ভারতের ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় নামাজ ঘর, বিজেপির ব্যাপক প্রতিবাদ

প্রকাশিত: ৭:০০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২১

ভারতের ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় নামাজ ঘর, বিজেপির ব্যাপক প্রতিবাদ

ঝাড়খণ্ড রাজ্য বিধানসভায় মুসলমান বিধায়ক আর কর্মীদের নামাজ পড়ার জন্য স্পিকার একটি ঘর বরাদ্দ করায় সেখানকার বিজেপি ব্যাপক প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে।

বৃহস্পতিবার বিজেপি রাজ্য জুড়ে ‘কালো দিবস’ পালন করছে। বুধবার দলের কর্মী-সমর্থকরা রাস্তায় বিক্ষোভ করার সময়ে পুলিশ তাদের ওপরে লাঠিচার্জ করে আর জলকামান ব্যবহার করে।

বিজেপির প্রতিবাদের ফলে স্পিকার রবীন্দ্রনাথ মাহাতো বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, নামাজের ঘর রাখা হবে কী না, তা একটি সর্বদলীয় কমিটি স্থির করবে।

নামাজের ঘর নিয়ে বিজেপির কেন আপত্তি
কয়েক দিন আগে এক নির্দেশ জারি করে বিধানসভার সচিবালয় জানায়, টিডব্লিউ-৩৪৮ নম্বর ঘরটিকে নামাজ পড়ার জন্য ব্যবহার করা হবে।

এই নির্দেশ জারি হতেই বিজেপি প্রতিবাদ শুরু করে।

গত সোমবার বিধানসভার অধিবেশন শুরু হতেই বিজেপির বিধায়করা বিক্ষোভ দেখান। তারা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানও দেন।

ওই রাজ্যে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতৃত্বাধীন সরকার রয়েছে ২০১৯ সাল থেকে, আর বিজেপি সেখানে প্রধান বিরোধী দল।

বিজেপির অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন তোষণের রাজনীতির সব সীমা ছাড়িয়ে গেছেন।

সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতা বাবুলাল মারান্ডি টুইট করে লিখেছেন, ‘ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় কোনো একটি শ্রেণীর জন্য নামাজ ঘর করে দেয়া শুধু একটা ভুল পরম্পরা চালু করাই নয়, এই সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পূর্ণ বিপরীত।’

পুরনো ভবনেও নামাজ ঘর ছিল
স্পিকার রবীন্দ্রনাথ মাহাতো বলছেন, ‘আগের ভবনেও মুসলমান কর্মচারীদের নামাজ পড়ার জন্য একটি ঘর ছিল। নতুন ভবনেও সেরকম একটি ঘরের আবেদন এসেছিল যেখানে তারা নিয়মিত নামাজ পড়তে পারবেন।

‘তাদের আবেদন অনুযায়ী একটা খালি ঘর দিয়ে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক হচ্ছে,’ বলছিলেন রবীন্দ্রনাথ মাহাতো।

মুসলমানদের জন্য নামাজের নির্দিষ্ট ঘর দেয়ার পরে বিজেপির বিধায়করা দাবি করছেন বিধানসভা ভবনে একটা হনুমান মন্দির করে দেয়া হোক।

হনুমান মন্দির গড়ে দেয়ার দাবি
বিধানসভার সাবেক স্পিকার ও বিজেপি বিধায়ক সি পি সিং বিবিসিকে বলেছেন, ‘বিধানসভার পুরনো ভবনে দুটো মন্দির আগে থেকেই ছিল। নতুন ভবনেও হনুমানজির মন্দির গড়ে দিতে হবে। এই দাবি না মানা হলে আন্দোলন জোরদার হবে। সংখ্যাগুরুরা তাদের বড় হৃদয় দেখাবে আর অন্যদিকে মুসলিম বিধায়করা তালেবানের সমর্থন করবে। এটা চলতে পারে না।’

স্পিকার রবীন্দ্রনাথ মাহাতো বলছেন, ‘আমার কাছে সরকার পক্ষ আর বিরোধী বিধায়ক – উভয়ই সমান। বিরোধী পক্ষ যদি এই দাবি আমার কাছে নিয়ে আসেন, তাহলে তখন খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব। এটা নিয়ে এখনই ভাবনা-চিন্তার দরকার নেই।’

সব রাজ্য বিধানসভাতেই নামাজ ঘর আছে
অন্যদিকে সরকারে জোটসঙ্গী কংগ্রেস বিধায়ক ডা: ইরফান আনসারি, যিনি সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের হটিয়ে দেয়ায় তালেবানের প্রশংসা করে তীব্রভাবে সমালোচিত হন। তিনি বলছেন, ‘বিহার, পশ্চিমবঙ্গসহ সব রাজ্যের বিধানসভাতেই নামাজ পড়ার জন্য আলাদা ঘর আছে। এটা নিয়ে বিজেপির গেল গেল রব তোলার কোনো মানে হয় না। স্পিকারের মনে হয়েছে শুক্রবার নামাজের সময়ে কর্মীরা বাইরে নামাজ পড়তে চলে গেলে কাজের ক্ষতি হয়। তাই তিনি একটা ঘর দিয়েছেন। কেউ যদি পুজোর জন্য ঘর চায়, সেটা তারা দাবি তুলুক।’

‘দেশের প্রায় সব থানায় হিন্দু মন্দির আছে’
ঝাড়খণ্ডের প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ শাহরোজ কামারের দৃষ্টিভঙ্গিটা অন্য।

তিনি বলছিলেন, ‘বিধানসভার পুরনো ভবনে তো দু-দুটো মন্দির ছিল। দেশের প্রায় সব থানাতেই মন্দির আছে। সরকারি কোনো অনুষ্ঠান বা উদ্বোধন হিন্দু রীতি-রেওয়াজ মেনে করা হয়। তখন তো কেউ আপত্তি করে না!

বিজেপি যে নতুন ভবনে মন্দিরের দাবি তুলেছে, সে ব্যাপারে সৈয়দ শাহরোজ কামারের মন্তব্য, ‘এটা তো প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। আপনাদের জন্য নামাজের ঘর দেয়া হলে আমাদের জন্য কেন মন্দির দেয়া হবে না।’

ঝাড়খণ্ডের পাশের রাজ্য বিহার বিধানসভায় কয়েক দশক ধরে নামাজের ঘর রয়েছে। সেখানে এর আগেও বিজেপি সরকারে থেকেছে, এখনো তারা সরকারে আছে।

কিন্তু নামাজ ঘর বন্ধ করা হয়নি।

তবে বিধায়কদের কেউ কেউ স্পিকারের লিখিত নির্দেশ জারি করা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন।

আদিবাসী প্রধান ওই রাজ্যটির বিজেপি দলীয় বিধায়ক ও আদিবাসী নেতা নীলকণ্ঠ সিং মুন্ডা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ‘এর পরে তো সব ধর্মের মানুষই নিজের নিজের উপাসনার জায়গা চাইবে। আমি তো সারণা আদিবাসী। আমরাও দাবি তুলব যে আমাদের জন্য বিধানসভায় সারণা স্থল বানিয়ে দেয়া হোক। নামাজ পড়ার জন্য ঘর নির্দিষ্ট করে দেয়াই যেত, এজন্য লিখিত আদেশ দেয়ার দরকার ছিল না।’


সূত্র : বিবিসি


সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট