খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছে আদালত, সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে লাভ নাই

প্রকাশিত: ১০:২৯ অপরাহ্ণ, মে ২, ২০১৮

খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছে আদালত, সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে লাভ নাই

‘এতিমের টাকা চুরি করার কারণে খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছে আদালত, সরকারের কাছে মুক্তির দাবি জানিয়ে কোনো লাভ নাই, তার চিকিৎসার জন্য সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এতো সুবিধা কোনো আসামি পায় না, তার সাথে একজন নিরাপরাধ মানুষ জেল খাটছে, এখন কোনো মানবাধিকার সংস্থা কোনো কথা বলছে না, বিএনপি নির্বাচেনে না আসলে আমোদের কিছু করার নাই’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (২ মে) প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। সাম্প্রতিক সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তারেক একজন অপরাধী, সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে অবশ্যই দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। তার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সাথে কথা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেকের বিষয়ে আমরা ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি। নিশ্চয়ই তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো আমরা।’

লন্ডনে অবস্থানরত তারেকের বাংলাদেশের পাসপোর্ট জমা দিয়ে দেওয়া এবং তাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলের বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অনেক দেশ থেকে এ ধরনের আসামি নিয়ে আসি। সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেকের বিষয়েও আমরা ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি। নিশ্চয়ই আমরা তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।’

তারেককে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করায় বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে তারা চেয়ারপারসন করলো। বিএনপি নাকি সবচেয়ে বড়, জনপ্রিয় দল, তাদের দলে কি একজন যোগ্য লোকও নেই? এ ধরনের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে তারা চেয়ারপারসন করে? এ ধরনের রাজনৈতিক দেউলিয়া দল আর নেই।’

‘আমরা সৌদি আরবে গিয়েছি, তাদেরকে আমরা মাইন অপসারণ ও কনস্টাকশনে সহযোগিতা করব, কিন্তু রণক্ষেত্রে যুদ্ধে জড়াতে চাই না’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের নীতি হল সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়।

বুধবার বিকেল ৪টায় গণভবনে অনুষ্ঠিত ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরব সফর’ নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গ্লোবাল সামিট অব উইমেন সম্মেলনে প্রাপ্ত ‘গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০১৮’ আমি দেশের নারীদের প্রতি উৎসর্গ করেছি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি সফরকালে বিভিন্ন দেশের প্রধানদের সাথে বৈঠক করার বর্ণনা দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছেলে-মেয়েরা কোটা চায় না বলে আমি দাবি মেনে নিয়েছি, এটা নিয়ে আর কিছু বলার বলার নাই। তারা আমার নাতির বয়সী, আমার নাতি এখন কলেজে পড়ে, তাদের দাবি মেনে নিয়েছি, তারা যখন আন্দোলন করল, তখন কেউ তো কিছু বললেন না, এখন এবিষয়ে আমার কিছু করার নাই। কোনো জেলা থেকে যদি কেউ চাকরি না পায় তাহলেও আমার কিছু করার নাই।

এসময় তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগের কমিটিতে যারা আসতে চায় তাদেরকে নিয়ে সমঝোতা করে অন্যবারের মতো প্রেসরিলিজ দিয়েই ছাত্রলীগের কমিটি হবে। সমঝোতা না হলে ভোটের মাধ্যমে হবে। তবে ভোটে যে সে চলে আসলে মেনে নেওয়া হবে না।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে কমনওয়েলথ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সম্মেলনে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

‘সেখানে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এই সফরকে আমার সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য বলে মনে করি,’ বলেন তিনি।

সফরে নরেন্দ্র মোদী, জাস্টিন ট্রুডোসহ বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথা বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে বিশ্ব সম্প্রদায়। এই সফরগুলোতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে বলে আমি মনে করি।’

এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা আমাদের দেশে এসেছেন, তাদের মনোভাব অত্যন্ত ইতিবাচক, তারাও চান মিয়ানমার থেকে যে ১১ লাখ মানুষ এসেছে, তারা সেখানে ফিরে যাক।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ যে যে এতগুলো মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে, তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করেছে, তারা তার ভূয়সি প্রশংসা করেছে। আমরা আশা করছি, তারা মিয়ানমারকে চাপ দেবে।’

এর আগে সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের মনোভাব খুবই ইতিবাচক। তারা চায় রোহিঙ্গারা সম্মানের সাথে তাদের দেশে ফেরত যাক।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ সম্মেলনে রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশের ভূমিকার যে প্রশংসা হয়েছে, তা সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে বিশ্ব সম্প্রদায়। কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রশংসা হয়েছে, সম্মেলনের ঘোষণায় রোহিঙ্গা বিষয়ক অনুচ্ছেদ যুক্ত হয়েছে। যেটা আমাদের সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য বলে মনে করি।

সফরে অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসাও বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পেয়েছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় গ্লোবাল সামিট অন উইমেনে প্রাপ্ত ‘গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ দেশের নারী সমাজের প্রতি উৎসর্গ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট