তিন সপ্তাহ ধরে ভীষণ জ্বরে ভুগছেন খালেদা জিয়া : রিজভী

প্রকাশিত: ২:০২ পূর্বাহ্ণ, জুন ৯, ২০১৮

তিন সপ্তাহ ধরে ভীষণ জ্বরে ভুগছেন খালেদা জিয়া : রিজভী

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তিন সপ্তাহ ধরে ভীষণ জ্বরে ভুগছেন বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। খালেদা জিয়ার কয়েকজন নিকটাত্মীয় শুক্রবার কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করে এসে এই তথ্য জানিয়েছেন বলে জানান বিএনপির এই নেতা।

শুক্রবার রাতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ কথা জানান। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানাতে জুরি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘আজ খালেদা জিয়ার নিকটাত্মীয়রা তার সঙ্গে ঢাকা পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে সাক্ষাতের জন্য গিয়েছিলেন। সাক্ষাৎ শেষে তারা দেশনেত্রী সম্পর্কে যে বর্ণনা দেন তা শুধু মর্মস্পর্শীই নয়, হৃদয়বিদারক। সরকারের জিঘাংসার কষাঘাতের তীব্রতা যে কত ভয়াবহ সেটি বোঝা যাবে শুধুমাত্র বেগম জিয়ার প্রতি অমানবিক আচরণের মাত্রা দেখলেই। নিকটাত্মীয়রা বলেছেন গত ৫ জুন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি তিন সপ্তাহ যাবৎ ভীষণ জ্বরে ভুগছেন যা কোনোক্রমেই থামছে না। চিকিৎসাবিদ্যায় যেটিকে বলা হয় টিআইএ (ট্রানজিয়েন্ট স্কীমিক এ্যাটাক)। দেশনেত্রীর দুটো পা-ই এখনও ফুলে আছে এবং তিনি তার শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছেন না।

রিজভী বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, দেশনেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে আমি যে কথাগুলো বললাম তা সম্পূর্ণরূপে সত্য। তার অসুস্থতা নিয়ে ইতোপূর্বেও যে কথাগুলো বলা হয়েছে তা নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ হলে তার স্বাস্থ্যের এতটা অবনতি হতো না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকারের ইচ্ছাকৃত অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

তার প্রয়োজনীয় যে চিকিৎসাগুলোর জন্য বারবার দাবি করা হয়েছিল যেমন বিশেষায়িত এমআরআই, সিটি স্ক্যান, ইকো কার্ডিওগ্রাফি, ইসিজি, বিএমডিসহ জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং একটি চিকিৎসক দলের তত্ত্বাবধানে জরুরি চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা। কিন্তু দলের নেতৃবৃন্দের দাবি এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ ক্রমাগত উপেক্ষাই করে চলেছে সরকার।’

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মাঝে একবার বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে এনে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে বরাবরই দাবি করা হচ্ছে, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, তাকে উন্নত চিকিৎসা দেয়া দরকার। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসা পাচ্ছেন। প্রয়োজনে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর কথাও বলা হয়।

‘গত ২১ মে বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব আব্দুস সাত্তার স্বরাষ্ট্র সচিব বরাবরে আবেদন করেছিলেন দেশনেত্রীর ব্যক্তিগত চারজন চিকিৎসককে কারাগারে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর জন্য। কিন্তু এ বিষয়ে বারবার তাগিদ দেয়া হলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো সাড়া দেয়নি। এতে মনে হয় সরকার এবং সরকার প্রভাবিত প্রশাসনযন্ত্র দেশনেত্রীকে নিয়ে কোনো গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকারের প্রতিহিংসার পাখা সবসময় যেন ঝটপট করছে। বারবার দেশনেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে সুচিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগত চিকিৎসকবৃন্দ, দলের নেতৃবৃন্দ, দেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সোচ্চার থাকলেও সরকার এক অশুভ উদ্দেশ্যে তা অগ্রাহ্য করছে। নির্মম সত্য যে, সরকার এক অশুভ উদ্দেশ্য নিয়েই খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসায় বাধা প্রদান করছে। সরকারের অভিপ্রায় নিয়ে জনগণের মধ্যে প্রবল সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে যে, আসলে দেশনেত্রীকে নিয়ে সরকার কী করতে চায়।’

রিজভী বলেন, ‘এই সরকার মর্যাদা, সহানুভূতি, অন্যের প্রতি সম্মান ও অনুশোচনা হারিয়ে ফেলেছে। চরম মিথ্যাচার যাদের রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতির এজেন্ডা তারা একজন সম্মানীত জনপ্রিয় নেত্রীকে তো কষ্ট দেয়া ছাড়া ভালো কিছু করার শিক্ষা ওদের নেই। নির্বিচারে শক্তি প্রয়োগ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনে সব ব্যবস্থাই তারা করতে পারে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা না দিয়ে নিপীড়নের যে নতুন অস্ত্র ব্যবহার করে মানবাধিকারের ব্যাপক লঙ্ঘনের ধিক্কার জানাই।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘অবিলম্বে দেশনেত্রীর সুচিকিৎসা এবং তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা করানোর জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় সরকারের সব অমানবিক অবিচারের জন্য দায়ী থাকতে হবে।’

কর্মসূচি ঘোষণা
খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবিতে আগামী ১০ জুন রবিবার সারাদেশে জেলা ও মহানগরে এবং ঢাকা মহানগরীর থানায় থানায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন রিজভী।

বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের জন্য অনুরোধ জানান দলটির এই শীর্ষ নেতা।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ড্যাব নেতা অধ্যাপক ডা. সিরাজউদ্দিন আহমদে, আব্দুল কুদ্দুস, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, তাইফুল ইসলাম টিপু, আসাদুল করিম শাহিন প্রমুখ।