রাজধানীতে দুই গ্রুপের গোলাগুলি, এমপির সমর্থকদের গুলিতে চেয়ারম্যানের ভাই নিহত

প্রকাশিত: ১১:৫১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০১৮

রাজধানীতে দুই গ্রুপের গোলাগুলি, এমপির সমর্থকদের গুলিতে চেয়ারম্যানের ভাই নিহত

রাজধানীর বাড্ডা থানার বেরাইদ এলাকায় সংসদ সদস্য একেএম রহমত উল্লাহর সমর্থক ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকদের ব্যাপক সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। নিহত কামরুজ্জামান দুখু (৪০) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরের ভাই। তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

রবিবার বিকালে বেরাইদের ক্রাউন সিমেন্ট ফ্যাক্টরির কাছে প্রধান সড়কে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন বাড্ডা থানার ওসি ওয়াজেদ আলী। এ ঘটনায় বেরাইদে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, এমপি রহমত উল্লাহর ভাগ্নে ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে ৫০/৬০ জন বিকাল সাড়ে চারটার দিকে জাহাঙ্গীরের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়।

এ সময় জাহাঙ্গীরের সমর্থকরা প্রতিরোধ করতে গেলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

এ ঘটনায় এক বিদেশিসহ ৭ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ছয়জন জাহাঙ্গীরের সমর্থক। তারা সবাই গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজধানীর অ্যাপোলে হাসপাতালে ভর্তি। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়।

জাহাঙ্গীরের সমর্থকদের ভাষ্য, আধিপত্য বিস্তার এবং দখলবাজির নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত কামরুজ্জামান ক্রাউন সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে ঠিকাদারের কাজ করেন। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে তিনি ফ্যাক্টরির কাছে কয়েকজনকে নিয়ে কাজ করছিলেন। এ সময় এমপির ভাগ্নে ফারুকের নেতৃত্বে তাদের ওপর গুলি চালানো হয়। এ সময় জাহাঙ্গীরের সমর্থকরা প্রতিহত করতে এগিয়ে এলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন- সানি, শরীফ, কামাল, বাদল, নাজির হোসেন, তাজ মোহাম্মদ ও একজন বিদেশি। তবে বিদেশির নাম জানা যায়নি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেরাইদে আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ রয়েছে। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এমপি রহমত উল্লাহর ভাগ্নে ফারুক আহমেদ। অন্য পক্ষের নেতৃত্বে বাড্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপনির্বাচন স্থগিত চেয়ে রিট করা এবং বেরাইদ ইউনিয়ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এমপি রহমত উল্লাহর ভাগ্নে ফারুক আহমেদ ও জাহাঙ্গীর আলমের গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে।

নির্বাচন স্থগিত চেয়ে রিটটি করেছিলেন বেরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও ভাটারা ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান। ওই রিটের প্রেক্ষিতেই নির্বাচন স্থগিত হয়। ওই নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে এমপি রহমত উল্লাহর ছেলে হেদায়েত উল্লাহ প্রার্থী ছিলেন।

স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন মাস আগে বেরাইদ মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘বেরাইদ নাগরিক কমিটি’র ব্যানারে ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরের অপসারণ চেয়ে গণসমাবেশ করেছিল এমপি রহমত উল্লাহর সমর্থকরা।

ওই গণসমাবেশ আয়োজনের মূল নেতৃত্বে ছিলেন রহমত উল্লাহর ভাগ্নে ফারুক আহমেদ।

এমনকি তিনি ওই সমাবেশের প্রধান অতিথি ছিলেন। সমাবেশে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে লুটপাট, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ করা হয়। ওই গণসমাবেশের পরই মূলত দুই পক্ষের বিরোধ চরমে পৌঁছায়।

এর জেরে বেরাইদ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এক সময় এমপি রহমত উল্লাহ বেরাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন।

পুলিশের বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, এমপি রহমত উল্লাহ ও ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরের সমর্থকদের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি রহমত উল্লাহ রোববার সন্ধ্যায় বলেন, বেরাইদে আমার কোনো গ্রুপ নেই। সেখানে আমার গ্রুপ করার প্রয়োজন নেই। আমি সংঘর্ষের কথা শুনেছি। কারা করেছে এখনও আমি জানি না।

বেরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পরিকল্পিতভাবে এমপি রহমত উল্লাহর গ্রুপের লোকজন আমাদের লক্ষ্য করে গুলি করেছে। গুলিতে আমার ভাই নিহত হয়েছে। আরও অনেকে আহত হয়েছে।