১২ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:৫৩ অপরাহ্ণ, জুন ৮, ২০১৮
২০১৮-১৯ সালের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট গরীবকে আরও গরীব করবে, বাজেটে ধনীদেরকে আরও ধনী করার সুযোগ দেয়া হয়েছে বলে দলে পক্ষে মন্তব্য বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি আরো বলেন নির্বাচনকে সামনে রেখে লুটপাটের জন্যই এ বিশাল বাজেট। এক কথায় বলা যায় প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের রক্ত চোষার লুটের বাজেট।
শুক্রবার (৮ জুন) সকাল ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজেট প্রসঙ্গে এই প্রতিক্রিয়া জানান।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ভোটারবিহীন সরকার বিশাল ঘাটতির ঋণনির্ভর ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছে। প্রস্তাবিত বাজেট জনকল্যাণমূলক না হওয়ায় জনগণ হতাশ হয়েছে। তারা জনগণের সরকার নয়, আর এই সংসদ সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন, তাই তাদের কাছ থেকে জনকল্যাণমুখী বাজেট আশা করা যায় না। প্রস্তাবিত বাজেট মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না।’
রিজভী বলেন, ‘মূলত নির্বাচনকে সামনে রেখে সর্বশেষ লুটপাটের জন্যই এ বিশাল বাজেট পেশ করা হয়েছে। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বাজেট বড় করা হয়েছে। বাজেটের আকার বড় করে জনগণের সঙ্গে ধাপ্পাবাজি করা হয়েছে। এ বাজেট বাস্তবায়ন অসম্ভব। এটা মানুষকে বোকা বানানোর বাজেট, এটা প্রতারণার বাজেট।’
গত বছরের বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন গত অর্থবছরেও ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট দেয়া হয়েছিল। কি দেখলাম লুটপাট আর হরিলুট। সারা দেশের রাস্তা ঘাটের দিকে তাকান। দেশের ৮৫ হাজার কিলোমিটার সড়ক বর্তমানে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। অথচ মেগা প্রকল্পের নামে তারা বাঘা দুর্নীতি করেছে। গতবার এত বিগ বাজেট দেয়ার পরও বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে। আর দেশের উত্তরাঞ্চলের হতদরিদ্রের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবারো অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে শুধু লুটপাটের জন্য। প্রস্তাবিত বাজেটেও মেগা দুর্নীতির জন্য সকল পথ খোলা রাখা হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোর অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা বিদ্যমান।’
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘বাজেটে যে বড় ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করা অসম্ভব। সেজন্য ঋণ ও সঞ্চয়পত্রের ওপর ঝুঁকতে হবে সরকারকে। প্রস্তাবিত বাজেট কর, ঋণ আর বিদেশী অনুদান নির্ভর। বাজেটে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা, এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা আদায় করা হবে। যা জনগণের রক্ত চুষে আদায় করতে হবে। তাই এক কথায় বলা যায় প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের রক্ত চোষার লুটের বাজেট। চলতি আয়-ব্যয়ে বিশাল ঘাটতি থাকবে, কারণ আমদানি ব্যয় বাড়ছে, রফতানি আয় কমছে। রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মুল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।’
রিজভী বলেন, ‘এ বাজেট জনকল্যাণে কোনো কাজে আসবে না। প্রস্তাবিত বাজেট গরীবকে আরো গরিব করবে, বাজেটে ধনীদেরকে আরো ধনী করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এমনিতে দারিদ্র কমার হার কমে যাচ্ছে, এ বাজেটে দারিদ্র কমার হার আরো কমে যাবে। কারণ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না, অর্থনীতির নতুন খাত তৈরি হচ্ছে না। প্রচলিত রপ্তানিযোগ্য খাতগুলোর বহুমুখীকরণে কোনো নীতিমালা নেই এই সরকারের বাজেটগুলোতে। বাজেটে ব্যাংক লুটপাটকারীদের আরো সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের কর্পোরেট কর কমিয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোরও কর কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যাংক মালিকরা যা চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী তাই করেছেন। ব্যাংক মালিকদের আরো বেশি লুটপাটের সুযোগ করে দেয়ার বাজেট এটি। প্রস্তাবিত বাজেটে জনকল্যাণমূলক কাজে যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাতে বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। ফলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে কোনো উন্নয়ন হবে না। পোশাক খাতসহ করপোরেট খাতে কর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পোশাক খাতে বর্তমানে যে দুরাবস্থা চলছে তাতে