সুনামগঞ্জে চেলা নদীর পাড় কেটে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব

প্রকাশিত: ১০:৩১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৪, ২০২৫

সুনামগঞ্জে চেলা নদীর পাড় কেটে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব

Manual8 Ad Code

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলাধীন নরসিংপুর ইউনিয়নের চেলা নদীর পাড় কেটে চলছে বালু লুটপাটের মহোৎসব। এতে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে, আশপাশের এলাকার বসতঘর, ফসলি জসি ও চলাচলের সড়ক। ইজারার দোহাই দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র কর্তৃক বালু লুটপাটের এই কান্ডে ইতোমধ্যে নদীর পাড়ের অর্ধশত বসতঘর নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

Manual7 Ad Code

জানা গেছে, বালু তোলার জন্য চেলা নদী ইজারা দিয়ে জেলা প্রশাসন প্রতিবছর প্রায় কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে। তবে সেই প্রশাসনের একটি মহলকেই হাতে নিয়ে নদীর ইজারাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলন করে আসছে। আর বালু লুটপাটের এই মহোৎসব চলছে দিন-রাত সমান তালে। চক্রটি সারপিনপাড়া, পূর্বচাইরগাঁও, পূর্বসোনাপুর এলাকার পাড় কেটে বালু লুট করে নিচ্ছে। ইজারার নিয়মনীতি অনুযায়ী নদীর পাড় হতে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বালু উত্তোলনের নির্দেশনা থাকলেও ইজারদার কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না। বিকেল ৪ টা পর্যন্ত বালু উত্তোলনের সময় সীমা থাকলেও রাতের বেলায় বেশি বালু লুটপাট হচ্ছে এমন কিছু ভিডিও চিত্র প্রতিবেদকের হাতে সংগ্রহ আছে।


Manual8 Ad Code


এতে বিলীন হচ্ছে রাস্তাঘাট, মানুষের পাঁকা,কাঁচা  ঘরবাড়ি ও সরকারি জমি। পাড় কেটে বালু উত্তোলন করায় ইতোমধ্যে চেলানদীর তীরের এই ৬  গ্রাম সারপিনপাড়া, পূর্বচাইরগাঁও, সোনাপুর, রহিমের পাড়া, পূর্বসোনাপুর, নাছিমপুর এলাকার অনেক পতিত জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। নদীর পানি শুঁকিয়ে গেলে নদীর মাঝে কোথাও স্তূপের মতো জেগে উঠেছে। গ্রামগুলোর শেষ সীমানায় বর্তমানে পাকা বসতঘরের অংশ নদীতে পড়ে রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীর পাড় কাটা এসব বালু উত্তোলনের সঙ্গে ইজারাদার, রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রশাসনের লোকজন জড়িত।

Manual7 Ad Code

নদীর তীরের বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক বছর ধরেই ইজারার দোহাই দিয়ে একসময়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের ভরপুর সোনালী চেলা নদীর তীরে পরিবেশ ধ্বংসের তাণ্ডব চলেছে বেপরোয়াভাবে। নদীর অব্যাহত ভাঙনে ইতোমধ্যে সারপিনপাড়া, পূর্বচাইরগাঁও,সোনাপুর, নাছিমপুর, রহিমের পাড়া ও পূর্বসোনাপুর গ্রামের শতাধিক বসতভিটা ও কয়েকশতক একর ফসলি জমি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

Manual6 Ad Code

স্থানীয়রা আরো জানান, একটি বড় গ্রুপ সেখানে থেকে বিজিবিকে ম্যানেজ করে বালু তোলায় সব নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বিভিন্ন দলের তথাকথিত নেতাদের নাম ভাঙিয়ে এসব করা হয়েছে। নদীর পাড় কেটে অন্তত ১০-১৫ জন কোটিপতি হয়েছে। অভিযোগ ও প্রতিবাদ করে কোনো বিচার পাওয়া যায়নি। উল্টো হামলা ও মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা ও  ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) এক নেতা  বলেন, ‘স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তিদের হাতে নিয়েই রমরমা চলছে চেলা নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। স্থানীয় প্রশাসন ও এর সাথে জড়িত।’

নদীর তীর কাটা অব্যাহত থাকায় নদীর গতিপথ ইতোমধ্যে অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। নদী হতে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে এর রূপ আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

দোয়ারাবাজার উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল হক নমু বলেন, ‘প্রাকৃতিক সুন্দর্য্যে ভরপুর চেলানদী এক সময় মানুষের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র ছিল। সনাতন পদ্ধতিতে হাতের বেলচা দিয়ে বালু তুললে বহু বছর কাজ করা যেত। সব নিয়ম উপেক্ষা করে লুটপাট করেছে এলাকার লেবাসধারী একটি চক্র। একসময়ে এই নদীতে মানুষ বেড়াতে আসতো। আর  এখন দেখলেই ভয়ে-আতংকে উঠে।  গত কয়েক বছর ধরে, ইজারার দোহাই দিয়ে চলছে চেলা নদীর বালু লুটের এই কাণ্ড।’

তিনি জানান,ইজারাদারের প্রতি আমাদের কোন আপত্তি নেই, এলাকাবাসীর  আপত্তি হচ্ছে ইজারাদার যেনো কারো প্ররোচনায় পড়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করে এলাকার ক্ষতি না করেন।

তিনি আরো জানান, বিগত কিছুদিন আগে একটি চক্রের যোগসাজশে ইজারাদার চেলা নদীতে ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলনের পায়তারা করেছিলো। কিন্তু স্থানীয়রা,ড্রেজার আগুনে পুড়িয়ে দেওয়াসহ তা প্রতিরোধ করেছে। এলাকাবাসীর ক্ষতি হয় ইজারাদার যেনো এমন কাজ  না করে। আমাদের দাবী উনারা উনাদের নিয়মের ভিতরে থাকুক।

এ বিষয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুপ রতন সিংহ বলেন, ‘সীমান্ত অতিক্রমকারী কয়েকটি নৌকা ইতোপূর্বে  জব্দ করা হয়েছে। বিজিবিকে টহল জোরদারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’


এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code