শাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে কোটাবিরোধীরা

প্রকাশিত: ৫:১৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২৪

শাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে কোটাবিরোধীরা

সরকারি চাকরিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহার ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।

দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল নিয়ে তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ও হল প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে গিয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আমার ভাইয়ের উপর হামলা কেন? প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমি নই, তুমি নও, রাজাকার রাজাকার’, ‘কে বলেরে রাজাকার, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার’, ‘আমি কেন রাজাকার, জবাব চাই জবাব চাই’- ইত্যাদি স্লোগান দেন।

বিক্ষোভ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থী সুইটি আক্তার, নিঝুম, ফয়সাল আহমেদ, সাত্ত্বিক ব্যানার্জি, স্বার্থক, আসাদুল্লাহ আল গালিব সব আরও অনেকেই বক্তব্য দেন।

এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে, শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। সেই সঙ্গে অতিদ্রুত সংসদে আইন তুলে কোটা সংস্কার পাস করতে হবে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের জেরে রোববার মাঝরাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শাবিসহ দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। রাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বের হলে সেখানে ছাত্রলীগ বাধা প্রদান করে। এ সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হওয়ার অভিযোগ উঠে।

গত ১ জুলাই থেকে চার দফা দাবিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে রয়েছেন। ২ জুলাই থেকে শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি, বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা। পরে ৪ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীরা এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালাতে থাকে।

গতকাল রোববার এক দফা দাবিতে পদযাত্রা নিয়ে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। এরপর তারা ঘোষণা দেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোটা সংস্কারের দাবিতে সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চান তারা। কোনো পদক্ষেপ না এলে তারা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।

পরে চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা আন্দোলন নিয়ে মন্তব্য করলে শিক্ষার্থীরা আজ সোমবার দুপুর ১২টা থেকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ শুরু করেন।

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে বিসিএসসহ সব ধরনের সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটার প্রচলন ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা। প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৫৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হতো কোটাধারী চাকরিপ্রার্থীদের মধ্য থেকে। এটি ‘বৈষম্যমূলক’ উল্লেখ করে বিভিন্ন সময় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ২০১৮ সালে হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ঢাকার পাশাপাশি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক দিন সংসদে ঘোষণা দেন, যেহেতু কেউ কোটা চায় না সুতরাং এখন থেকে আর কোনো কোটা থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত বিসিএসসহ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সবধরনের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ছাড়াই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলে আসছে। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আগের মতোই কোটা পদ্ধতি চালু আছে।

সম্প্রতি, কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে আবারও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রচলন চান। হাইকোর্ট ওই রিট ‘অ্যাবসোলুট’ ঘোষণা করেন এবং ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে জারি করা সরকারি পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলে গেছে এবং আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর চার সপ্তাহের জন্য ‘স্ট্যাটাস কো’ বা ‘স্থিতাবস্থা’ জারি করেছেন।

আগামী ৭ আগস্ট এ বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। হাইকোর্ট ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করার পর থেকে আন্দোলনে নেমেছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের ভয়, সরকার আদালতকে ব্যবহার করে আবারও কোটা পদ্ধতি চালু করতে চায়।

প্রথমে তারা দাবি করেন ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে অর্থাৎ কোনো ধরনের কোটা থাক সেটি তারা চান না। পরে তারা অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে কোটার যৌক্তিক ও স্থায়ী সংস্কার চান। সেক্ষেত্রে তারা মূলত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা রাখার পক্ষে এবং সেটি সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ করার দাবি তোলেন। এ সংস্কার এখন তারা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরির ক্ষেত্রেও চাচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা বা না রাখার বিষয়ে তাদের পরিষ্কার কোনো বক্তব্য নেই।


 

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট