চকবাজারে আগুন : স্বজনদের বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে অগ্নিদগ্ধ লাশ

প্রকাশিত: ৭:২৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯

চকবাজারে আগুন : স্বজনদের বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে অগ্নিদগ্ধ লাশ

রাজধানীর চকবাজারের চুরিহাট্টা শাহি মসজিদের পাশে পাস্টিকের গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠানো লাশগুলোর মধ্যে থেকে যাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে তাদের লাশ আগে দেয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, বেলা সোয়া দুইটার দিকে লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ‘যাদের লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে সেগুলো তাদের স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ শনাক্ত লাশের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও এদিন ৩০-৩৫টি লাশ হস্তান্তর করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

চকবাজার থানার এসআই প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, সুষ্ঠুভাবে লাশ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের সহায়তায় কাজটি করছে ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ।

অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের তথ্য সরবরাহের জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢাকা মেডিকেলে একটি তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

তথ্যকেন্দ্রে অবস্থান করা জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ইমরুল হাসান বলেন, লাশ সমাহিত করার জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকার কয়েকটি ভবনে লাগা আগুন সকালে নেভানোর পর ৭০টি লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানোর কথা জানায় কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ।

তবে ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ ৬৭টি লাশ পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। সংখ্যার গড়মিলের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক তারেক হাসান ভূইয়ার ভাষ্য, তাদের হিসাবে লাশ ৭০টি।

‘তবে কয়েকটা ব্যাগে খণ্ড খণ্ড ডেডবডি ছিল। সম্পূর্ণ ডেডবডি হয়ত ৬৭টি হতে পারে’।

কয়েকটি লাশ এতটাই পুড়েছে যে চেনার উপায় নেই। যেসব লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হবে না, সেগুলোর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরবর্তীতে স্বজনদের সাথে মিলিয়ে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ।

এছাড়া আগুনে দগ্ধ নয়জনকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৬০ শতাংশ দগ্ধ একজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এর বাইরে আরও নয়জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

যেভাবে লাশ পাবেন স্বজনরা?
বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা ফারহানা পারভীন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডা: সোহেল মাহমুদের ব্রিফিংয়ে ছিলেন।

মিস্টার মাহমুদ বলছেন, যেসব লাশ তাদের স্বজনরা সহজেই সনাক্ত করতে পারছেন সেগুলো আজই যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে হস্তান্তর করা হবে।

কিন্তু যাদের সনাক্ত করা যাচ্ছে না তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে সনাক্ত করার চেষ্টা করা হবে। যদি সেটিতে সনাক্ত হয়ে যায় তাহলে সেগুলোও স্বজনরা গ্রহণ করতে পারবেন।

কিন্তু যেসব লাশ একেবারেই সনাক্ত করা যাচ্ছে না সেগুলো ডিএনএ পরীক্ষার পর দেয়া হবে এবং এজন্য কিছুটা সময় লাগবে।

গত রাত সাড়ে ১০টার পরে পুরনো ঢাকার চকবাজারে শাহী মসজিদের কাছে ‘ওয়াহিদ ম্যানসন’ নামের একটি ভবনে আগুন লাগার পর তা আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে।

পরে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট একযোগে কাজ শুরু করে। তবে আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত কিছু বলেনি কর্তৃপক্ষ।

অনুমতি নেই রাসায়নিক রাখার
২০১০ সালের জুনে পুরানো ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিকের কারখানায় আগুন ধরে ১২৪ জন নিহত হয়েছিলেন।

এরপর পুরানো ঢাকার আবাসিক এলাকায় রাসায়নিকের কারখানা বা সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

তাহলে কিভাবে চকবাজারে রাসায়নিকের গুদাম থাকতে পারে?

বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে মি. খান বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার পরেও অনেকে হয়তো চোরাইভাবে রেখে ব্যবসাবাণিজ্য করে। কর্তৃপক্ষের অগোচরে কাজ করে তারা। কিন্তু এর পরিণতি হচ্ছে এ ধরণের ঘটনা।’

সরু রাস্তা ও পানির সংকট
চকবাজারে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়েছে, এর কারণ হিসেবে মি. খান সরু রাস্তা ও পানির সংকটকে প্রধান সমস্যা বলে চিহ্নিত করেছেন।

‘অনেক দূর ঘুরিয়ে গাড়ি ভেতরে আনতে হয়েছে। সেই সাথে এটা একটা জনবহুল এলাকা, তাই আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লাগছে বেশি।’

এছাড়া এখানে পানির অভাবও রয়েছে। এখন পুকুর থেকে পানি এনে কাজ চালানো হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

তবে তিনি জানিয়েছেন আগুন এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।

ফায়ার সার্ভিসের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২ সালের পর থেকে বাংলাদেশে ৮৮ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

প্রাণহানি হয়েছে ১৪০০ জন, আহত হয়েছে অন্তত ৫০০০ মানুষ।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট