১৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৫১ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৫, ২০১৬
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার মাত্র ৫৫ বছরের জীবনে (১৯২০-১৯৭৫) স্বদেশের মাটি আর মানুষকে এমন গভীর ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধেছিলেন, যে বন্ধন কোনো দিন ছিন্ন হওয়ার নয়। আজীবন ঔপনিবেশিক শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে, দারিদ্র্য-নিপীড়িত বঞ্চিত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে এমন এক অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন, যার তুলনা বিরল।
একজন প্রকৃত গণমানুষের নেতার যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন, তার সব গুণ নিয়েই জন্মেছিলেন ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষ। তার রাজনৈতিক জীবন ছিল বহুবর্ণিল। বাঙালির ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঁকগুলোতে তিনি পালাবদলের কাণ্ডারিদের সাথে থেকেছেন। নিজে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার জলদগম্ভীর কণ্ঠের ছিল এমন জাদুকরী প্রভাব, তিনি যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, বাঙালি জাতি নির্দ্বিধায় তা মেনে নিয়েছে। অবশ্যপালনীয় বলে তা মেনে চলেছে। এমনকি নিরস্ত্র বাঙালি তার নির্দেশে আধুনিক ভারী অস্ত্রে সুসজ্জিত, সমরশিক্ষায় প্রশিক্ষিত হামলাকারী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধ করতে খালি হাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তেও দ্বিধা করেনি। জাতির প্রতি এত প্রবল ছিল তার প্রভাব। তার প্রতিও বাঙালি জাতির ছিল এত গভীর আস্থা ও বিশ্বাস। উভয় পক্ষের এই মেলবন্ধনেই রচিত হয়েছিল বাঙালি মুক্তির ইতিহাস। বাংলার আকাশে উদিত হয়েছে লাল-সবুজ পতাকা।
কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতা লাভের পর যখন বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন ঠিক তখনই কিছু উচ্চাভিলাষী, ষড়যন্ত্রকারী, সামরিক দুর্বৃত্ত বর্বর হামলা করেছিল নিদ্রাতুর জাতির পিতার পরিবারের ওপর। যেমন হামলা করেছিল পাকিস্তানি বর্বর সেনারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঘুমন্ত নিরস্ত্র নিরপরাধ বাঙালির ওপর। যেন তাদেরই প্রেতাত্মা হয়ে কিছু বাংলা মায়ের গর্ভস্রাবসম কিছু সামরিক দুষ্কৃতকারী ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলে পড়েছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে। যেখানে তখন নিদ্রায় নিমগ্ন বাঙালির স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার স্ত্রী-পুত্র, নবপরিণীতা পুত্রবধূরা। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আকণ্ঠ মদপান করা বর্বর ঘাতক কাপুরুষ কিছু সেনাদুর্বৃত্তের গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে বঙ্গবন্ধু নিথর পড়ে গেছেন নিজের রক্তের স্রোতে।
১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেট কেবল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই কেড়ে নেয়নি, সেদিন তারা হত্যা করেছিল আরো ১৫ জনকে। রাজনীতির সাথে সামান্যতম সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও নারী-শিশুরাও সেদিন রেহাই পায়নি ঘৃণ্য কাপুরুষ ওই ঘাতক চক্রের হাত থেকে।
শহীদদের মধ্যে ছিলেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব। বড় ছেলে শেখ কামাল ও তার নববিবাহিতা বধূ বিখ্যাত ক্রীড়াবিদ সুলতানা কামাল। মেজো ছেলে শেখ জামাল ও তার স্ত্রী নববধূ রোজী জামাল। তাদের হাতের মেহেদির দাগ সেদিন একাকার হয়ে গিয়েছিল রক্তের স্রোতে। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেলকেও তারা অবলীলায় হত্যা করেছিল।
খুনিরা এখানেই থামেনি। তারা হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ ভাই শেখ নাসের, আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর বোনের ছেলে তরুণ নেতা শেখ মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণিকেও। আরো খুন করেছে বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ১৩ বছরের কন্যা বেবী সেরনিয়াবাত ও ১০ বছরের ছেলে আরিফকে। তারা আরো হত্যা করেছে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর চার বছরের শিশুপুত্র বাবু এবং আবদুন নঈম খান রিন্টুকে।
বঙ্গবন্ধুর জীবন বিপন্নের খবর পেয়ে রাতে ঘুম থেকে উঠে তার জীবন রক্ষার জন্য ছুটে এসেছিলেন কর্নেল জামিল। খুনিরা তাকেও হত্যা করেছে।
আর কী বিস্ময়কর! ইতিহাসের ঘৃণ্য ও কলঙ্কময় ঘটনা যারা ঘটাল, সেই আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষার জন্য ইনডেমনিটি আইন পাস করে বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়া হলো। ঘোষণা করা হয়েছিল এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের সাজামুক্তির। অথচ সেদিন তা নিয়ে তথাকথিত কোনো কোনো মানবাধিকারবাদীদের সোচ্চার হতে দেখা যায়নি।
সেই ভয়াল রাতে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার স্বামী বিখ্যাত পরমাণুবিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া এবং কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করছিলেন। আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবানিতে প্রবাসে থাকার কারণে তারা প্রাণে বেঁচে যান।
তারপর পদ্মা-মেঘনা-যমুনা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বহু স্রোত। ১৯৮১ সালে প্রবাসজীবন থেকে দেশে ফিরে শেখ হাসিনা হাল ধরেছেন স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। সুযোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে দেশে মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। স্বৈরাচারের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে দলকে ক্ষমতায় নিয়ে গেছেন। সে বছরই শুরু হয়েছিল জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচারের দীর্ঘ প্রক্রিয়া। অবশেষে বহুলপ্রতীক্ষিত সেই মুহূর্ত। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি খুনিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে সাজা কার্যকর করার ভেতর দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হয়।
বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সেদিন মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত পক্ষের শক্তি ঘৃণিত এক চক্রের সাথে আঁতাত করে শারীরিকভাবে হত্যা করেছিল ঠিকই; তারা ভেবেছিল হত্যার ভেতর দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেবে তাকে; কিন্তু ওরা জানে না পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ আছেন, যাদের মৃত্যু হয় না। তারা সর্বজনের স্মরণে ও শ্রদ্ধায় বেঁচে থাকেন। মানুষ শ্রদ্ধাভরে তাদের স্মরণ করে। তার কীর্তি ও অবদান নিয়ে আলোচনা করে। শেখ মুজিব ফিরে এসেছেন আরো বিপুলভাবে, আরো ব্যাপক বিস্তৃত হয়ে বাঙালির হৃদয়ে। তার সুযোগ্য কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তার দেখানো পথ ধরে, তার আদর্শ সমুন্নত রেখে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে আজ বাস্তবায়ন করে চলেছেন। জনগণের ক্ষমতায়নের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ আজ যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা বিশ্বের কাছে বিস্ময়কর বলে স্বীকৃত হয়েছে। তার নেতৃত্বে সংগ্রাম এখনো চলছে। এই সংগ্রাম উন্নত বিশ্বের কাতারে বাংলাদেশের নাম লেখানোর সংগ্রাম। মুক্ত উদার গণতান্ত্রিক এক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত শান্তিময় কল্যাণকর সমাজ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। এই সংগ্রামে বিজয় আসবেই।
আজ এই শোকের দিনে জাতি তার জনককে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে। তার কর্ম ও সাধনার আলোচনা নতুন প্রজন্মকে তার আদর্শে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা চালাবে। আজ আমরা তাকে স্মরণ করব। তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্যে তাকে হৃদয়ে ধারণ করব।
ইংল্যান্ডে রাজার মৃত্যু হলে বলা হয় ‘করহম রং ফবধফ, ষড়হম ষরাব ঃযব শরহম’ (রাজার মৃত্যু হয়েছে, রাজা দীর্ঘজীবী হোন)। আজ এই শোক দিবসে আমরাও এ কথা গভীর প্রত্যয়ে বলতে চাই, ব্যক্তি শেখ মুজিবুর রহমান শাহাদত বরণ করেছেন। কিন্তু জাতির পিতা ফিরে এসেছেন মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে। তিনি চিরঞ্জীব।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D