বিজেপি-আরএসএস-এর মনস্তত্ত্ব নিয়ে বিশ্বকে সতর্ক করলেন ইমরান

প্রকাশিত: ৫:৫৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৯, ২০১৯

বিজেপি-আরএসএস-এর মনস্তত্ত্ব নিয়ে বিশ্বকে সতর্ক করলেন ইমরান

‘ফ্যাসিবাদী, বর্ণবাদী উগ্র হিন্দু মোদীর হাতে ভারতের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার’

কাশ্মীর নিয়ে ক্রমশই জলঘোলা হচ্ছে পাকিস্তানি ও ভারতীয় নেতাদের মধ্যে, ক্রমবর্ধমান এই বাকযুদ্ধের মধ্যেই পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিশ্বকে মোদীর হাতে থাকা ভারতীয় পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক হতে আহ্বান জানান। ইমরান রবিবার (১৮ আগস্ট) মোদীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, দিল্লীর ‘ফ্যাসিবাদী’ এবং ‘বর্ণবাদী’ মোদী সরকারের অধীনে রয়েছে ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র, যা বিশ্বের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

ধারাবাহিক এক টুইট বার্তায় ইমরান বলেন, ‘ভারতের ফ্যাসিবাদী, বর্ণবাদী উগ্র হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ভারতের পারমাণবিক অস্ত্রাগার, বিশ্বকে অবশ্যই নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। এটি এমন একটি বিষয় যা কেবল এই অঞ্চল নয়, বিশ্বকে আক্রান্ত করবে।’

ভারতের হিন্দু আধিপত্যবাদী সরকার কেবল তার নিজস্ব সংখ্যালঘুর জন্য নয় পাকিস্তানের জন্যও হুমকি বলে জানান ইমরান। মোদী সরকার ‘নেহেরু ও গান্ধীর ভারতবর্ষের কাঠামোকে’ পাল্টে ফেলেছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং এর আদর্শিক উৎস জাতীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস)-এর চরমপন্থী মনস্তত্ত্বকে আরও ভালো করে বোঝার জন্য বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানান ইমরান।

ভারতীয় মুসলমানদের দুর্দশার বিষয়ে ইমরান বলেন, ‘ইতোমধ্যেই ভারতের ৪০ লাখ মুসলমানকে বন্দিশিবিরে রাখা হয়েছে, নাগরিকত্ব বাতিলের মুখে আছে তারা। বিশ্বকে নোট রাখা উচিৎ, বোতল থেকে জিন বেরিয়ে এসেছে এবং তা ঘৃণা ও গণহত্যার মতবাদকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। আরএসএসের গুণ্ডাদের তাণ্ডব শুরু হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি এখন এটি বন্ধ না করে তবে তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে।’

চলতি মাসে রাষ্ট্রপতির আদেশের বলে ভারতের হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকার অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার প্রদানকারী ৩৭০ অনুচ্ছেদ সংবিধান থেকে বাতিল করে দেয়। এই বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে যুগের পর যুগ ধরে এক যুদ্ধের পরিস্থিতিতে রয়েছে পারমাণবিক শক্তিধর পাক-ভারত। মোদীর এই সিদ্ধান্ত যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও প্রায় দশক পরে কাশ্মীর ইস্যুতে বৈঠক করে এবং সকল পক্ষকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানায়।

নিরাপত্তা পরিষদ যেদিন বৈঠক করে একপাক্ষিক পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বললেন পাক-ভারতকে, সেদিনই ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ভারতের পারমাণবিক নীতি পরিবর্তন করার ইঙ্গিত দিয়ে পরমাণুর বিষয়টিকে আলোচনায় আনেন। রাজনাথের এই মন্তব্যকে তত্ক্ষণাৎই পাকিস্তান ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ এবং ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে নিন্দা জানান। শুধু তাই নয়, যেকোন পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধে প্রস্তুত পাকিস্তান, এমন মন্তব্য করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুরেশি। ফলে দু-দেশের মধ্যে পারমাণবিক উত্তেজনা বেড়ে যায়।

এছাড়াও, ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে কোনো আলোচনা নয়, আলোচনা হলে তা হবে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তার সর্বশেষ মন্তব্যে এমন কথা বলে পাকিস্তানকে খোঁচা দেয়। রাজনাথ টুইটে বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা হওয়া উচিত বলে কিছু লোক এখনো বিশ্বাস করে। তবে, যতক্ষণ না পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন বন্ধ করে দেয়, ততক্ষণ কোনো আলোচনা নয়। পাকিস্তানের সঙ্গে যদি আলোচনা হয় তবে তা হবে আজাদ কাশ্মীর নিয়ে।’

রাজনাথের সর্বশেষ মন্তব্যের জবাবে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি এক বিবৃতিতে বলেলেন, কাশ্মীর নিয়ে বিতর্কিত এবং ‘অবৈধ’ পদক্ষেপ নেওয়ার পরে ভারতের অসুস্থ মানসিকতার প্রতিচ্ছবি এই মন্তব্য। তিনি বলেন, ‘আমরা আজ ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর মন্তব্য দেখেছি। এ অঞ্চল ও এর বাইরেও ভারতের অবৈধ ও একতরফা কর্মকাণ্ডের পরে নিজেকে এই অবস্থার মধ্যে ফেলেছে, তারই প্রতিফলন ঘটেছে এই মন্তব্যে।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, জম্মু ও কাশ্মীর বিরোধটি জাতিসংঘের সুরক্ষা কাউন্সিলের প্রস্তাবগুলো এবং কাশ্মীরি জনগণের ইচ্ছার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এই বিরোধের বিষয়ে পাকিস্তানের অবস্থান জাতিসংঘের সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে।

কুরেশি ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির নিন্দাও করেন। যেখানে ভারত সরকার ১৩ দিন কারফিউ আরোপ এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। কাশ্মীর সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ রয়েছে, দুই সপ্তাহ ধরে কাশ্মীরিরা মানবিক ট্র্যাজেডির মধ্যে আছে যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থায় উঠে এসেছে। জাতিসংঘের সুরক্ষা কাউন্সিলসহ বিশ্ব সম্প্রদায় এই সম্পূর্ণরূপে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনা করেছে।

কুরেশি মোদী সরকারকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে কাশ্মীরে একটি গণভোটের আহ্বান জানিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। তিনি বলেন, ‘আমি নরেন্দ্র মোদীকে কারফিউ তুলে পুরো কাশ্মীরি নেতৃত্বকে আহ্বান জানাতে চ্যালেঞ্জ জানাই। এমনকি যারা আপনারের সরকারের সঙ্গে রয়েছে তাদেরসহ। যেমন : প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, ওমর আবদুল্লাহ। হুরিয়াত নেতৃত্ব : মিরওয়াইজ ওমর ফারুক, আলী গিলানী, ইয়াসিন মালিক- এমন অসংখ্য ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের নিয়ে গণভোট করে দেখান।