যারা গ্রেপ্তারের নেপথ্যে কাজ করেছিলেন, তাদের হিসাব-নিকাশ হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১:৪৯ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০১৮

যারা গ্রেপ্তারের নেপথ্যে কাজ করেছিলেন, তাদের হিসাব-নিকাশ হবে : প্রধানমন্ত্রী

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যারা গ্রেপ্তারের নেপথ্যে কাজ করেছিলেন, তাদের হিসাব-নিকাশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী লীগের স্বাধীনতা দিবসের আলোচনায় তিনি এ ঘোষণা দেন। দীর্ঘ বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে নানা সময় কী কী ষড়যন্ত্র হয়েছে উল্লেখ করে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তাকে গ্রেপ্তারের কথা তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বিশেষ একটি এজেন্সি ভাড়া করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দুর্নীতি খোঁজার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কোনো কিছু পায়নি।

তিনি বলেন, ‘তখন অত্যাচার নির্যাতন করেছে বিএনপি সরকার। আর গ্রেপ্তার করা হলো আমাকে। কারা এই কাজ করেছে, তা আমি জানি। তাদের হিসাব নিকাশ পরে করব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে ষড়যন্ত্র হলো। ভোট বেশি পেয়েও ক্ষমতায় আসতে পারিনি। ওই সময় বিএনপি-জামায়ত জোট ক্ষমতায় এসে শুরু করলো জুলুম-অত্যাচার। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো তারা গ্রামের পর গ্রাম নির্যাতন চালিয়েছে। মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, মানুষের চোখ তুলে নিয়েছে, হাত-পা ভেঙে দিয়েছে, ক্ষেতের ফসল নষ্ট করেছে, ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, পুকুর কেটে দিয়েছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। ভোট দেওয়ার অপরাধে এমন কোনও অত্যাচার নেই, তারা করেনি। ছয় বছরের শিশুকে পর্যন্ত ধর্ষণ করেছে।’

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনেও যেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসতে পারে, তার জন্যও ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে।

তিনি আরো বলেন, ‘২০০৮ সালে সরকার গঠন করেছি। এরপর ২০১৩ সালে তারা এক দুর্বিষহ অবস্থা তৈরি করে। সেই অবস্থা আমরা সামাল দিয়েছি। ২০১৪ সালে আবার নির্বাচন হয়, মানুষের ভোটে ক্ষমতায় আসি। কিন্তু তারা ২০১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করে। সাড়ে ৩ হাজার মানুষ পুড়িয়েছে। তারা তো ক্ষমতায় থেকে ভোগ-বিলাস করেছে, মানি লন্ডারিং করে ধরা পড়েছে। আদালত তাদের সাজা দিলে তারা মানে না। তারা কিছুই মানে না। তারা ক্ষমতায় থেকে মানুষকে হত্যা করেছে, এখনও তাই করতে চায়। দেশের কোনও উন্নয়ন তারা চোক্ষেই দেখে না।’

প্রসঙ্গত, সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারি করে ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে দুই বছর দায়িত্ব পালন করা ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেনা সমর্থিত বলে পরিচিত হলেও ওই সরকারের আমলে বাংলাদেশের কয়েকজন সম্পাদক এবং নাগরিক সমাজের সদস্যরা প্রভাবশালী হয়ে উঠেন। কেউ কেউ এটা ‘আমাদের সরকার’ বলেও পরিচয় দিতেন।

ওই সরকারের মেয়াদ শেষে ফখরুদ্দীন আহমদ এবং চাকরির মেয়াদ শেষে মঈন উ আহমেদ বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান। তবে তাদের বিরুদ্ধে এবং ‘আমাদের সরকার’ দাবি করা লোকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাব-নিকাশের কথা বললেন।

বিএনপি সরকারের আমলে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনে ছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিএনপি তখন নির্বাচনের মাঠে ছিল। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার এই সময়ে ভোটের ১১ দিন আগে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী। জারি হয় জরুরি অবস্থা, স্থগিত হয় সংবিধান।

ওই আমলে দুই প্রধান নেত্রী শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া-দুই জনকেই গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে প্রথমে গ্রেপ্তার হক আওয়ামী লীগ সভাপতি। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ধানমন্ডিতে সুধা সদন থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। ১১ মাস পর ২০০৮ সালের ১১ জুন মুক্তি পান তিনি। দেড় মাসেরও বেশি সময় পর ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন খালেদা জিয়া। এক বছর আট দিন পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর খালেদা জামিনে মুক্তি পান।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট