কুলাউড়ায় স্কুল ছাত্রীর হত্যার প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

প্রকাশিত: ১১:৩১ অপরাহ্ণ, জুন ১৫, ২০২৫

কুলাউড়ায় স্কুল ছাত্রীর হত্যার প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় দশম শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী নাসিফা জান্নাত আনজুম (১৫) কে হত্যার প্রতিবাদে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।

রবিবার (১৫ জুন) বিকেলে সচেতন যুব সমাজের ব্যানারে শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

মানববন্ধনে একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক বদরুল হোসেন খান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এড. খালেদ লাকী, ইউসুফ গণি আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ এ এন এম আলম, উপজেলা বিএনপি নেতা সারওয়ার আলম বেলাল, ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. ছয়ফুল ইসলাম, ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য লুৎফুর রহমান, সমাজসেবক মাহমুদ খান আক্তার, ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়া, সমাজকর্মী শাহিন আহমদ প্রমুখ। মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন সমাজকর্মী আব্দুস সামাদ সুজেল।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নেতৃবৃন্দরা স্লোগানে স্লোগানে শিক্ষার্থী আনজুমের হত্যার সঠিক ও দ্রুত বিচারের দাবি জানান। এ সময় তারা ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘বিচার চাই’, আনজুমের হত্যার বিচার চাই’, ‘আনজুমের হত্যাকারীকে দ্রুত শনাক্ত করা হোক, আনজুমের হত্যাকারীকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে, ইত্যাদি দাবিতে তারা সোচ্চার হন। পরে শ্রীপুর বাজারে এক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘আমরা আজ এক গভীর শোকের ঘটনায় একত্র হয়েছি। আমাদের এলাকার বাসিন্দা আব্দুল খালিকের মেয়ে নাসিফা জান্নাত আনজুমকে কে বা কারা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। তার বাবার কান্না আমাদের হৃদয়ে গভীর আঘাত হেনেছে। আমরা চাই, এই জঘন্য ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা হোক।’

নিহত শিক্ষার্থীর পিতা আব্দুল খালিক বলেন, আমার মেয়ে খুবই মেধাবী ছিল। আমার মেয়েকে অপহরণ করে হত্যা করে লাশ বাড়ির পাশে খালে ফেলে রাখা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, ১৪ জুন শনিবার বিকেলে নাসিফা জান্নাত আনজুমের বাড়ির পাশে একটি খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকালে নাসিফা জান্নাত স্থানীয় কোচিং সেন্টারে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে আর বাসায় ফিরে আসেনি। নিখোঁজের পর সব জায়গায় খোঁজ করে না পেয়ে নাসিফার মা নাসিমা আক্তার লাকি শুক্রবার কুলাউড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

নাসিফা জান্নাত উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খালিকের মেয়ে এবং স্থানীয় শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকাল ৫ টার দিকে বাড়ির পাশে খালে শিক্ষার্থী নাসিফা জান্নাত আনজুমের লাশ ভাসতে দেখতে দেখে কুলাউড়া থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। স্থানীয়দের ধারণা, অন্য কোন জায়গায় তাকে হত্যা করে লাশ হয়তো বা কেউ খালে ফেলে রেখেছে।

মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম অ্যান্ড অবস নোবেল চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজমল হোসেন, কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. গোলাম আপছার, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হাবিবুর রহমান, পুলিশ, পিবিআই লোকজন রোববার ১৫ জুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এদিকে পুলিশ শনিবার রাতে ও রোববার দিনভর এলাকায় তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করে কোন ক্লু উদঘাটন করতে সক্ষম হয়নি। কেন এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে? কারা এর সাথে জড়িত? প্রেম ঘটিত বিষয় না পারিবারিক দ্বন্ধে আনজুমকে হত্যা করা হয়েছে? প্রেমঘটিত কারণে নাকি পারিবারিক কলহের কারণে হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়েছে পুলিশ এই দুটি বিষয় খতিয়ে দেখছে।

কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আপছার বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি একটি হত্যাকান্ড। বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে জড়িতদের চিহ্নিত করতে পুলিশ কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, উদ্ধারকালে লাশটা ছিলো অর্ধগলিত। সুরতহালে শরীরে আঘাতের চিহ্ন কিংবা ধর্ষণের কোন আলামত শনাক্ত করা যায়নি। শরীরে পানি দিলে চামড়া উঠে যাওয়ার উপক্রম হয়। ১৫ জুন রোববার সকালে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, নিহত আনজুমের মা নাসিমা আক্তার লাকি বাদি হয়ে কুলাউড়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীর একটি হত্যা মামলা (নং ১৩ তারিখ ১৫/০৬/২৫) দায়ের করেন।


 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট