবাধিকার অ্যাক্টিভিস্ট, তাই তিনি যদি দেখেন খালেদা জিয়ার মামলায় মানবাধিকারের কোনো লঙ্ঘন হয়েছে, তাহলে তিনি তা নিশ্চয়ই আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরবেন৷’
বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, ‘লর্ড কার্লাইল কেবলই খালেদা জিয়ার মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন৷ তিনি এখন মামলার নথিপত্র দেখছেন৷ এরপর হয়তো তিনি খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের সঙ্গে কথা বলবেন৷ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন৷ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা রাজনৈতিক এবং হয়রানিমূলক৷ তাই তার পরামর্শ এই মামলায় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সুফল দিতে পারে৷ তিনি কমনওয়েলথ হিউম্যান ইনিশিয়েটিভের প্রেসিডেন্ট৷ তাই খালেদা জিয়ার মামলায় তিনি যদি দেখেন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তিনি এটাকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন৷’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বার কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়া বিদেশি নাগরিকদের সরাসরি আদালতে আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ নাই৷ পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় সম্ভবত ব্রিটিশ আইনজীবী টমাস উইলিয়াস এসেছিলেন৷ বাংলাদেশে ওয়ান ইলেভেনের সময়ও বিদেশি আইনজীবী এসেছে৷ সবার ক্ষেত্রেই একই নিয়ম দেখেছি৷’
প্রসঙ্গ খালেদা জিয়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ড মাথায় নিয়ে৷
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D