হামলার পেছনে কারা আছে দেখতে চাই : সুলতানা কামাল

প্রকাশিত: ১২:১৮ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০১৮

হামলার পেছনে কারা আছে দেখতে চাই : সুলতানা কামাল

মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘যে করেই হোক এই হামলার বিচার করতে হবে। আমরা দেখতে চাই এই হামলার পেছনে কারা আছে। এই দেশকে কোনো দুর্বৃত্তের হতে দিব না।’

রবিবার অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার করা এবং হামলার আসল পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করার দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন সুলতানা কামাল। জাতীয় জাদুঘরের সামনে ওই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে গণজাগরণ মঞ্চ।

সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমরা জানি জাফর ইকবাল কেন প্রিয়, কেন ভালবাসার পাত্র। কারণ তিনি মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধের বাণী তরুণ প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি, তা ধ্বংস করার জন্য এই হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের প্রেতাত্বারা এখনো রয়ে গেছে। তাই এ ধরনের হামলা হচ্ছে।’

মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির বলেন, ‘প্রগতিশীলদের ভয় দেখানোর জন্য এই হামলা হয়েছে। তবে হতাশার দিক রাষ্ট্র থেকে যে ধরনের ভূমিকা নেওয়ার দরকার তা রাষ্ট্র নিচ্ছেনা।’

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘অভিজিৎ রায়ের ওপর হামলার পর থেকে হামলা শুরু হয়েছে যা আর বন্ধ হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতি শুরু হয়েছে। এর আগে ঘরে প্রবেশ করে হামলা হয়েছে, এখন সবার সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা হচ্ছে।’

বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন, লেখক ও প্রকাশক রবীন আহসান, গণজাগরণ মঞ্চের নেতা আকরামুল হক, কেন্দ্রীয় খেলাঘরের সহ-সভাপতি ড. আবু সায়েদ, উন্নয়নকর্মী শাহীন আনাম, নারী সাংবাদিক ফোরামের আহ্বায়ক নাসনিম আরা মিনু, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জি এম জিলানী শুভ, সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী প্রমুখ।

জাফর ইকবালের ওপর হামলার প্রতিবাদে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ
জনপ্রিয় লেখক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে ছাত্রলীগ।

এ দাবিতে গতকাল শনিবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে সংগঠনটি।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে একটি মিছিল বের হয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স।

সমাবেশে বক্তারা মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ও এর পেছনে মদদদাতাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মো. সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘আমরা হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। হামলাকারী ও যারা এ হামলার পেছনে থেকে হামলার পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, তাদেরও শাস্তি দিতে হবে।’

ছাত্রলীগ নেতা আরো বলেন, ‘এখন থেকে যেখানে জঙ্গিবাদ জামায়াত-শিবিরকে পাওয়া যাবে, সেখানে গণধোলাই দেওয়া হবে। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যাবে, সেখানে গণধোলাই দিতে হবে। প্রতিটি ইঞ্চিতে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করতে পারিনি, তাদের দায়িত্ব এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিএনপি, জামায়াত-শিবিরকে বাংলাদেশ থেকে চিরতরে মুছে ফেলার।’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দেশে কখনো স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির ও বিএনপির আস্তানা থাকতে পারে না। ছাত্রলীগ বেঁচে থাকতে তাদের ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই সফল হবে না।’

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘জাফর ইকবালের মতো বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে খুনিরা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দুর্বল করতে চায়। শেখ হাসিনাকে বেকায়দায় ফেলে দিতে এ হামলা করা হচ্ছে।’

এর আগে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘এমন একজন বহুমাত্রিক প্রতিভাবান শিক্ষকের ওপর যে বা যারা হামলা চালিয়ে আহত করেছে, আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এই সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই হামলার সঙ্গে জড়িত অন্যদের দ্রুত খুঁজে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের একটি উৎসব ছিল। সেই উৎসবে অংশ নিয়ে অন্যদের সঙ্গে মুক্তমঞ্চে বসে ছিলেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এক যুবক হঠাৎ পেছন থেকে তাঁর মাথায় ছুরিকাঘাত করেন।

সঙ্গে সঙ্গেই হামলাকারীকে ধরে ফেলে পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা। পরে তাকে গণপিটুনি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। রাতে তাকে নেওয়া হয় র্যা ব হেফাজতে। হামলাকারী এখন সিলেট সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট