আ,লীগের সম্মেলন ঘিরে নানা জল্পনা, সাধারণ সম্পাদক পদে আসছে চমক!

প্রকাশিত: ১:০৬ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৬

Manual2 Ad Code

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দল হিসেবে দেশের সবচেয়ে পুরাতন এবং বড় দল। সে দলে চমক থাকবে  এটাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তবে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের ব্যাপারে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখেন।

আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সব থেকে আলোচিত পদ সাধারন সম্পাদক। যা গত ৬ বছর ধরে টানা দুইবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছে জন-প্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশারাফুল ইসলাম। তবে সৈয়দ আশরাফের সাথে এ সাধারণ সম্পাদক পদটির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন বর্তমানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

Manual6 Ad Code

আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রতিবারের মত সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Manual6 Ad Code

জাতীয় সম্মেলনের শুরু থেকেই অনেক বিষয়েই কথা  আলোচিত ও আলোড়িত হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে।

Manual7 Ad Code

দলের ভেতর ও বাইরে সবখানেই একটি কৌতূহল- কে হবেন দলের আগামী কমিটির সাধারণ সম্পাদক?

দলীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, দলীয় সভাপতি ও প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন একজন ব্যক্তিকে সাধারণ সম্পাদক বানাবেন যিনি বিতর্কের ঊর্ধ্বে ও দলের মধ্যে দলাদলির বাইরে থেকে দল পরিচালনা করবেন।

সম্মেলন শুরুর আগে থেকেই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও জন প্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

তবে সবার মাঝে চমক কথাটির আকর্ষণের কারণ হলো, এই কয়জন ছাড়া এবং সবার ধারণার বাইরেও হতে পারেন দলের সাধারণ সম্পাদক।

একটি বিষয়ে অবশ্য সবাই একমত যে, বিতর্কে ঊর্ধ্বে এমন একজন ব্যক্তিই হবেন দলের সাধারণ সম্পাদক। কারণ যাদের নিয়ে বিতর্ক রয়েছে তাদের স্থানীয় পর্যায়েও কোন পদ দেয়া হচ্ছে না।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলের সাধারণ সম্পাদক হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তাই বিভিন্ন ইস্যুর নামে সম্মেলন পেছানো হয়েছে। সূত্র মতে, সৈয়দ আশরাফ নিজেই দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে তার ‘সাধারণ সম্পাদক’ না হওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।

গত বছরের ৯ জুলাই এলজিআরডি মন্ত্রী থেকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয় সৈয়দ আশরাফকে। সে সময় দলের অনেক নেতা বলেছিলেন যে, মন্ত্রণালয়ে সৈয়দ আশরাফের অনুপস্থিতি, সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি না আনা এবং সর্বোপরি দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় করতে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সৈয়দ আশরাফকে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাখা হবে না বলেও কথা উঠেছিল। কিন্তু ৭ দিন পর ১৬ জুলাই তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।

এদিকে, গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, ‘তিনি সম্মেলনে কোনো পদের জন্য প্রার্থী নন’।

ওবায়দুল কাদের আরো জানান, তাকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তিনি লজ্জিত এবং বিব্রত হন। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা তাকে যেখানে রাখবেন তিনি সেখানেই খুশি বলে জানান।

Manual2 Ad Code

তবে তিনি বলেন, ৩৫ বছর ধরে একটি দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। নেত্রী জানেন কাকে কোন পদে রাখতে হবে।

এ ছাড়া ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে কয়েকটি অভিযোগও রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো, বিভিন্ন সময় দলের বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করা। এ নিয়ে দলের অনেক নেতাই তার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। তবে তার ভক্তের সংখ্যাটাও একেবারে কম নয়।

এ নিয়ে কয়েকদিন আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার বেয়াই ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারফ হোসেন ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘স্বস্তা জনপ্রিয়তার জন্য অনেকে অনেক কথাই বলেন’।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহও সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে গত বছরের ১৮ এপ্রিল তার নিজ এলাকা ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কাউলিবেড়ার মুন্সীবাড়ীতে দলীয় কর্মীদের নিয়ে সভায় শটগানের গুলিতে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল ইসলামসহ ছয়জন আহত হলে বেশ সমালোচিত হন তিনি।

আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতা ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয় পর্যবেক্ষণে অনেকের ধারণা, সাধারণ সম্পাদক পদে দলীয় প্রধান হয় তো অন্য কাউকে বাছাই করবেন। আর এটাই হবে চমক, যা সবাই ধারণা করছেন।

এবিষয়ে বগুড়া-১ আসনের এমপি আব্দুল মান্নানের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ লিডারশীপের মাধ্যমে চলে। আর এ দলের সব কিছুর সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা আগ্রহ থাকবেই। বাংলাদেশের সব থেকে পুরাতন এবং বড় দল। এ দল নিয়ে মানুষের আগ্রহ থাকাটা অস্বাভাবিকের কিছু না।

তিনি বলেন, কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতি ক্রমে দলের সভাপতি সকল ক্ষমতার অধিকারী হবেন। তিনি যাকে যে পদের জন্য যোগ্য ভাববেন তিনি সেই পদে আসবেন। তবে আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য যোগ্য অনেকেই আছেন। সৈয়দ আশরাফও হতে পারেন বা নেত্রী নতুন কাউকেও আনতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ নেত্রীর একক ইচ্ছা। সময় আসলেই বুঝা যাবে কে আসছেন।

মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুন নেছা’র সাথে মোবাইলে কথা বললে তিনি বলেন, এবার কে সাধারণ সম্পাদক হবেন সেটা প্রধানমন্ত্রী ঠিক করবেন।

এসময় তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও আর মহিলা দলের সভাপতির পদে থাকতে চাই না। ১৪ বছর থেকে মহিলা দল চালাইতেছি। এখন অসুস্থ্য হয়ে পড়ছি। এই সম্মেলনের পর আমি আর এ পদে থাকবো না। নেত্রীকে বলবো আমি আওয়ামী লীগের মূল দলে যেতে চাই।’

নতুন কেউ সাধারণ সম্পাদক পদে আসবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নেত্রীর দূরদর্শীতা অনেক তীক্ষ্ণ। তিনি সৈয়দ আশরাফকে রাখবেন নাকি নতুন কাউকে আনবেন আগে থেকে বলা মশকিল। তবে নতুন কাউকে আনতেও পারে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বড় দলে বড় ধরনের চমক আসাটা কঠিন কিছু না। চমক দেখাতে গিয়ে বিএনপির কমিটি নিয়ে মানুষ হেসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ তো আর বিএনপি নয়।

তবে আগামী সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকেই দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বাছাই করবেন বলেও বিশ্বাস করেন অনেক নেতা। সব কিছুই নির্ভর করবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। তিনি যা চাইবেন তাই হবে এবং দলের সবাই তাই মেনে নেবেন এমনটিই বলছেন দলের প্রভাবশালী নেতারা।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code