কী বার্তা দিয়ে গেলেন পারিকর

প্রকাশিত: ২:১৯ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২, ২০১৬

চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশের নৌবাহিনী দুটি সাবমেরিন হাতে পাওয়ার মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যেই ভারত ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে প্রতিরা সম্পর্ককে নতুন করে ঝালিয়ে নিতে প্রতিরামন্ত্রী মনোহর পারিকরকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ভারতের প্রতিরামন্ত্রী মনোহর পারিকর দু দিনের সফর শেষে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। বহু বছরের মধ্যে এটাই ছিল কোনও ভারতীয় প্রতিরামন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর। সফরকালে তিনি রাষ্ট্র্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর আগে ঢাকায় কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, এই সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে সামরিক এবং নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে। এদিকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সফর ঘিরে এর আগে বিবিসি বাংলা, টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যমে এ সফর নিয়ে বেশ আলোচনা চলেছে। বেশিরভাগ সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে চীনা অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাব যেভাবে বাড়ছে, তাতে ভারত উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে সম্প্রতি চীন বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দুটি সাবমেরিন দেয়ার পর বিষয়টি ভারতকে বেশ ভাবনায় ফেলেছে বলে মনে করছে ভারতীয় গণমাধ্যম। বিবিসির প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, চীনকে ঠেকাতেই পারিকরের এ সফর। এদিকে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর  বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় ইহসানুল করিম বলেন, “সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো দেশের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো প্রকার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বরদাশত করব না এবং কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনায় আমাদের দেশের ভূখন্ডকে ব্যবহার করতে দেব না।’ : শেখ হাসিনা গতকাল বিকেলে গণভবনে সফররত ভারতের প্রতিরামন্ত্রী মনোহর গোপালকৃষ্ণ প্রভু পারিকর তার সাথে সৌজন্য সাাৎ করতে এলে তিনি একথা বলেন। বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল অবদানের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। : এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তার আসন্ন ভারত সফরকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর বীর সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোরও আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর উত্তরে ভারতের প্রতিরামন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল এবং আমরা সেই সহযোগিতাটাই করেছি।’ : সম্প্রতি বাংলাদেশি জেলেদের উদ্ধার করে কর্তৃপরে কাছে হস্তান্তর করায় প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় কোস্টগার্ডকেও ধন্যবাদ জানান। এ সময় ভারতের প্রতিরামন্ত্রী বাংলাদেশের কোস্টগার্ডের দতা বৃদ্ধিতে প্রশিণ প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করেন। : পারিকর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিশেষ করে নারীর মতায়নের প্রশংসা করেন। : তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন েেত্র বিশেষ করে নারীর মতায়নে প্রভূত উন্নতি করেছে, যা ভারত এখনও করতে পারেনি। : বৈঠকের শেষ অংশে ভারতের প্রতিরামন্ত্রী বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়া ভারতীয় হেলিকপ্টারের একটি রেপ্লিকা এবং যুদ্ধকালীন ছত্রীসেনাদের অপারেশন পরিচালনার আলোকচিত্র প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহফুজুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা উপস্থিত ছিলেন। : এর আগে বাংলাদেশ সফররত ভারতীয় প্রতিরামন্ত্রী মনোহর গোপালকৃষ্ণ প্রভু পারিকর মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে শাহাদত বরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর বীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসস্থ শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তিনি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি শিখা অনির্বাণে পৌঁছালে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন) এয়ার ভাইস মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত তাকে অভ্যর্থনা জানান। পরে সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ মাহফুজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে ভারতীয় প্রতিরামন্ত্রী তার সফর সঙ্গীগণসহ চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি পরিদর্শন করেন। : উল্লেখ্য, ভারতীয় প্রতিরামন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলটি দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বুধবার বাংলাদেশে আগমন করেন। ঐদিনই প্রতিনিধিদলটি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে এবং এর পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক (অবঃ)-এর সঙ্গেও সৌজন্য সাাৎ করেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট