তিন বছর আগে ২০১৯ সালের এই দিনে ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ নামে রাজনৈতিক উদ্যোগের সূচনা হয়েছিল

প্রকাশিত: ১:৫৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৭, ২০২২

তিন বছর আগে ২০১৯ সালের এই দিনে ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ নামে রাজনৈতিক উদ্যোগের সূচনা হয়েছিল

 বিশেষ প্রতিবেদক

মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার


আজ ২৭ এপ্রিল’২০২২ বর্তমান এই নতুন জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল এবি পাটি ।

রাজধানী ঢাকার পুরানা পল্টনস্থ হোটেল-৭১ এর বল রুমে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতা ও চিন্তাশীল উদ্যোক্তা মিলে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে তাদের অভিপ্রায় ও অভিযাত্রার ঘোষনা দেন। দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ মাধ্যম সেই খবর গুরুত্বের সাথে ছাপা ও প্রচারিত হয়।

লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হচ্ছে সেইদিন সংবাদ সম্মেলন শুরুর প্রাক্কালে হঠাৎ করে কয়েকশ পুলিশ এসে হোটেল ৭১ ঘেরাও করে ফেলে। পুলিশের কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তা সম্মেলন স্থল থেকে মূখ্য উদ্যোক্তা মজিবুর রহমান মন্জু, প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার ও ব্যারিস্টার যুবায়ের আহমেদ ভুঁইয়া কে কৌশলে হোটেলের অন্য ফ্লোরে নিয়ে আটকে রেখে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা পুলিশের অনুমতি ছাড়া কেন সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে সে বিষয়ে কৈফিয়ত চান এবং সংবাদ সম্মেলন বাতিল করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। উদ্যোক্তাগণ দৃঢ়তার সাথে এর প্রতিবাদ জানান এবং সংবাদ সম্মেলন অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পুলিশের সাথে নেতৃবৃন্দের বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে সাংবাদিকগণ খবর পেয়ে সেই ফ্লোরে উঠে আসলে পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ বিব্রত বোধ করেন। সে অবস্থায় পুলিশী বাঁধা উপেক্ষা করে উদ্যোক্তাগণ সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন স্থলে নেমে আসেন এবং কিছুটা বিলম্বে সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন।

সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ তত্ত্ব, মতবাদ ও ধর্মীয় বিভাজনের উর্ধে উঠে মুক্তিযুদ্ধের তিন অঙ্গীকার সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের নতুন এক রাজনীতি চালুর আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। তারা গুম, খুন, দু:শাসন, দুর্নীতি ও ভোট চুরির গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে এসে অধিকার ভিত্তিক একটি সার্বজনীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক (ইনক্লুসিভ) রাজনৈতিক দল গড়ে তুলতে আগ্রহীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধ কে বাংলাদেশের মানুষের অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎসস্থল হিসেবে আখ্যায়িত করে তারা বলেন এ দুই মূল্যবোধ হবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার উপলক্ষ্য। ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধ কে বিভেদ ও বিতর্কের উর্ধে রাখা হবে তাদের দলের নীতি। তারা যে দল গঠন করতে চান তা প্রচলিত কোন মতাদর্শ বা ধর্ম ভিত্তিক দল হবেনা। সকল ধর্মের লোকদের সমন্বয়ে সেবা ও সমস্যা সমাধানের কর্মসুচিকে প্রাধান্য দিয়ে সেটা হবে একটি উদার গণতান্ত্রিক সার্বজনীন দল। তারা ঘোষনা করেন ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকদের জন্য অধিকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশ কে একটি কল্যান রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলাই হবে এই রাজনৈতিক উদ্যোগের লক্ষ্য।

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক ছাত্রনেতা মজিবুর রহমান মন্জুকে এই উদ্যোগের সমন্বয়ক ঘোষনা করা হয়। এই উদ্যোগের সাথে যুক্ত হয়ে যারা একটি নতুন ধারার রাজনৈতিক দল করতে চান তাদের কে ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ নামক প্ল্যাটফরমে যোগদান করার উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।

২৭ মে’র সেই আহ্বানের পর দেশ-বিদেশ থেকে আগ্রহীরা উদ্যোক্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে থাকে। দেশের নানা অঞ্চল থেকে ডাক আসে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষদের সাথে মত বিনিময়ের। নেতৃবৃন্দ দল বেঁধে সফর করেন বিভিন্ন জেলা-উপজেলা, এমনকি গ্রামেও। শতাধিক মত বিনিময় সভা ও কর্মশালায় তারা অংশ নেন। পাশাপাশি অনলাইনে কয়েক হাজার মানুষ ফরম পুরন করে এই উদ্যোগের সাথে যুক্ত হন। দেশের বাইরে থেকেও প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাড়া ছিল বেশ উল্লেখযোগ্য।ফলে উদ্যোক্তাদের কে প্রবাসীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যুক্তরাজ্য, মালোয়েশিয়া, তুরস্ক সহ বেশ কয়েকটি দেশে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হয়। এ সকল দেশের রাজনীতিবিদদের সাথেও তারা মতবিনিময় করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন।

কয়েকজন মানুষ মিলে একটি রাজনৈতিক উদ্যোগের ঘোষনা দেয়া এবং সেই উদ্যোগের ভিত্তিতে সংগঠিত ব্যক্তিদের নিয়ে সংলাপ, মতবিনিময় ও কর্মশালা’র ধারাবাহিকতায় ক্রমান্বয়ে একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার ইতিহাস বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি আর নেই বললেই চলে।

‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ এর সংগঠকগণ পরস্পর আলাপ-আলোচনা-বিতর্ক-সংলাপের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি রাজনৈতিক বয়ান স্থির করেন। দলের একটি গ্রহণযোগ্য নাম, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসুচি নির্ধারণ করেন, প্রনয়ন করেন একটি খসড়া গঠনতন্ত্র। ১ বছরের পরিচালিত কার্যক্রমের মাধ্যমে কর্মনিষ্ঠ, যোগ্য, মেধাবী ও পরিক্ষীত একদল তারুণ্য নির্ভর নেতৃত্বের সমাবেশ ঘটাতে তারা সক্ষম হন। যার ফলশ্রুতিতে ২০২০ সালের ২ মে, শনিবার ২২২ সদস্য বিশিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি নির্বাচন করে তাদের নেতৃত্বে ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ এর উদর থেকে জন্মলাভ করে আজকের এবি পার্টি।

স্মৃতিময় আজকের এই দিনে আমরা স্মরণ করছি আমাদের সেই ঐতিহাসিক প্ল্যাটফরম ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ কে। একই সাথে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাচ্ছি এর সকল উদ্যোক্তা ও সূচনাকালীন ব্যক্তিবর্গ কে। ইন’শা আল্লাহ বাংলাদেশের ভবিষ্যত ইতিহাসের সাথে ২৭ এপ্রিল এবং ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ এর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। পরিশেষে আজকের এই বিশেষ দিনে এবি পাটি সর্বস্তরের নেতা-কর্মী সমর্থক, শুভাকাঙ্ক্ষী সহ সকলকে জানাচ্ছি প্রাণ ঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা ।


 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট