অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যই বাড়তি সেনা মোতায়েন, দাবি মায়ানমারের

প্রকাশিত: ৬:২১ অপরাহ্ণ, মার্চ ২, ২০১৮

অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যই বাড়তি সেনা মোতায়েন, দাবি মায়ানমারের

কক্সবাজার : সীমান্তের নিজেদের অংশে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যই বাড়তি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে মায়ানমার। এজন্য তারা সীমান্ত এলাকায় ফাঁকা গুলি চালিয়েছিল বলে দেশটির দাবি।

শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু ঘুমধুম সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ক্যাম্পে পতাকা বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ৩৪নং বিজিবি অধিনায়ক লেফ. কর্নেল মঞ্জুরুল আহসান খান।

মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, ‘মায়ানমার সীমান্ত পুলিশ বিজিবির কাছে প্রশ্ন করে, সীমান্তে বাংলাদেশ কেন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করছে। জবাবে আমরা জানাই, এটা মিয়ানমারকে টার্গেট করে করা হয়নি, আমাদের নিরাপত্তার জন্যই আমরা এটা করেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘মায়ানমার সীমান্ত পুলিশ আরো জানিয়েছে, ভবিষ্যতে সীমান্ত এলাকায় ফাঁকা গুলির আগে বাংলাদেশকে অবহিত করবে।’

তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের যে কোনো সময় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে মায়ানমার সীমান্ত পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে বলেও তিনি জানান।

তিনি জানান, সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে। শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গারাও ভালো আছে।

পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন মঞ্জুরুল আহসান খান ও মায়ানমারের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন দেশটির সীমান্ত পুলিশের লেফ. সোয়োজাই লিউ।

এর আগে শুক্রবার সকালে বান্দরবান উপজলার ঘুমধুমের তমব্রু সীমান্তে নো-ম্যানস ল্যান্ড এলাকা পরিদর্শন করেছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক, ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান, বান্দরবান লামা উপজেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুস সালাম, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এন সরয়ার কামাল প্রমুখ।

পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বলেন, ‘বিজিবির পক্ষ থেকে মায়ানমারকে পতাকা বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আজ বিকাল ৩টায় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) মিয়ানমার সীমান্তে অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ করার প্রতিবাদ জানায় বিজিবি। এসময় পতাকা বৈঠকের আহ্বান করা হয় বিজিবির পক্ষ থেকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ পতাকা বৈঠকে অংশ নিতে রাজি হলো মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। এর আগে একাধিকবার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হলেও তাতে রাজি হয়নি মিয়ানমার।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তমব্রু এলাকায় বিজিপির বাড়তি তৎপরতা দেখা গেছে। সীমান্তে মিয়ানমারের অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েনে তৈরি হয় উত্তেজনা। তমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অংশ থেকে ফাঁকা গুলির শব্দও পাওয়া যায়। এতে সীমান্তের বাংলাদেশ অংশের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়ে যায়। একইসঙ্গে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়ে যায় ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডে’ থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যেও। এ পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন উ’কে তলব করে তাকে একটি নোট ভারবাল বা আনুষ্ঠানিক পত্র দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

একটি সূত্র জানায়, রাখাইনে সামরিক শক্তি বাড়ালে নো-ম্যানস ল্যান্ডে যে ছয় হাজার রোহিঙ্গা আছে তারা মায়ানমারে ফেরত যেতে আগ্রহী হবে না এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াটি অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ ঘটনায় ঢাকায় মায়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ‘দ্রুত ওই এলাকা থেকে সামরিক উপকরণসহ সেনাদের সরিয়ে নিতে’ বলা হয়েছে।

গত কয়েক সপ্তাহে শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মায়ানমারের সেনাদের চাপের মধ্য রয়েছে। মাইকিং করে রোহিঙ্গাদের তারা শূন্যরেখা থেকে চলে যেতে বলেছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও রোহিঙ্গাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে, গতকাল শূন্যরেখার পাশে নতুন করে আরো ১০০ সেনা ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে টহল দেওয়া শুরু করে।

গত জানুয়ারি মাসে দুই দেশের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে চুক্তি হয়। এর মধ্যে সীমান্তের এই উত্তেজনা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ওই সময় প্রস্তুতির অভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াটি শেষ মুহূর্তে ঝুলে যায়। যথাযথ নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত না করে মায়ানমারে ফেরত যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিক্ষোভ করে।

মায়ানমার সব সময় দাবি করে আসছে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক। তারা অবৈধভাবে মায়ানমারে প্রবেশ করে বাস করছে। রাখাইন রাজ্যে বংশপরম্পরায় বাস করে আসা রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে সব ধরনের মৌলিক অধিকার ও সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মায়ানমারের রাখাইনে সে দেশের সেনাবাহিনী নিপীড়ন ও গণহত্যা চালানো শুরু করলে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দিলেও নিজেদের দেশে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আহ্বানসহ দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট