তীব্র দাবদাহে পুড়ছে ইউরোপ, ছড়িয়ে পড়ছে দাবানল

প্রকাশিত: ৩:৫১ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২৫

তীব্র দাবদাহে পুড়ছে ইউরোপ, ছড়িয়ে পড়ছে দাবানল

মাইনাস ডিগ্রীর ইউরোপ এবার সামারে যেন আগুন লেগে গেছে। গরম আর গরম। এবারের দাবদাহে গোটা ইউরোপীয় জনজীবন নাকাল।

সময় আগেই শুরু হওয়া তীব্র তাপপ্রবাহে গোটা ইউরোপজুড়ে যেন হাঁসফাঁস অবস্থা। তুরস্ক ও ফ্রান্সে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে হয়েছে। শুধু তুরস্কেই প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে। অন্যদিকে স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, পর্তুগাল, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলোতে জারি করা হয়েছে উচ্চ সতর্কতা।

জুন মাসে এতটা গরমকে ‘অস্বাভাবিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সংস্থা কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস। সংস্থাটির মতে, পশ্চিম ইউরোপজুড়ে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় ৫ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি রেকর্ড হয়েছে। সাধারণত এই রকম তাপমাত্রা দেখা যায় জুলাই বা আগস্টে, কিন্তু এবার তা জুনেই ছড়িয়ে পড়েছে।

তুরস্কের পশ্চিমাঞ্চলে দ্বিতীয় দিনের মতো দাবানল চলছে। ঝোড়ো হাওয়ার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। দেশটির বন মন্ত্রণালয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (AFAD) জানিয়েছে, অন্তত পাঁচটি অঞ্চল থেকে ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রোববার দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। দেশটির আবহাওয়া বিভাগ ১০১টি অঞ্চলের মধ্যে ৮৪টিতে অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করেছে। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে এবং প্রায় ৪০০ হেক্টর বনভূমি আগুনে পুড়ে গেছে।

স্পেনের কাতালোনিয়ায় দাবানলে এখন পর্যন্ত দুইজন কৃষক নিহত হয়েছেন এবং ৬,৫০০ হেক্টর জমি পুড়ে গেছে। এছাড়া ফ্রান্স সীমান্তবর্তী এল গ্রানাডো এলাকায় ৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা দেশটির জুন মাসের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

ইতালিতে অন্তত ১৬টি শহরে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। দিনের সবচেয়ে গরম সময়ে খোলা জায়গায় কাজ নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনাও বিবেচনায় রয়েছে।

জার্মানির পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। নাগরিকদের পানি ব্যবহারে সংযমী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।

এমনকি সাধারণত সহনীয় আবহাওয়ার দেশ নেদারল্যান্ডসও এবার হিটওয়েভের কবলে। তাপমাত্রা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে এবং স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্কবার্তা জারি করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ তাপপ্রবাহজনিত কারণে মারা যান। এই সংখ্যা বন্যা, ভূমিকম্প ও ঘূর্ণিঝড়জনিত মৃত্যুর সম্মিলিত সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই এই চরম আবহাওয়া আরও ঘন ঘন ও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বর্তমানে চলমান এই তাপপ্রবাহ চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝিতে সর্বোচ্চে পৌঁছবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।