আদীবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শাবিতে বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ৭:৩৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫

আদীবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শাবিতে বিক্ষোভ

পাঠ্যবই থেকে আদীবাসী সম্মিলিত গ্রাফিতি সরানোর প্রতিবাদে আদীবাসী ছাত্রজনতার পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ কর্তৃক হামলার প্রতিবাদে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বেলা দেড়টায় গোলচত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্ট সাস্ট’। মিছিলটি ক্যাম্পাস ঘুরে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘অদিবাসিদের উপর হামলা কেন, ইন্টেরিম জবাব চায়’, ‘পাহাড় থেকে সমতলে, লড়াই হবে সমানতলে’, ‘হাসিনা গেছে যেই পথে, সন্ত্রাসী যাবে সেই’, ‘হামলা করে অন্দোলন বন্ধ করা যাবে না,’ ‘জাতিগত/ সাম্প্রদায়িক বিভাজন, রুখে দাও জনগণ’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত ঝরে, ইন্টেরিম কি করে,’ ‘বাঙালিত্বের ক্ষমতা ভেঙ্গে করো সমতা’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্ট সাস্ট’র সাধারণ সম্পাদক ও পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের (২০১৯-২০) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুধীর খীসারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. হিমাদ্রি শেখর রায়।

তিনি বলেন, ‘এদেশে যারা বসবাস করে তারা সবাই বাংলাদেশি, এই পরিচয় নিয়ে সবাইকে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে দিতে হবে। গতকাল আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এ ধরণের নেক্কারজনক ঘটনা ভবিষ্যতে আর দেখতে চাইনা। এ দেশে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে আমরা নিরাপত্তার সাথে থাকতে চাই।’ এ সময় হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সঠিক তদন্তের আহ্বান জানান তিনি।

হামলার নিন্দা জানিয়ে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী তুখোড় মিলিনিয়াম আরেং বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে সকলের মতামতকে সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। গতকাল আমাদের ভাইদেরকে পুলিশের উপস্থিতিতে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে হামলা করা হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করুন না হলে আমরা ভাবো বৈষম্যহীন বাংলাদেশ শুধু সংখ্যাগুরুদের জন্য।

এদিকে বুধবার রাতে ‘বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীবৃন্দ শাবিপ্রবি’র ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশে বাংলা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী কৌশিক চাকমা বলেন, ‘ঘটনার সূত্রপাত শুধু আজ নয়। ঘটনার পাহাড় থেকে শুরু। যেকোনো সরকারের আমলে আমাদের সংস্কৃতি আমরা প্রকাশ করতে পারিনি, আমাদেরকে মূলা ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ২৪ এ পাহাড় থেকে সমতলে আমরা সমানতালে আন্দোলন করেছি। আমাদের আন্দোলনের ফলাফল হচ্ছে বর্তমান সরকার। এনসিটিবে অভিমুখে যাওয়া সংক্ষুব্ধ ছাত্রজনতার হামলার উপযুক্ত বিচার করতে হবে।’

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেরাব সাদাত বলেন, ‘একাত্তর পরবর্তী সময়ে সাম্য, সমতা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে দেশ গঠন করার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে বলা হলো আমরা সবাই বাঙালি। কিন্তু আমরা জানি সবাই বাঙালি না। এখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ রয়েছে। কিন্তু তাঁদের স্বীকৃতি দেয়নি। তেমনি আমরা দেখতে পাঠবইয়ের সেই গ্রাফিতি মুছে ফেলা হয়েছে। এটার প্রতিবাদে যারা আন্দোলন করছিল তাদের ওপরও হামলা হয়েছে। উগ্রবাদীরা সংঘবদ্ধভাবে অনলাইন ও অফলাইনে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

মেহেরাব সাদাত বলেন, ‘২৪ এর জায়গায় যে ইউনিটি ছিল এটা ভাঙন দেওয়া যাবেনা। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, উগ্র জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। ছাত্রলীগ যে ধারায় বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে হামলা করত, স্টুডেন্ট সবরেন্টিও একই ধারায় কাজ করেছে। তাদের মদদ দাতাদের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে। কোনো গণতান্ত্রিক কার্যক্রমে হামলা যেন না হয় অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।’

প্রসঙ্গত, বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রবেশ এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী অখণ্ড ভারতের কল্পিত গ্রাফিতি সংযোজনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তিসহ ৫ দফা দাবিতে বুধবার সকালে এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করে ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ নামের একটি সংগঠন।

অন্যদিকে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর একদল মানুষ পাঠ্যবইয়ে গ্রাফিতিটি পুনর্বহালের দাবিতে এনসিটিবির সামনে কর্মসূচি পালন করতে যায়। পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দসংবলিত গ্রাফিতি রাখা ও না রাখা নিয়ে দুই পক্ষের এই বিক্ষোভ কর্মসূচির চলাকালে হাতাহাতি ও হামলার ঘটনায় অনেকে আহত হন।


 

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট