বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ২:০৩ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৫, ২০১৬

আজ সোমবার ১৫ আগস্ট। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, সাবেক প্রেসিডেন্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী। জাতীয় শোক দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আব্দুুল হামিদ এডভোকেট ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন।

দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। দেশের সকল সরকারি-আধাসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে মিলাদ মাহফিল কুরআনখানি এবং আলোচনা সভা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোররাতে ঢাকার ৩২নং ধানমন্ডির বাসভবনে সেনাবাহিনীর একদল তরুণ অফিসার ও জওয়ানদের হাতে শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হন।

ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।

হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্ত বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দু’কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।

১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালে দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় শোক দিবস পুনর্বহাল করা হয়। এ উপলক্ষে আজকের দিনটি সাধারণ ছুটি পালিত হবে।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জে টুঙ্গীপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতি করেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ গঠিত হলে তিনি সক্রিয়ভাবে এর সাথে সম্পৃক্ত হন। তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গঠিত মুজিবনগর সরকারের প্রেসিডেন্ট এবং স্বাধীন বাংলাদেশেরও প্রথম প্রধানমন্ত্রী।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এডভোকেট বলেন, বাঙালি জাতির শোকাবহ দিন আজ। আমি এ দিনে শোকাহত চিত্তে গভীর শ্রদ্ধা জানাই মহান স্বাধীনতার স্থপতি কালজয়ী শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের অম্লান স্মৃতির প্রতি। জাতীয় শোক দিবসে পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে সে দিনের সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

অপরদিকে পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের এই দিনে মানব ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। আমি সকল শহীদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও জনগণের নিকট থেকে তার স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। কোটি কোটি বাঙালির অন্তরে তার ত্যাগ ও তিতিক্ষার সংগ্রামী জীবনাদর্শ গ্রোথিত রয়েছে।

এদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন শোক দিবসের অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারসহ বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। সংবাদপত্রগুলোতেও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধ, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে।

১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে এ মাসের প্রথম দিন থেকেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এবারো সরকারিভাবে পালিত হচ্ছে দিবসটির বিভিন্ন কর্মসূচি। দিবসটিকে ইতোমধ্যেই সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

সরকারিভাবে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে অর্ধনমিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন এর মধ্য দিয়ে শুরু হবে দিবসের কমসূচি। এ ছাড়া বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার এবং সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।

এদিন সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদান শেষে অনুষ্ঠিত হবে মোনাজাত ও কোরআন তেলওয়াত।

এ ছাড়াও ১৫ আগস্টে শাহাদাত বরণকারী জাতির জনকের পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য শহীদের বনানী কবর স্থানে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ফাতেহা পাঠ ও মুনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

এদিন সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফাতেহা পাঠ, প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদানসহ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন।

সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে টুঙ্গিপাড়ায় সকাল ১০টায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

এ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত থাকবেন। এদিন বাদ জোহর দেশের সকল মসজিদে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সুবিধামতো সময়ে মন্দির,প্যাগোডা, গীর্জাসহ অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা এবং দুপুরে অসচ্ছল দুঃস্থ মানুষদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করা হবে। মহিলা আওয়ামী লীগ বাদ আছর বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে ।

আওয়ামী লীগের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৬ আগস্ট বিকাল ৪ টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা । এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

মহানগর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, মহিলা যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন শোক দিবস উপলক্ষে অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

এ ছাড়াও বাদ আসর দেশের সকল ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় মিলাদ মাহফিল এবং মন্দির, প্যাগোডা ও গীর্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। জাসদ, সিপিবি, জেপি, গণফোরাম,ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়, জাতীয় প্রেসক্লাব সহ অন্যান্য সাাংস্কৃতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সংগঠন এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ।

সৈয়দ আশরাফুলের আহ্বান : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাত বার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশবাসীকে সাথে নিয়ে পালন করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাসমূহের সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। একইসাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সমস্ত শাখার নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি স্মরণ ও পালন করার জন্য বলা হয়েছে।