কোটা সংস্কার আন্দোলন মধ্যরাতে বিক্ষোভে উত্তাল ঢাবি জবি শেকৃবি শাবি

প্রকাশিত: ২:০৮ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলন মধ্যরাতে বিক্ষোভে উত্তাল ঢাবি জবি শেকৃবি শাবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে রবিবার (১৪ জুলাই) রাতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ক্যাম্পাস। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা হল থেকে বেরিয়ে আসেন এবং স্লোগান দিতে থাকেন। এদিকে মেয়েদের বেশ কয়েকটি হলের শিক্ষার্থীরাও অনুরূপ স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে মেয়েদের হলের শিক্ষার্থীরা হল গেটের তালা ভেঙে স্লোগান দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রসংলগ্ন (টিএসসি) সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জমায়েত হন। ছেলেদের হলগুলোর শিক্ষার্থীরাও স্লোগান আর মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হন। এদিকে রবিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পাঁচ নেতা পদত্যাগ করেছেন।


ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তারা পদত্যাগের খবর জানিয়েছেন। তারা হলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক মাছুম শাহরিয়ার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা উপসম্পাদক রাতুল আহমেদ শ্রাবণ, কবি জসীমউদ্‌দীন হল ছাত্রলীগের দুই নেতা রাসেল হোসেন, রাফিউল ইসলাম রাফি ও আইন অনুষদ ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আশিকুর রহমান জীম।

ফেসবুকে মাছুম লিখেছেন, ‘জীবনে অনেক পাপ করছি। পাপের বোঝা বয়ে নিয়েও চলেছি। কিন্তু রাজাকার হয়ে ছাত্রলীগ করার পাপ বয়ে নিয়ে যেতে চাই না। আমি, মাছুম শাহরিয়ার, সামাজিক অনুষদ ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করছি।

এদিকে রাজু ভাস্কর্যে আসতে বেশ কয়েকটি হলে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। তবে শিক্ষার্থীরা সেই বাধা উপেক্ষা করে টিএসসিতে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় ‘তুমি কে আমি কে- রাজাকার রাজাকার’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

একইভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। রাত পৌনে ১২টার দিকে মেয়েরা হল থেকে ও আশপাশের মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে জড়ো হন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘রাজাকার আসছে রাজপথ কাঁপছে’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘ঢাবিতে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা এরপর মিছিল নিয়ে তাঁতীবাজার মোড়ে এসে অবস্থান নেন। সেখানে তারা বিভিন্ন স্লোগানসহ বিক্ষোভ করতে থাকেন।

স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল শেকৃবি

স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও (শেকৃবি)। রবিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে একত্রিত হয়ে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘আমি কে তুমি কে? রাজাকার, রাজাকার’, ‘চাইলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ স্লোগান দিতে থাকেন। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। স্লোগান নিয়ে মিছিলটি শেখ লুৎফর রহমান হল থেকে শুরু করে শেরেবাংলা হল, নবাব সিরাজউদ্দৌলা হল, টিএসসি, কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল এবং প্রশাসনিক ভবন পার হয়ে সাহেরা খাতুন হল, কৃষকরত্ন শেখ হাসিনা হল এবং উপাচার্যের বাংলোর সামনে দিয়ে আবার লুৎফর রহমান হলে এসে শেষ হয়।

এদিকে রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেটে জড়ো হতে থাকেন এবং ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় রাজাকারের ঠাঁই নাই’, ‘একটা একটা রাজাকার ধর, ধরে ধরে জবাই কর’, ‘ধরি ধরি ধরি না, ধরলে মোরা ছাড়ি না’ স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তারা লুৎফর রহমান হলের ভেতরে ঢুকে স্লোগান দিতে থাকলে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’ বলতে থাকেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ককে মারধর

চলমান কোটা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদকে ছাত্রলীগ মারধর করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ আন্দোলনের অন্যতম সহ-সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেন, ‘বিজয় একাত্তর হলগেট আটকে রাখায় সেখানে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ ভাইয়ের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ।’ অবশ্য এ অভিযোগের ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে।

রাত দেড়টায় এই রিপোর্ট লেখার সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ করে স্থান ত্যাগ করেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অনেকেই বিক্ষোভ স্থলে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে রবিবার রাতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। একই সময়ে শাবির ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরাও বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী আহত হন। তাকে নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালে যেতে চাইলে ছাত্রলীগ কর্মীরা বাধা দেন বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে রবিবার রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও (রাবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বলে জানা গেছে।


 

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট