১৬ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:১৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪
দেশে বিয়ে এবং বিবাহবিচ্ছেদের হার উভয়ই বেড়েছে। বিচ্ছেদের প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক বা পরকীয়া। এরপরেই রয়েছে ‘দাম্পত্য জীবন চালিয়ে যাওয়ার অক্ষমতা’। এ ছাড়া ভরণপোষণের ব্যয় বহন করতে অক্ষমতা বা অস্বীকৃতি এবং পারিবারিক চাপও এখানে বড় ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (এসভিআরএস) ২০২২ শীর্ষক জরিপ গত ৩১ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়েছে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে সাধারণ (১৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে) বিয়ের হার ২০০৬ সালের ১৯ দশমিক ৬ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ২৫ দশমিক ২ হয়েছে। ১৭ বছরের ব্যবধানে এ ক্ষেত্রে ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে।
বিবিএসের জরিপে দেখা গেছে, একই সময় বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাকও বেড়েছে। ২০০৬ থেকে ২০২২ সাল সময়ে স্থূল বিবাহবিচ্ছেদের হার শূন্য দশমিক ৬ থেকে বেড়ে ১ দশমিক ৪-এ দাঁড়িয়েছে।
তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদের দুই ধরনের হার বিবিএসের জরিপে পাওয়া পায়। একটি হলো স্থূল বিচ্ছেদ অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার অনুপাতে বিবাহবিচ্ছেদের হার। অন্যটি হলো সাধারণ বিবাহবিচ্ছেদের হার, যাতে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের হিসাব করা হয়।
দেশে পরকীয়ায় জড়ানোর কারণে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ সংসার ভেঙে যাচ্ছে। পরকীয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি সংসার ভেঙেছে ঢাকা বিভাগে—২৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
জরিপ প্রতিবেদনে সংসার ভাঙার দ্বিতীয় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে দাম্পত্য জীবন চালিয়ে যাওয়ার অক্ষমতা। ২২ দশমিক ১ শতাংশ দম্পতির সংসার ভেঙে যাচ্ছে দাম্পত্য জীবন চালিয়ে যাওয়ার অক্ষমতার কারণে।
তালাক ও আপসে বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে পরকীয়া ও দাম্পত্য জীবন চালিয়ে নিতে অক্ষমতা ছাড়াও অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে : ভরণপোষণের ব্যয় বহন করতে অক্ষমতা—১০ দশমিক ৬ শতাংশ, পারিবারিক চাপ—১০ দশমিক ২ শতাংশ এবং যৌনমিলনে অক্ষমতা—৪ দশমিক ২ শতাংশ।
জরিপের সময়ে পরকীয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে—২৮ দশমিক ৩ শতাংশ। এরপরের অবস্থানে রয়েছে রংপুর বিভাগ—২৬ শতাংশ। পরকীয়ার কারণে সবচেয়ে কম বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে ময়মনসিংহ বিভাগে—১২ দশমিক ৬ শতাংশ।
আর দীর্ঘদিন বিদেশে থাকায় বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছে সবচেয়ে বেশি সিলেট বিভাগে—৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
মুসলমানদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের কারণগুলো জাতীয় হারের মতোই। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এটির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী চিত্র লক্ষ করা যায়। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদের সবচেয়ে বড় কারণ হলো দাম্পত্য জীবন বজায় রাখতে অক্ষম ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ।
শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের কারণে বিবাহবিচ্ছেদের হার ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ। শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের কারণে বিচ্ছেদের ঘটনার ক্ষেত্রে উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সম্পদশালী হওয়ার ক্ষেত্রেই বিপরীতমুখী সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়েছে।
অন্য কারণগুলোর মধ্যে ভরণপোষণের ব্যয় বহন করতে অক্ষমতা বা অস্বীকৃতি (১০.৬%) ও পারিবারিক চাপকে (১০.২%) সংঘটিত প্রতি পাঁচটি তালাক/দাম্পত্য বিচ্ছেদের মধ্যে একটিরও বেশির জন্য দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পল্লি শহরের ক্ষেত্রে তালাক/দাম্পত্য বিচ্ছেদের কারণগুলোর মধ্যে কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যবধান উল্লেখযোগ্য; এর মধ্যে রয়েছে—জীবনযাত্রার ব্যয় বহন করতে অক্ষম বা অস্বীকার করা (৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ বনাম ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ), যৌনমিলনে অক্ষমতা বা অনীহা (৪ দশমিক ২ শতাংশ বনাম ১ দশমিক ৯ শতাংশ) এবং পুনর্বিবাহ (৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ বনাম ৬ দশমিক ৯ শতাংশ)।
বিচ্ছেদ হওয়া মানুষের নিবিড় সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জরিপটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিএস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তায় উন্নতি হওয়ায় আপস করে, মেনে নিয়ে সংসার করার প্রবণতা কমে যাচ্ছে। এ কারণেই সংসার ভাঙার হার বেড়েছে। সংসার বেশি ভাঙলেই যে সমাজে বেশি অস্থিরতা বিরাজ করছে, এমনটি নয়।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন বলেন, ‘সংসার ভাঙার বিষয়টি আগেও ছিল, এখনো আছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তার জায়গাটি যত বেশি তৈরি হবে, আপস করে, মেনে নিয়ে সংসার করার প্রবণতাটা তত কমে যাবে। সংসার ভাঙাকে আমরা সমর্থন করি না। তবে এটা মনে রাখতে হবে যে খুব বেশি মেনে বা আপস করেও তো একে অপরের সঙ্গে থাকতে পারে না। এটা শুধু বিয়ের বিষয় তা নয়, যেকোনো সম্পর্কের মধ্যেই এটা হতে পারে। সংসার বেশি ভাঙলেই যে সমাজে বেশি অস্থিরতা বিরাজ করছে তা নয়, ভাঙা মানে নতুন করে গড়া বা গতিশীল হওয়া। সব সময় এটা নেতিবাচক, তা নয়।’
দেশে পরকীয়া কি বেড়ে গেছে—এ প্রশ্নে ড. জোবাইদা নাসরীন বলেন, ‘সম্পর্কগুলো অসম্মান ও অনাস্থার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সমাজ, সংসার ও রাষ্ট্র হতাশার জায়গা তৈরি করলে এটা হতে পারে।’
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D