সে খাতে দুরাবস্থা আরো বেড়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘বাজটে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনো সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা নেই। দেশে সুশাসন না থাকায় বর্তমানে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বন্ধ রয়েছে। শেয়ার মার্কেট থেকে বিদেশী বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছে। বর্তমানে দেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি। বাজেটে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তেমনভাবে না রাখায় বেকার সমস্যা আরো বেড়ে যাবে। প্রস্তাবিত বাজেট পাশ হলে সকল জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। বাড়ি-ঘরের ট্যাক্স বাড়বে, বাসাভাড়া বাড়বে, ফলে সামগ্রিকভাবে নিম্ম মধ্যবিত্ত ও মধ্য বিত্তরা বিপাকে পড়বে। কারণ মূল্য সংযোজন করের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। ভ্যাটের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পেলে মধ্য বিত্ত ও নিম্ন মধ্য বিত্তরাই কষ্ট পাবে বেশী। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা অগ্রাহ্যই থেকেছে। এর আগেও সার্বজনীন পেনশনের কথা বলা হলেও বাস্তবায়ন হয়নি, এবারো তাই।’
সরকারের সমালোচনা করে রিজভী আরও বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তির প্রশস্ত মহাসড়কে মানবজাতির বিচরণ, অথচ এই অবৈধ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে, কিন্তু বাজেটে ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল ব্যবহারের ওপর কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।’
জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭.৮। বিশ্বব্যাংকসহ বিশেষজ্ঞরাও বলছেন যে, প্রবৃদ্ধি ৭ এর নীচে থাকবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ৭.৮ প্রবৃদ্ধি অসম্ভব। কারণ দেশে সুশাসন নেই, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ নেই, কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই, বিদেশী রেমিটেন্স দিন দিন নিম্নগামী হচ্ছে। সুতরাং প্রবৃদ্ধির এই মাত্রা অর্জন করা কখনোই সম্ভব নয়। সুতরাং প্রস্তাবিত ৭.৮ প্রবৃদ্ধি ডাহা মিথ্যাচার। এই বাজেট গণবিরোধী। নির্বাচনের আগে দলীয় নেতাকর্মীদের পকেট ভারী করার সুযোগ সৃষ্টি, জনগণের সঙ্গে ধাপ্পাবাজি ছাড়া এই বাজেট আর কিছুই নয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এই সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখান করছে।’
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে রিজভী বলেন,‘ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে বিএনপি না চাইলেও ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। আসলে সিইসি সরকারের সাথে এক অলিখিত বশ্যতার আবদ্ধ। আগামী নির্বাচনের ফল ক্ষমতাসীনদের পক্ষে নিতে নানা কারসাজি ও নতুন নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে সিইসি। ইভিএম নিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো এবং নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ বিপক্ষে মত দিয়েছে। আর এর পক্ষে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও সমমনা কয়েকটি দল। আর সিইসি মত দিলেন ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে। ’
তিনি বলেন, ‘ইসি ইতোমধ্যে ২৫৩৫টি ইভিএম মেশিন কিনে ফেলেছে। ইসির এই কর্মকাণ্ডগুলো ক্ষমতাসীনদের অনুকূলে একনিষ্ঠভাবে কাজ করা। অনেক দেশেও ইভিএম পদ্ধতি চালু করার পরও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ইসি ভোট কারচুপি ও জালিয়াতি করতেই ইভিএম পদ্ধতি চালুু করার কথা বলছে। আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার একতরফা নির্বাচন নিশ্চিত করতেই সিইসি ইভিএম এর মতো কারসাজি করার একটি যন্ত্রকে ভোটের কাজে ব্যবহার করার উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা আগেও বলেছি সরকারের আজ্ঞাবাহী এই সিইসির অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। বর্তমান সিইসি সবচেয়ে যেটির বেশি ক্ষতি করেছেন সেটি হলো গণতন্ত্র।’
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার কর্তৃত্ব সম্প্রসারণে নির্বাচন কমিশন কব্জার মধ্যে পড়েছে। মোসাহেবি করতে গিয়ে সিইসি স্বেচ্ছায় নিজের ভাবমূর্তিকে অতলে তলিয়ে দিয়েছেন। ইভিএম চালুর ঘোষণা দিয়ে সিইসির মাধ্যমে সরকার তাদের অবৈধ ক্ষমতা প্রদর্শন করলো। এই সিইসি ইতোমধ্যেই প্রমাণ দিয়েছে তিনি সুষ্ঠু, অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের শত্রু। সিইসি’র পদত্যাগ ছাড়া কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D