রাজনগরে ১১ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে দূর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশিত: ৬:০৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৩, ২০২৫

রাজনগরে ১১ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে দূর্নীতির অভিযোগ

Manual2 Ad Code

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার টেংরা-তারাপাশা সড়কটির বেহাল দশা, নিম্নমানের কাজ এবং সরকারের ১১ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ এনে এই সড়কের স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে স্থানীয় হরিপাশা বাজারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

Manual2 Ad Code

রবিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে হরিপাশা বাজারে ‘টেংরা-তারাপাশা সড়ক বাঁচাও!’ ব্যানারে এবং টেংরা ও কামারচাক ইউনিয়নের সচেতন জনতার উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হরিপাশা বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মাতাব এর সভাপতিত্বে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনের সূচনা বক্তব্যে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটিকে “চরম দূর্নীতির শিকার” হিসেবে উল্লেখ করে এই অঞ্চলের লাখো মানুষের ভোগান্তি ও সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয়ের প্রতিবাদ ফুটে উঠে।

হরিপাশা বাজার পরিচালনা কমিটির সদস্য হাফিজ সেজু আহমদ এর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে তারাপাশা ব্যবসায়ী কমিটির সদস্য জহিরুল ইসলাম বাবু, হরিপাশা বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ময়না মিয়া, ইসলামী ছাত্রসেনা কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি মাওলানা ওলীউর রহমান, জামায়াতে ইসলামী টেংরা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মর্তুজ মিয়া, জান্নাত গ্রুপ হরিপাশা-এর সচিব জাকির হোসেন শাকিব বক্তব্য রাখেন।

এসময় স্থানীয় ব্যবসায়ী কমিটি, বাজার পরিচালনা কমিটি, ছাত্র সংগঠন এবং সচেতন নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ও সাধারণ জনতা উপস্থিত ছিলেন।

Manual6 Ad Code

জান্নাত গ্রুপ হরিপাশা-এর সচিব জাকির হোসেন শাকিব তার বক্তব্যে ১১ কোটি ৬১ লক্ষ ২১ হাজার ১৮৭ টাকা ব্যয়ে চলমান মেগা প্রকল্পে দূর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করে বলেন, ২০২৪ সালের ৮ মে কাজ শুরু হওয়া এই প্রকল্পেও নিম্নমানের কাজ হয়েছে। ​২০২৫ সালের জানুয়ারিতে নতুন কার্পেটিং শুরু হওয়ার দিন সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোঃ ইসরাইল হোসেন কাজের নিম্নমানের বিটুমিন ও অগোছালো ফিনিশিং দেখে তীব্র অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের তদবিরে সেই নিম্নমানের কাজ নিয়েই তড়িঘড়ি করে কার্পেটিং শেষ করা হয়। ​সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ অবহিত করে তিনি বলেন, উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী নাহিদ শিকদারের যোগসাজশে আসল সরকারি সড়কটির ১৩০০ মিটার অংশ বাদ দিয়ে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের ৯০০ মিটার অংশে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাঁধের ইটসলিং দ্রুত ভেঙে পড়ছে এবং মূল সড়ক বাদ পড়ায় পাঁচটি গ্রামের প্রধান প্রবেশপথ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

Manual1 Ad Code

জামায়াতে ইসলামী টেংরা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মর্তুজ মিয়া ​নকশা পরিবর্তন করে অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ এনে তার বক্তব্যে বলেন, প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন করে সরকারি অর্থ লুটপাট করা হচ্ছে। মনু ব্রিজের দক্ষিণ পাশে রাস্তার প্রস্থ ১৬ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৮ ফুট করা হলেও, বালু মহল সংলগ্ন হরিপাশা বাজারে রাস্তার প্রস্থ ১৬ ফুট থেকে কমিয়ে মাত্র ১৪ ফুট ৬ ইঞ্চি করা হয়েছে। এই বৈষম্যমূলক নকশা পরিবর্তনের মাধ্যমে উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিলে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ইসলামী ছাত্রসেনা কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি মাওলানা ওলীউর রহমান ৫ টনের বেশি লোডবাহী যান চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানিয়ে তার বক্তব্যে সম্প্রতি শেষ হওয়া আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ টেকসই করতে কমপক্ষে ২৮ দিন কিউরিংয়ের নিয়ম মেনে পানি দেওয়া এবং ভারী যান চলাচল বন্ধ রাখার আহবান জানান। তিনি বলেন, ​এই সড়কের ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৫ টন। তাই, ৫ টনের অধিক অতিরিক্ত লোডবাহী সকল যান চলাচল অবিলম্বে এবং স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। ​তিনি হুশিয়ারি দেন, যদি অতিরিক্ত লোডবাহী গাড়ি চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ না হয়, তবে সরকারের কোটি টাকার এই বৃহৎ প্রকল্পটি আবারও ব্যর্থ হবে।

Manual3 Ad Code

তারাপাশা ব্যবসায়ী কমিটির সদস্য জহিরুল ইসলাম বাবু এবং হরিপাশা বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ময়না মিয়া তাদের বক্তব্যে স্থায়ী লোড নিয়ন্ত্রণে টেংরা-তারাপাশা সড়কে ৫ টনের বেশি অতিরিক্ত লোডবাহী সকল যান চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, নকশা পরিবর্তন, নিম্নমানের কাজ ও দূর্নীতির সাথে জড়িত সকল কর্মকর্তা (উপজেলা প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী নাহিদ শিকদারসহ) এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, জনগণের ভোগান্তির কারণ হয়ে থাকা, নকশা থেকে বাদ পড়া মূল ১৩০০ মিটার সড়কের কাজ অবিলম্বে এবং মানসম্মত উপায়ে পুনরায় শুরু করার ব্যবস্থা নিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে হরিপাশা বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মাতাব ভোগান্তির কালচিত্র ও মর্মান্তিক পরিণতির কথা তোলে ধরে বলেন, ২০১৫ সালে প্রথমবার পিচ কার্পেটিংয়ের পর থেকেই সড়কের বেহাল দশা শুরু হয়, যা নিয়মিত দুর্ঘটনার জন্ম দিত। নিম্নমানের কাজের কারণে ২০২০ সালের সাময়িক মেরামতকৃত সড়ক মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই ভেঙে যায়। তিনি উজিরপুরে ফিড পরিবাহী ট্রাক উল্টে ড্রাইভারের মর্মান্তিক মৃত্যু এবং যান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় পথেই এক গর্ভবতী মহিলার মর্মান্তিক মৃত্যুর মতো দু’টি দুঃখজনক ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, এই সড়কের ভোগান্তি শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, মানুষের জীবনেরও ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের ন্যায্য দাবি মেনে নেবে এবং এই সড়কের স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।


 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code