দেশে কোনো নির্বাচিত সংসদ ও সরকার নেই, গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত : আদালতকে খালেদা

প্রকাশিত: ১:৩৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০১৭

দেশে কোনো নির্বাচিত সংসদ ও সরকার নেই, গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত : আদালতকে খালেদা

আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশে এখন সত্যিকার অর্থে কোনো নির্বাচিত সংসদ ও সরকার নেই। গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। প্রহসনের সংসদের মাধ্যমে গঠিত সরকারের কাজ কখনো বৈধ হতে পারে না। তারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থেকে দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমার নাগরিক অধিকার হরণ করা হয়েছে বার বার। একের পর এক মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে, বারবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিচারকের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার পর রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে পৌঁছান। দুপুর ১২টা থেকে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দিচ্ছেন। এর আগে ম্যাডাম সাড়ে ১০টার দিকে গুলশানের বাসভবন থেকে আদালতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান।

বেগম জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়াও এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

এর আগে গত ১৯ অক্টোবর দুই মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে বিশেষ আদালতে আংশিক বক্তব্য উপস্থাপন করেন খালেদা জিয়া। আদালত ২৬ অক্টোবর পুনরায় শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেন। এদিনও খালেদা জিয়া তার বক্তব্য উপস্থাপন করবেন বলে জানা গেছে।

ওই দিন জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিশেষ আদালতে আত্মসমর্পণ করে এক লাখ টাকার মুচলেকায় জামিন পান সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। এর পরই খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য শুরু করেন। তিনি সেদিন সোয়া ঘণ্টার বেশি সময় আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

গত ১৫ জুলাই চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন। বড় ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগে থেকেই লন্ডনে অবস্থান করছেন। এ সময়ই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চারটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এর মধ্যে দুটি মামলায় জামিন পেয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া বাসে পেট্রলবোমা হামলার মামলায় গত ৯ অক্টোবর বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন বেগম। আর ১২ অক্টোবর মানহানির মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম নূর নবী গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

১৯ অক্টোবর আদালতে দেয়া খালেদা জিয়ার জবানবন্দীতে যা বলেন:-
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
মাননীয় আদালত,
আসসালামু আলাইকুম।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টকে কেন্দ্র করে আমিসহ অন্যান্যের বিরুদ্ধে একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলার সমস্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ কাল্পনিক ও পুরোপুরি বানোয়াট। সমস্ত অভিযোগ স্ববিরোধী বক্তব্যে ভরপুর।

এই ট্রাস্টের অর্থায়ন, পরিচালনা বা অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে আমার নিজের ব্যক্তিগতভাবে কিংবা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রধানমন্ত্রীর কোনো সম্পর্ক ছিল না এবং এখনো নেই।

দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আইনগত কর্তৃত্ব ও এখতিয়ারের বাইরে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর এমন একটি ভিত্তিহীন অভিযোগে দায়ের করা এ মামলায় বিচারের নামে দীর্ঘদিন ধরে আমি হয়রানি, পেরেশানি ও হেনস্তার শিকার হচ্ছি।

আমার স্বাভাবিক জীবন-যাপন ব্যাহত হচ্ছে। বিঘ্নিত হচ্ছে আমার রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম।
দেশ, জাতি ও জনগণের জন্য, তাদের স্বার্থ ও কল্যাণে নিয়োজিত আমার প্রয়াস ও পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এমন সব হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলার কারণে আমার দলের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও জনগণের এক বিরাট অংশকে থাকতে হচ্ছে গভীর উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে।

কারণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমন ধারণা প্রবল যে, দেশে ন্যায়বিচারের উপযোগী সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি এখন নেই। বিচার বিভাগ স্বাধীন ও স্বাভাবিকভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করতে পারছে না। শাসক মহলের নানামুখী তৎপরতা, হস্তক্ষেপ ও প্রভাব বিস্তারের কারণে বিচারকগণ আইন অনুযায়ী ও বিবেক শাসিত হয়ে বিচার করতে পারছেন না। রায়, সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ প্রদানের ক্ষেত্রে বিচারকগণকে তোয়াক্কা করতে হচ্ছে সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর।

ক্ষমতাসীনেরা কিসে তুষ্ট এবং কিসে রুষ্ট হবেন, সে কথা মাথায় রেখে বিচারকদের চলতে হচ্ছে। বিচারকদের পদোন্নতি ও নিয়োগ এবং হয়রানি ও বদলীর ক্ষমতা বিপুলভাবে রয়ে গেছে ক্ষমতাসীনদের হাতে। এই ক্ষমতা অপপ্রয়োগের ভয় তাই বিচারকদের মনে থাকাটাই স্বাভাবিক। নিম্ন আদালতে এই পরিস্থিতি ও পরিবেশের নেতিবাচক প্রভাব আরো বেশি প্রকট। আমি একটি মাত্র ছোট্ট উদাহরণের কথা এখানে উল্লেখ করতে চাই।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং আমার ও শহীদ জিয়াউর রহমানের পুত্র তারেক রহমানকে অর্থ পাচারের একটি বানোয়াট অভিযোগ থেকে তার অনুপস্থিতিতিতেই একজন বিচারক বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট