লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে আসলে কী ঘটেছিল?

প্রকাশিত: ৪:৩৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০১৮

লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে আসলে কী ঘটেছিল?

যুক্তরাজ্যে কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অনুষ্ঠান নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তুমুল আলোচনা। তিনি ‘মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেননি’ – এ কথা নিয়ে চ্যানেল ফোর প্রতিবেদনও করেছে।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা বাসস-এর খবরে বলা হয়েছে, ‘মঙ্গলবার বিকেলে লন্ডনে ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটে (ওডিআই) ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন গল্প: নীতি, অগ্রগতি ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মূল বক্তা হিসেবে ভাষণ দেয়ার পর প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অন্যদিকে লন্ডনের চ্যানেল ফোর-এর প্রধান প্রতিবেদক অ্যালেক্স থমসন তার এক প্রতিবেদনে দাবি করেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার করা সেদেশের মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেননি। বরং প্রধানমন্ত্রী তখন হাসছিলেন। চ্যানেল ফোর তাদের প্রতিবেদনের শিরোনাম দিয়েছে, ‘মানবাধিকার বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’

এ নিয়ে জার্মান ভিত্তিক ডয়চে ভেলে ঢাকা থেকে টেলিফোনে কথা বলে লন্ডনে বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং সেখানকার আই অন টেলিভিশন চ্যানেলের পরিচালক (নিউজ অ্যান্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স) বুলবুল হাসানের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল ‘মিট দ্য প্রেস’-এর আদলে। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়ন, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং ভবিষ্যত উন্নয়ন সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। প্রথমে তিনি নিজে বক্তব্য রাখেন এবং পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। অনুষ্ঠাটির একজন সঞ্চালক ছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের রাজনীতি নিয়েও কথা বলেন। নিজ সরকারের গত ন’বছরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, গণতান্ত্রিক উন্নয়ন ও ধারবাহিকাতা নিয়ে কথা বলার সময় তারেক রহমান প্রসঙ্গেও কথা বলেন শেখ হাসিনা। জানান বুলবুল হাসান।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে তারেক রহমান নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা হয়নি। তিনি নিজে থেকেই রাজনৈতিক সিকিউরিটি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘ব্রিটেন যেহেতু একটি মুক্ত দেশ, যে কেউ এখানে রাজনৈতি আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারে। কিন্তু তারেক রহমান একজন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। তার অপরাধের জন্য আদালত তাকে সাজা দিয়েছে। অর্থাৎ রাজনৈতিক কারণে তারেক রহমান ব্রিটেনে আশ্রয় নেয়নি।’

প্রধানমন্ত্রী এ কথাও জানান যে তিনি ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আলোচনা তারেক রহমানকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া বেগবান করবে। এছাড়া তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করার কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে প্রচ্ছন্নভাবে তাকে আশ্রয় দেয়ায় ব্রিটিশ সরকারের সমালোচনাও করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’

বুলবুল হাসান জানান, ‘অনুষ্ঠানের প্রশ্নোত্তর পর্বে চ্যানেল ফোর-এর সাংবাদিক বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম, নিখোঁজ নিয়ে প্রশ্ন করেন। কিন্তু প্রশ্নটি নেয়া হয়নি। যিনি উপস্থাপনা করছিলেন তিনি মনে করেছেন অনুষ্ঠানটি যে ধারার তাতে এ আলোচনা আনুষ্ঠানটি বিঘ্নিতই করবে। ফলে উনি প্রশ্নটি নেননি এবং এড়িয়ে গেছেন। তিনি বলছিলেন, ‘উই আর রানিং আউট অফ টাইম। তাই আমরা যা প্রশ্ন নিয়েছি, এর বাইরে আর কোনো প্রশ্ন নিচ্ছি না।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীও প্রশ্নটির প্রতি কোনো আগ্রহ দেখাননি বা জবাব দেননি। তবে প্রধানমন্ত্রী হেসেছেন। ঐ সাংবাদিক এরপর বসে তার প্রশ্নের জবাব না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন।’

এরপর আর কোনো প্রশ্ন নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বুলবুল হাসান বলেন, ‘এরপরও প্রশ্ন নেয়া হয়েছে। আগের আলোচনার ধারাবাহিকতায় যেসব প্রশ্ন করা হয় শুধুমাত্র সেগুলোই নেয়া হয়েছে।’

এদিকে আরেক প্রশ্নের জবাবে বুলবুল হাসান জানান, ‘আমরা যতটুকু জানি তারেক রহমানকে স্পেশাল ইমিগ্রেশন ক্রাইটারিয়ায় লন্ডনে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এটা অনেকটা অ্যাসাইলামের মতো। ব্রিটিশ সরকারের কাছে যারা রাজনৈতিক আশ্রয় চান, তাদের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে ভিসা দেয়া হয়। আমরা জেনেছি, প্রথম দফায় ওনাকে অ্যাসাইলাম দেয়ার পর সেটা আবার বাড়ানো হয়েছে।