চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না বেগম খালেদা জিয়াকে

প্রকাশিত: ১১:১০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯

চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না বেগম খালেদা জিয়াকে

সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে অকালে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। : তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে অকালে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। দেশনেত্রীর যদি কোনো শারীরিক তি হয় তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব এই অনির্বাচিত সরকারকেই বহন করতে হবে। গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। : মির্জা ফখরুল বলেন, আদালত কর্তৃক গঠিত মেডিকেল বোর্ড সাড়ে তিনমাস পরে গত পরশু (রবিবার) আদালতের নির্দেশে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলো, পরীা করতে গিয়েছিলো। তারা পরীা করে দেখে বিস্মিত হয়েছেন যে, গত সাড়ে তিন মাসে তাঁর কোনো রকম রক্ত পরীা করা হয় নাই, তাঁর ব্লাড সুগার পরীা করা হয় নাই, তাঁর কোনো এক্সরে করা হয়নি, তাঁর ব্লাড প্রেসার মাপা হয় নাই, তাঁর কোনো চিকিৎসা দেয়া হয়নি। কারাগারে যথা সময়ে দেশনেত্রীর চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীা না করার ফলে এবং পরিত্যক্ত কারাগারে রেখে দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটানোর মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের আশংকার কথাটা আমরা বার বার বলে আসছি। সেই ষড়যন্ত্র, সেই চক্রান্তটি হচ্ছে তাঁকে চিকিৎসা না দিয়ে অকালে এভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া। সুচিকিৎসা না দেয়া এবং কয়েকদিন পর পরেই তাঁকে (বেগম খালেদা জিয়া) হুইল চেয়ারে করে আদালতে হাজির করে মানসিকভাবে হেনস্তা করা- এই সরকারের ষড়যন্ত্রের অংশ বলে দেশবাসী মনে করে। : বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে আমরা জানাতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কোনো সরকারের কাছ থেকে এই ধরনের আচরণ ডিজারভ করেন না, তাঁর প্রাপ্য নয়। আমরা মনে করি, অবিলম্বে দেশনেত্রীর সর্বোত্তম সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান করতে হবে। এটাতে কোনো কাল বিলম্ব করা যাবে না। কাল বিলম্ব করলে দেশনেত্রীর যদি কোনো শারীরিক তি হয় তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব জনগণের দ্বারা এই অনির্বাচিত সরকারকেই বহন করতে হবে। দলের চেয়ারপারসনের সর্বোত্তম সুচিকিৎসার জন্য যদি ‘বাড়তি’ ব্যয়ের প্রয়োজন হয় তা দল বহন করতে রাজি বলেও জানান মহাসচিব। বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, সাড়ে তিন মাস আগে যে অসুখ নিয়ে তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হয়েছিলেন সেই অসুখগুলো আরো বেড়ে গেছে। বাম কাঁধে ব্যথা বৃদ্ধি পেয়েছে, ডান কাঁধে নতুন করে ব্যথা হচ্ছে। বাম বাহু, বাম পায়ে এবং কবজিতে ব্যথা অনেক বেশি বেড়েছে। ফলে কারো সাহায্য ছাড়া তিনি এখন দাঁড়াতে ও চলতে পারছেন না। প্রচন্ড ব্যথা ও কাঁপুনির জন্য তিনি হাত দিয়ে কিছু ধরেও রাখতে পারছেন না। তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) যে রোগগুলোতে ভুগছেন তা অত্যন্ত মারাত্মক রোগ। তাঁর বয়স ৭৩-এর পথে। এই বয়সে এই রোগগুলোর যদি নিয়মিত চিকিৎসা না হয়, প্রতিদিন যদি মনিটর না করা হয়, তাহলে তাঁর জীবনের প্রতি মারাত্মক হুমকি এসে যেতে পারে। গত সাড়ে তিন মাসে দেশনেত্রীর হৃদরোগ, লিভার কিংবা কিডনির কোনো পরীা করা হয়নি। যা নিয়মিতভাবে করা অত্যন্ত জরুরি ছিলো। : বিএনপি মহাসচিব জানান, বেগম খালেদা জিয়া রিউমেটরিটক আর্থারাইটিস, ডায়াবেটিস ম্যারিটা, হাইপারটেনশন, অস্ট্রিও আর্থারাইটিস, টানেল সিস্ড্রোম, ফ্রোজেন সেøাডার, লাম্বার স্টোনাইসিস, থাইটিকা, ক্রনিক হাইপো নিথ্রেমিয়া, ক্রোনিক কিডনি রোগে ভুগছেন। যা এখন মারাত্মক রূপ নিয়েছে। : বেগম খালেদা জিয়ার সাথে পরিবারের সাাতের অনুমতিও ‘দীর্ঘ সময় পরে’ দেয়া হয় বলে অভিযোগও করে তিনি বলেন, পরিবারের সদস্য দীর্ঘ সময় পর সীমিত সময়ের জন্য দেখা করতে দেয়া হয়। দলের প থেকে গত চার মাস ধরে কাউকে দেখা করতে অনুমতি দেয়া হয়নি এমনকি তাঁর আইনজীবীরাও সাাৎ পাননি। মামলার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য দীর্ঘকাল ধরে পরিকল্পনা করে আসছে। যে মামলাগুলো একটার পর একটা দেয়া হয়েছে- এই মামলার কোনটারই কোনো ভিত্তি নেই। এই মামলাগুলো দিয়ে তাঁকে আটক করে রাখা হয়েছে এবং ইতিমধ্যে তিনি যে জামিন প্রাপ্ত হয়েছিলেন সেটারও কোনো সুবিধাদি তাঁকে গ্রহণ করতে দেয়া হয়নি। এই ধরনের আচরণ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে করা হবে-এটা সাধারণ মানুষ ও দেশবাসীর কল্পনারও বাইরে, এটা ধারণারও বাইরে। আজকে গণতন্ত্রের এই নেতাকে প্রতিটি মানুষ ভালোবাসে, যিনি কখনো কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। সেই নেত্রীকে এভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আমরা বার বার বলেছি এই ধরনের আচরণ কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, কাম্য হতে পারে না। : তিন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী, স্বৈর শাসক এরশাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বেগম খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রী সারাজীবন ব্যয় করেছেন এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবার জন্য। তিনি সেই প্রধানমন্ত্রী যিনি দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন, নারী শিার েেত্র তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। আজকে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন আমরা দেখছি সেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করবার ব্যাপারে তাঁর ভূমিকা ছিলো অপরিসীম। তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) সরকারে থাকার সময়ে তাঁর বহু কাজ আছে যে কাজগুলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে শুধু দেশে নয়, বিশ্বে পর্য়ন্ত সমাদৃত হয়েছিলো। : সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট