আমাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা আছে, ওনি সামরিক চুক্তি করবেন না : জাফরুল্লাহ

প্রকাশিত: ১২:১৯ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৬, ২০১৭

আমাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা আছে, ওনি সামরিক চুক্তি করবেন না : জাফরুল্লাহ

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে কোনো সামরিক চু্ক্তি হবে না উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী এতো বোকা নন, ওনার প্রজ্ঞা আছে। ওনি সামরিক চুক্তি করবেন না।

প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ভারতের এই সফরে তিনি একটা চুক্তি করে আসুক যে, ভারত আর সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে মানুষ মারবে না।

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ওয়াটার ডিসপিউট’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে সাউথ এশিয়া ইয়ুথ ফর পিস অ্যন্ড প্রোসপ্রারিটি সোসাইটি নামে একটি সংগঠন।

বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর সৃষ্টি দাবি করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, তারা এখন বাংলাদেশে জঙ্গি খেলা চালিয়ে যাচ্ছে। মরে লাখে লাখে, শেষে দেখা যায় ওই আস্তানায় দুই জঙ্গি শিশু মরে আছে। এসব ভারতীয় ‘র’ এর প্ররোচনায় হচ্ছে। শেখ হাসিনাকে ১৯ সালের নির্বাচনে জিতিয়ে দিতেই যা খুশি তাই করাচ্ছে তারা।

বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যে পণ্য পরিবহনের সুযোগ দেয়া হলে বাংলাদেশে এইডস ও হেপাটাইটিসের প্রকোপ হবে দাবি করে ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সড়কগুলো ভারতের ভারী ট্রাক বহনের জন্য উপযোগী নয়।

তিনি বলেন, ভারতকে ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর বাংলাদেশ সফরে এ নিয়ে একটি ঘোষণা আশা করেছিল দেশটি। তবে হতাশ হতে হয় ভারতকে।

ভারতের কট্টর এই সমালোচক বলেন, ভারত তার পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে চায়। এই নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে অনেক আলোচনাও হয়েছে। তবে এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি আর এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি হয়নি।

তিনি বলেন, তবে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারতের পূর্বাংশে বিশেষ ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মালামাল পরিবহন হয়েছে। বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সরকার ভারতকে ট্রানজিট দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, তবে গত ৫ মার্চ সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, কোনো দেশকে ট্রানজিট দেয়া হয়নি।

অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (পিআইডব্লিউটিটি) আওতায় ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধায় ভারত হতে পণ্য পরিবাহিত হয়। কিন্তু একে ট্রানজিট বলা যাবে না কোনোভাবে। চার দেশীয় যান চলাচল চুক্তির আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে এসব ট্রাক গেছে। আর বাংলাদেশের অবকাঠামো ব্যবহার করতে দেয়ার জন্য মাশুলও নিয়েছে বাংলাদেশ।

ট্রানজিট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান তুলে ধরে রাজনৈতিক এই বিশ্লেষক বলেন, বাংলাদেশে ট্রানজিট নিয়ে আলোচনা যতটা না অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে হয়, তার চেয়ে বেশি হয় রাজনৈতিক দিক থেকে। বিএনপিসহ মধ্য ডানপন্থী দলগুলো ভারতকে এই সুবিধা দেয়ার কট্টর বিরোধী ছিল এক দশক আগেও। তাদের দাবি ছিল, ভারতকে ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট হবে।

তিনি বলেন, তবে ইদানীং তারা আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে বিএনপি নেতারা অর্থনৈতিক লাভ লোকসানের হিসাবের কথা বলছেন। ভারত বাংলাদেশকে কত টাকা দেবে-সেই প্রশ্ন তুলছেন তারা।

ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন অভিন্ন নদী থেকে ভারতের পানি প্রত্যাহারের সমালোচনা করে বিএনপিপন্থী এই বুদ্ধিজীবী বলেন, পানির প্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করা অমানবিক কাজ। ভারত এই কাজ করে মানবতাবিরোধী কাজ করছে। যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে তাদের সঙ্গে আবার কীভাবে এই সব চুক্তি হয়?

ভারত একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র।কাশ্মিরে এখন যা চলছে, ৭১ সালে বাংলাদেশেও তাই চলেছিল। এই অবস্থায় সমস্ত দেশবাসীকে এক জায়গায় না নিয়ে আসলে ভারতের কাছে নতজানু হয়ে থাকতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠক।