১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:১৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬
ভারতে বলিউডের তারকা দম্পতি সাইফ আলি খান ও কারিনা কাপুর খান তাদের সদ্যোজাত সন্তানের নাম ‘তৈমুর’ রাখার পর তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে তুমুল বিতর্কের ঝড় উঠেছে।
চতুর্দশ শতাব্দীতে যে মোঙ্গল অভিযানকারী তৈমুর লং ভারত আক্রমণ করে দিল্লিকে ছারখার করে দিয়েছিলেন ও হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছিলেন, তার নামে কেন ও কারিনা নিজেদের ছেলের নাম রাখলেন তা নিয়ে তাদের রীতিমতো ট্রোল করা হচ্ছে, তীব্র শ্লেষ ও আক্রমণের মুখেও পড়সাইফ তে হচ্ছে।
বলিউডে বেবো আর ছোটে নবাব নামে পরিচিত যথাক্রমে কারিনা কাপুর ও সাইফ আলি খানের প্রথম সন্তানের জন্ম হয় মঙ্গলবার ২০ ডিসেম্বর।
ভারতে টুইটার আর ফেসবুক সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। দুর্ধর্ষ এক ভারত লুন্ঠনকারীর নামে কীভাবে সাইফ ও কারিনা ছেলের নামকরণ করতে পারেন সেই প্রশ্ন উঠতে থাকে অবিরত।
কেউ বলেন পাকিস্তানও কিন্তু তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের নাম রেখেছে তৈমুর, কেউ আবার মনে করিয়ে দেন মাত্র ১৮ বছর বয়সে তৈমুর লং নিজের মা-র মাথা কেটে ফেলেছিলেন, বাবাকে শেকলে বেঁধে বন্দী করেছিলেন জেলে।
এমন কী রাস্তাঘাটেও সাধারণ মানুষ অনেকেই বলতে থাকেন, এটা অন্যায়। দেশে যিনি হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন তার নামে কীভাবে নাম রাখা সম্ভব?
আবদুল কালাম বা বীর আবদুল হামিদের মতো মুসলিম দেশভক্তর তো অভাব নেই, তাদের নামেও তো নাম রাখা যেত।
কেউ কেউ আবার বলতে থাকেন, দেশের বুকে সাইফ-কারিনা যেন ছুরি চালিয়ে দিয়েছেন, রাগে তাদের গা জ্বলছে।
পাতৌদির মুসলিম নবাব পরিবারের ছেলে সাইফ বিয়ে করেছেন হিন্দু পাঞ্জাবি ঘরের মেয়ে কারিনাকে।
তার বাবা-মা মনসুর আলি খান ও শর্মিলা ঠাকুরও ছিলেন ভিন্ন ধর্মের।
সমাজতত্ত্ববিদ আশিস নন্দী মনে করেন, তৈমুর নামকরণ নিয়ে যে জনবিস্ফোরণ দেখা যাচ্ছে সেটা আসলে ভারতীয় সমাজে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কে অবক্ষয়েরই প্রতিফলন।
‘আমার মনে হয় যে এ এক অদ্ভুত বা কিম্ভুতকিমাকার জাতীয়তাবাদ, যা দেখায় যে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ বাড়ছে। এই বালখিল্যদের সমালোচনায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়, কারণ হয়তো দেখবেন অন্য নাম রেখেও আপনি তাদের খুশি করতে পারবেন না। কিছু না কিছু একটা খুঁত তারা বের করবে’, বলছেন ড. নন্দী।
কারিনার কাকা ও টুইটারে অত্যন্ত স্পষ্টবক্তা বলে পরিচিত ঋষি কাপুরও এই বিতর্কে মুখ খুলে বলেছেন, ‘তৈমুর নাম নিয়ে মাথা না-ঘামিয়ে লোকে বরং নিজের চরকায় তেল দিক।’
আলেকজান্ডার বা সিকান্দরও কোনো সাধু ছিলেন না, কিন্তু তাদের নামে দুনিয়ায় যে হাজার হাজার লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
এই যুক্তিকে কেউ কেউ সমর্থন করছেন ঠিকই, তবে দেশে তাদের সংখ্যা কম।
এরা কেউ বলছেন, নামে কী আসে যায়। এই ছেলে বড় হয়ে ভবিষ্যতে কী করতে পারে সেটাই আসল কথা।
কারো আবার সাফ কথা, বলিউডের তারকারা ছেলেমেয়েদের যা-খুশি নাম রাখুন, আমার তাতে কোনো অসুবিধা নেই।
ইতিহাস বা মহাকাব্যে যারা সাধারণভাবে নিন্দিত চরিত্র, ভারতে বহু শ্রেণীর মধ্যে কিন্তু তাদের উপাসনা করারও নজির আছে, মনে করিয়ে দিচ্ছেন সমাজতাত্ত্বিক আশিস নন্দী।
তাঁর কথায়, ‘বহু দলিত নেতা আজকাল রাবণের নামে নিজের নাম রাখেন। তামিলনাডু ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে বহু লোক রাবণের পুজো করেন। হিমাচলে তো দুর্যোধন ও কর্ণের মন্দিরও আছে। ফলে আমরা যাদের মনে করি খলনায়ক, তারা কিন্তু সবার কাছে ভিলেন নন।’
‘সমাজে এগুলো চিরদিনই ছিল, তবে এখন এই বিভেদটাকে উসকে অনেকটা মধ্যযুগীয় ইউরোপের পরিস্থিতির মতো করার চেষ্টা হচ্ছে। যেমনটা সেখানে ছিল ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্টদের মধ্যে বিভেদ’, বলছিলেন ড. নন্দী।
ফলে মাত্র দু’দিন বয়সী একটি বাচ্চার নামকে ঘিরে ভারতে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, সেটা আসলে সমাজে বৃহত্তর পরিবর্তনের দিকেই ইঙ্গিত করছে বলে পর্যবেক্ষকদের অভিমত।
সাইফ বা কারিনা কেউই অবশ্য এই তৈমুর বিতর্ক নিয়ে এখনো নিজেরা মুখ খোলেননি।
সূত্র : বিবিসি
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D