১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:২৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৭, ২০১৬
মংলা-ঘষিয়াখালি চ্যানেলটি দীর্ঘদিন বন্ধ পড়ে থাকায় পরিবেশবাদীদের তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র রক্ষার মংলা-ঘষিয়াখালি বন্ধ চ্যানেলটির জন্যে তো পরিবেশবিদদের কোনোদিন টু শব্দ করতে শুনি নাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালের পর থেকে প্রায় দীর্ঘ ২১ বছর মংলা-ঘষিয়াখালি নৌ চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে ছিল। যে কারণে বিকল্প চ্যানেল হিসেবে সুন্দরবনের শ্যালা নদী দিয়ে নৌযান চলাচলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়ে যায়। কিন্তু এ নিয়ে পরিবেশবিদদের টু শব্দটি করতেও কোনোদিন শুনলাম না।
তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনের ভেতরের সমস্যা রেখে তারা ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রামপাল প্রকল্প নিয়ে তারা কেঁদে মরছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি এবং পরবর্তী শাসনামলে চ্যানেলের ২৩৪টি প্রবেশ মুখকে ইজারা দিয়ে সেখানে চিংড়ী চাষের প্রকল্প গড়ে তুলে পুরো চ্যানেলটি ধ্বংস করে দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল উন্মুক্তকরণ এবং নবনির্মিত ১১টি ড্রেজার কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ দারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ ভিডিও কনফারেন্সটি পরিচালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঘষিয়াখালি চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে আমাদের সুন্দরবনের শ্যালা নদী দিয়ে জাহাজ চলাচল করত, সেটা কিন্তু ডলফিনের একটা জায়গা। ওই নদীতেই কিন্তু আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগার পানি খেতে আসে। ওই জায়গাটায় বন্য প্রাণির একটি অভয়াশ্রম ছিল। কিন্তু বিএনপি প্রথম ক্ষমতায় এসে (পচাত্তরের পরে) কিন্তু তারপরে ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল ঘষিয়াখালি চ্যানেলটি প্রতিবছর ড্রেজিং করে চালু রাখার পদক্ষেপ তো নেয়নি, উল্টো অন্যকাজে ব্যবহার করে এই পথটাকেই প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল। ফলে প্রায় ৮৪ কি.মি. অতিরক্তি পথ পাড়ি দিয়ে নৌযানগুলোকে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে চলাচল করতে হত। এটা সুন্দরবনের জন্যও ক্ষতিকর।
তিনি বলেন, ‘সুন্দর বন থেকে ১৪ কি.মি. দূরে রামপাল পাওয়ার প্লান্ট করার জন্য আমাদের পরিবেশবিদরা কেঁদে মরে কিন্তু এই ঘষিয়াখালি যে বন্ধ করে দেয়া হল এর সাথে ২৩৪টি সংযোগ খাল যে মুখ বন্ধ করে চিংড়ি চাষ করা হল। চিংড়ি চাষ করতে গিয়ে অনেক গাছপালাও সেখানে কেটে চিংড়ির ঘের করা হয়েছে এটা নিয়ে কিন্তু আমাদের পরিবেশবিদদের কোনো টু শব্দ করতে কোনোদিন শুনি নাই বা সুন্দরবনের এসব নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা করতেও কোনোদিন দেখি নাই। অথচ এটা ছিল একেবারে সুন্দরবনের ভেতরের ঘটনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই যে প্রতিবছর- এখানে ড্রেজার উপস্থিত থাকবে যখন থেকে শীত শুরু হবে তখন থেকেই এই ড্রেজারগুলি নিচে চলে যাবে এবং মাটি কেটে কেটে উপরে আসবে প্রতিবছর প্রয়োজনীয় ড্রেজিং করে এই চ্যানেলের যেন নাব্যতা রক্ষা করে চ্যানেলটিকে যেন উন্মুক্ত রাখা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। তাহলে আমাদের এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সবকিছু আরো গতিশীল হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটা বিষয়ে সবসময় লক্ষ্য রাখি সুন্দরবন আমাদের একটা সম্পদ। সুন্দরবন আছে বলেই ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাংলাদেশ রক্ষা পাচ্ছে। তাই এই সুন্দরবনকে রক্ষার জন্যই ওই শ্যালা নদী দিয়ে যেন খুব বেশি জাহাজ চলাচল না করে সেজন্যই এই ঘষিয়াখালি খালটি খনন করে এখান দিয়ে জাহাজ যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই চ্যানেল দিয়ে জাহাজ চলাচল করবে এবং আমাদের সুন্দরবনের জীববৈচিত্রও অটুট থাকবে। এই চ্যানেলের মাধ্যমে দূরত্ব বিরাট অংশে হ্রাস পাওয়ায় এটা আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে। তবে, পশুর নদী এবং ঘষিয়া খাল প্রতিবছর একবার করে এর মেনটেইনেন্স ডেজিং করতে হবে। এজন্য মংলা বন্দর এবং ঘষিয়াখালির জন্য নিজস্ব ড্রেজারের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।
অনুষ্ঠানে চ্যানেলটির ওপর একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
নৌ-পথ কেন্দ্রিক যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ ও সুগম করার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল উন্মুক্ত করা হয়।
কিন্তু, গত শতাব্দীর আশির দশকে মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-পথ সংলগ্ন এলাকায় যত্রতত্র ব্যাপক হারে চিংড়ী খামার গড়ে উঠায় এবং বিভিন্ন স্থানে পোল্ডার নির্মাণ করায় এ নৌ-পথটি ক্রমাগত হারে সংকুচিত হয়ে আসে। এ ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে এটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এবং এ অবস্থা ২০১৪ পর্যন্ত বিরাজ করে।
বিকল্প পথ হিসেবে সুন্দরবনের অভ্যন্তরের শ্যালা নদী নৌ-যান চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল। এতে ৩১ কিলোমিটারের স্থলে নৌ-যানগুলোকে প্রায় ৮৭ কিলোমিটার নৌ-পথ অতিক্রম করতে হত। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-পথে এ পর্যন্ত মোট প্রায় ১৮২ দশমিক ০০ লক্ষ ঘনমিটার ড্রেজিং সম্পন্ন করে এ নৌ-পথটি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। ফলে বর্তমানে এ নৌ-পথে গড়ে বিভিন্ন গভীরতার দৈনিক প্রায় ১০০ থেকে ১২০টি পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করতে পারছে।
সূত্র : বাসস
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D