১৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৩৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০১৮
একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি কতটুকু সম্পন্ন হয়েছে তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে বৈঠক শুরু হয়েছে। তবে মতবিরোধের কারণে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জন করেছেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
সোমবার সকাল ১১টা ৭ মিনিটে কমিশন সভা চলাকালে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে মাহবুব তালুকদার সভা বর্জন করেছেন বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির যুগ্ম সচিব আসাদুজ্জামান আরজু।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে. এম. নুরুল হুদার সভাপতিত্বে এই কমিশন সভা শুরু হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে অবহিতকরণ ও হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ভোটার তালিকায় আলাদা লিঙ্গ হিসেবে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে বিদ্যমান ভোটার তালিকা বিধিমালায় সংশ্লিষ্ট বিধি ও ফরমে সংশোধনের বিষয়ে কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
কমিশন সভায় উপস্থিত আছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য তিন কমিশনার। এ ছাড়া উপস্থিত আছেন ইসি সচিবালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ আরো অনেকে।
এর আগে গত ৩০ আগস্ট গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২ সংশোধন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের মুলতবি সভা চলাকালে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে নিজের আপত্তির কথা জানিয়ে বৈঠক বর্জন করেছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
ইসি সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতির মধ্যে দেড় মাস পর কমিশন সভা ডাকা হয়েছে। সর্বশেষ ৩০ আগাস্ট কমিশন সভা বসেছিল আরপিও সংশোধন নিয়ে। যেই সভা বর্জন করেছিরেন নির্বাচন কমিশন মাহবুব তালুকদার। একাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়নসূচির চূড়ান্ত কপি কমিশনে উপস্থানের জন্য ইসির নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয় শাখাসহ সব বিভাগে কাজ ভাগ করে দেয়া হয়।
ইসির উপ সচিব (সংস্থাপন) মো. মঈন উদ্দীন খান স্বাক্ষরিত সভার নোটিশে বলা হয়েছে- ১৫ অক্টোবর সকালে ৩৬ তম কমিশন সভা হবে। এতে পাঁচটি আলোচ্যসূচি রয়েছে।
প্রথম কর্মপরিকল্পনায় তফসিল ঘোষণা, ভোটগ্রহণ ও ভোটের ফল প্রকাশ পর্যন্ত ৯৯টি কাজের বাস্তবায়নসূচি উল্লেখ রয়েছে। এ কর্মপরিকল্পনায় নভেম্বরে মনোনয়নপত্র দাখিল ও বাছাই এবং ডিসেম্বরে প্রার্থিতা প্রত্যাহার, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও নির্বাচনী প্রচার শুরুর পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়া ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে ভোটগ্রহণের কথা থাকছে। তবে তফসিল ঘোষণা ও ভোটগ্রহণের দিনক্ষণ নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা না হলেও এটি ইসির সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় কর্মপরিকল্পনার ভোটের আগে প্রস্তুতিমূলক ২২ ধরনের কাজের বিবরণ আছে। এগুলো বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে আগামী ১৬ অক্টোবর-১০ নভেম্বর পর্যন্ত। এগুলোর মধ্যে নির্বাচনী ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালানো নিয়ে বৈঠক, আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত বৈঠক, ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকার পরিস্থিতি সংগ্রহের প্রস্তুতির কথা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইসি সচিবালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ যুগান্তরকে বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন আয়োজনে কী কী কাজ করেছি, কী করব এবং কাজের অগ্রগতি সব মিলিয়ে ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি কমিশনসভায় অবহিত করা হবে।
জানা গেছে, কমিশনের আজকের ৩৬তম সভায় ৫টি আলোচ্যসূচি নির্ধারিত রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে ইসিকে অবহিতকরণ, বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ভোটার তালিকায় আলাদা লিঙ্গ হিসেবে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে বিদ্যমান ভোটার তালিকা বিধিমালার সংশ্লিষ্ট বিধি ও ফরমে সংশোধন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার, প্রদর্শনী ও এ সংক্রান্ত করণীয়, সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দুটি ভোটকেন্দ্রের অনিয়মের তদন্ত রিপোর্ট এবং সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন।
কমিশন যে গাইডলাইন দেবে, সে অনুযায়ী নির্বাচনের বাকি প্রস্তুতি নেয়া হবে। এরই মধ্যে ভোটের প্রস্তুতির ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এটি মূল্যায়ন হবে কমিশনসভায়।
ইসির হিসাব অনুযায়ী, ৩০ অক্টোবর থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু। সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে- ৩০ অক্টোবর-২৮ জানুয়ারির মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সূত্র বলছে, আগামী ১-১০ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা ও ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভোটগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসের শেষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছে ইসি। এর পরই তফসিল ঘোষণা হতে পারে।
ইসি সচিবালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, অন্যান্য নির্বাচনের মতোই এবারের প্রস্তুতিমূলক কাজ হচ্ছে।
তবে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল, নির্বাচনী ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, ইভিএম ব্যবহার, ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠনের মতো নতুন কিছু প্রস্তাব রয়েছে কর্মপরিকল্পনায়। সভায় কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন পেলে মঙ্গলবার থেকেই বাস্তবায়ন শুরু।
জানা গেছে, নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক ১১ ধরনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বা শেষ হওয়ার পথে এবং আরও ১১ ধরনের কাজ বাকি রয়েছে জানিয়ে এসব বিষয়ে কমিশনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- নির্বাচনী ব্যয় মনিটরিং করার জন্য ৩০০ আসনের প্রতিটিতে একটি করে অথবা পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি আসনে ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান।
ঋণখেলাপিসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, ভোটকেন্দ্র থেকে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বিশেষ খামে ইসিতে ভোট গণনার বিবরণী প্রেরণ, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি গঠন ইত্যাদি কার্যক্রমের প্রস্তাবনা প্রস্তুতের লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় যোগাযোগ ও প্রয়োজনে সভার আয়োজন করা। সারা দেশের ভোটকেন্দ্রের জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) সম্ভব না হলেও ন্যূনতম ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, গাজীপুর, রাজশাহী ও রংপুর মহানগরীর ভোটকেন্দ্রের অবস্থান, ভোটার সংখ্যা ও অন্যান্য তথ্যবিষয়ক জিআইএস প্রণয়ন।
ভোটের কর্মপরিকল্পনায় যা আছে:
ইসি সচিবালয়ের প্রস্তুত করা ৯৯টি কাজের কর্মপরিকল্পনায় একই মাসে মনোনয়নপত্র বাছাই আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের শেষ তারিখ থাকবে এবং আপিল শুনানির সব ব্যবস্থা করা হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ হবে ডিসেম্বরে। এর পরের দিনই প্রতীক বরাদ্দ ও প্রচার শুরু হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ডিসেম্বরে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত সভা ও ব্যালট পেপার ছাপার কথা উল্লেখ করা হয়েছে কর্মপরিকল্পনায়। ভোটগ্রহণের বিষয়ে নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ নেই।
এ ছাড়া তফসিল ঘোষণার দিন ভোটের কাজে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতা করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি, ভোটকেন্দ্রে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হবে।
জারি করা হবে দুটি পরিপত্র ও রাজনৈতিক দলের জোট গঠনসংক্রান্ত চিঠি। তফসিল ঘোষণার দুদিন পর ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করা হবে। তিন দিন পর প্রার্থীর হলফনামা ও ব্যক্তিগত তথ্যাদি প্রচারসংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। ওই দিনই গঠন করা হবে মিডিয়া মনিটরিং টিম।
নভেম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারের বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতর এবং বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সঙ্গে সভা হবে।
ডিসেম্বরে ভোটের ফল প্রচার নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়, টিঅ্যান্ডটি, বিটিআরসি এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে সভা করবে ইসি।
তফসিলের আগের ২২ দফা কর্মপরিকল্পনায় যা আছে তফসিল ঘোষণার আগেই অনেক বাস্তবায়ন করে ফেলেছে ইসি সচিবালয়। বাকি কাজ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- গত এপ্রিলে প্রকাশিত নির্বাচনী এলাকার সীমানার জিআইএস প্রস্তুত ও মানচিত্রসহ বই মুদ্রণ এবং পোস্টার তৈরি, ১০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পূরক ভোটার তালিকার সিডি মাঠপর্যায়ে সরবরাহ, ৩০ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচনের সব ধরনের ফরম ও প্যাকেট মুদ্রণ করে মাঠপর্যায়ে পাঠানো হবে।
একই সময়ের মধ্যে ভোটগ্রহণের উপকরণ যথা- গানিব্যাগ ও হেসিয়ান ব্যাগ, স্ট্যাম্প প্যাড, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, অফিসিয়াল সিল, গালা ইত্যাদি সংগ্রহ করা হবে। ২২-২৫ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সভা হবে।
কর্মপরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবিষয়ক প্রস্তাবনা ও সভা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নেয়া হবে।
এর পরই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও বিভিন্ন বাহিনী মোতায়েন ও ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদানসংক্রান্ত প্রস্তাব কমিশনে তোলা হবে। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য প্রস্তুতি এ মাসেই শেষ করা হবে।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D