সিলেটে প্রকৌশলী নজরুল হাকিম’র বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্তঃনেই

প্রকাশিত: ১:৩৯ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৭, ২০১৭

সিলেটে প্রকৌশলী নজরুল হাকিম’র বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্তঃনেই

সিলেটে প্রকৌশলী নজরুল হাকিমের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগের অন্তঃনেই। অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগগুলো মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে উপর মহল। শুরু হয়েছে প্রকৌশলী নজরুল হাকিমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত। তদন্তে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের চট্টগ্রামস্থ পূর্বাঞ্চলীয় অধিদপ্তর’র তদন্ত দল এখন সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশল চট্রগাম অঞ্চলের এসিস্টেন্ট চীফ ইঞ্জিনিয়ার ও সুপারেন্টেন্ডেন্ট মুজিবুর রহমান সরকার এ তদন্ত দলের প্রধান হযে বুধবার সিলেট আসছেন। তিনি বুধবার ও বৃহস্পতিবার দু’দিন দু’রাত সিলেটে অবস্থান করবেন বলে জানা গেছে।
সিলেটে অবস্থানকালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেট-এর বিভিন্ন কর্তা-ব্যক্তি, ঠিকাদার সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক করবেন এবং অভিযোগের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোাচনা ও পর্যালোচনা করবেন। পাশাপাশি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেট আঞ্চল অফিস গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের কাজও সরেজমিন পরিদর্শন করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়। বৃহস্পতিবার দুপরে তিনি নগরীর তালতলাস্থ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চল-এর বিভিন্ন দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিদর্শন করে আর্থিক ব্যয় ও লেনদেনে অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
সূত্র মতে প্রকল্পের কাজ না করিয়ে কোটি কোটি টাকার লেনদেন ও বিল প্রদান এবং প্রকল্পের কাজে বিস্তর অনিয়ম-দূূর্নীতি এবং বিশেষ করে সিলেট সদর, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, দক্ষিণ সুরমা ও সুনামগঞ্জের প্রায় অর্ধশত প্রকল্পে কাজ না করিয়ে বিল প্রদানের অভিযোগের বিষয়ও তার তদন্তে রয়েছে। এছাড়াও ভূমিকম্পের ডেঞ্জার জোন সিলেটে শিক্ষাভবনের মত স্পর্শকাতর ভবনগুলোতে নিম্নমানের কাজ, এগুলোকে মারাত্মক ঝুকিপূর্ন ও বিপজ্জনক করে তোলার বিষয়টিও তদন্তের আওতায় আনা হবে বলে সংশ্নিষ্ট সূত্রে প্রকাশ।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরীর একান্ত আশীর্বাদপুষ্ট হয়েই প্রকৌশলী নজরুল হাকিমের সিলেটে পদায়ন। বর্তমানে তিনি ওই অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী হয়ে রাজনৈতিক ছড় বদলিয়ে অতি উৎসাহী আওয়ামী প্রকৌশলীর ছদ্ধাবরন করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী’র একান্ত আস্থাভাজন হয়ে কাজ করছেন তিনি। চারদলীয় জোট সরকার আমলের বিএনপি ও জামায়াত দলীয় কয়েকজন ঠিকাদারের সাথে রয়েছে প্রকৌশলী নজরুল হাকিমের ব্যবসায়িক সম্পর্ক। তারা রাজনৈতিক ছড় বদলিয়ে এখন অতি উৎসাহী আওয়ামী ঠিকাদার সেজে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, সিলেটর দক্ষিণ সুরমার আলমপুরস্থ মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষাভবন নির্মানে ১২ কোটি টাকার প্রকল্পে ঠিকাদার মঞ্জুর হোসেনের সাথে রয়েছে প্রকৌশলী নজরুল হাকিমের ব্যবসায়িক পার্টনারশিপ। বর্তমান আওয়ামী সরকার আমলে আজ থেকে প্রায় ৮ বছর পূর্বে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যুতের সাব ষ্টেশন নির্মান প্রকল্প হাতে নেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রায় অর্ধকোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল এ প্রকল্পে। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না করেই ঢাকাইয়া একজন ঠিকাদারের সাথে পার্টনার হয়ে প্রকৌশলী নজরুল হাকিম প্রকল্পের অর্ধকোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। সরেজমিনে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আজো বিদ্যুতের কোন সাব ষ্টেশন নির্মিত হয়নি, হওয়ারও কোন সম্ভাবনা নেই।
সূত্র জানায়, দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরে সিলেটস্থ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে অবস্থান করে প্রকৌশলী নজরুল হাকিম একটি ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। নামে বেনামে মালিক হয়েছেন অনেক বাসাবাড়ি, ফ্ল্যাট বাড়ি ও জায়গা জমির। সিলেট নগরীর সুবিদবাজরস্থ পয়েন্টের কর্নার ভিউ নামের ১২তলা টাওয়ারের যে ফ্ল্যাটে বাস করছেন প্রকৌশলী নজরুল হাকিম, ফ্ল্যাটটি তিনি তার এক বোনের নামে কিনেছেন। কয়েকটি অভিজাত আবাসিক হোটেলেও রয়েছে তার মালিকানা পার্টনারশিপ। নগররীর তালতলাস্থ রূপালী ব্যাংকে তার চাচার নামে একাউন্ট খোলে জমা রেখেছেন কোটি কোটি টাকা। নগরীর চৌহাট্টাস্থ ওয়ান ব্যাংকেও রয়েছে নামে বেনামে তার কোটি কোটি টাকার লেনদেন। শিক্ষা প্রকৌশলী নজরুল হাকিম এনবিআর-এর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের নাম ভাঙ্গিয়ে অতি দাপটের সাথে সিলেটে অবস্থান করে শুধু প্রকল্পের টাকাই আত্মসাতে জড়িত নন, কাজ ও প্রকল্প পাইয়ে দেয়ার নামে বহু ঠিকাদরের টাকাও আত্মসাত করে এখন তাদেরকে সরকার ও সরকার দলের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। সরকারদলের সন্ত্রাসী প্রকৃতির একদল নেতা-কর্মীর সাথেও রয়েছে তার গভীর সখ্যতা।
শিক্ষা প্রকৌশলী নজরুল হাকিমের অনিয়ম-দূর্নীতি ও আত্মসাতের যে খবর মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে তা তদন্তে বুধবার সড়কপথে সিলেট আসছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম-এর এসিস্টেন্ট চীফ ইঞ্জিনিয়ার ও সুপারেন্টেন্ডেন্ট মুজিবুর রহমান সরকার। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বুধবার বিকেল ৩টায় তিনি হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে রয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট