বিশ্লেষণ : যে কারণে আওয়ামী লীগ এখনো ক্ষমতায়

প্রকাশিত: ১:১১ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৬, ২০১৭

দেশে ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন করার পরবর্তী তিন বছরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার অবস্থান সংহত করেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

তারা বলেছেন, এমন অবস্থান তৈরির ক্ষেত্রে নেতৃত্বের কৌশল মুল ভূমিকা রেখেছে। তবে এখনকার বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটসহ অনেকগুলো বিষয় সরকারের জন্য সহায়ক হয়েছে বলে তারা বলছেন।

পাঁচই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন করার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেই এক ধরণের অস্বস্তি ছিল। সেই সরকারের লম্বা সময় টিকে থাকার প্রশ্নেও তাদের অনেকের মধ্যে সংশয় ছিল। কিন্তু তিন বছরে আওয়ামী লীগ একটা শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। এর পিছনে নেতৃত্বের কৌশলকে বড় করে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ইতিবাচক একটা শক্তি হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পেরেছে।

‘আওয়ামী লীগের একটা বড় কৌশল ছিল দেশের রাজনীতিতে কয়েকটা বিষয়কে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। সেগুলো হচ্ছে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রাজনীতি। আর যুদ্ধাপরাধী এবং জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের বিরুদ্ধে রাজনীতি। এই রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ নিজেদের ইতিবাচক একটা শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতে পেরেছে এবং নেতিবাচক শক্তি হিসেবে বিএনপিকে সমালোচিত করতে পেরেছে।’

আসিফ নজরুল আরো বলেছেন, আওয়ামী লীগ সমাজের বিভিন্ন স্তরে একটা সুবিধাবাদী শ্রেণী তৈরি করতে পেরেছে। একইসাথে আওয়ামী লীগ দৃশ্যমানভাবে কিছু উন্নয়ন কাজ করতে পেরেছে। এগুলোও আওয়ামী লীগের পক্ষে গেছে।

পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করতে না পারায় দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিএনপির মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছিল। সহিংস আন্দোলনও সমালোচনায় ফেলেছিল বিএনপিকে। দলটিতে সাংগঠনিক দুর্বলতা এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ কৌশলে এগিয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এম. এম. আকাশ।

“বিএনপির হিসেবে ভুল ছিল। তারা ভেবেছিল, বল প্রয়োগ করে তাণ্ডব চালিয়ে নির্বাচন ঠেকাতে পারবে। সেটা সঠিক ছিল না। অন্যদিকে, মৌলবাদ-সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে হাসিনা ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন তার পক্ষে পেয়েছিলেন।

এছাড়া শেখ হাসিনা সবসময় বলেছেন যে, তিনি তো গণতন্ত্র দিতেই চান। কিন্তু তার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে এবং পরে তিনি অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র দেবেন। সুতরাং শেখ হাসিনা একটা বেনিফিট অব ডাউট বিএনপির মনের মধ্যে রাখতে পেরেছিলেন।”

অধ্যাপক আকাশ উল্লেখ করেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিল। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, অর্থনীতিতে মন্দা হয়নি। মুদ্রাস্ফীতি কম ছিল। প্রবৃদ্ধিও সবসময় ৬.৫ শতাংশের বেশি ছিল।

এম. এম. আকাশ এটাও মনে করেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে জামায়াত এবং উগ্রপন্থী কয়েকটি দল থাকায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা প্রথমে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। সেই উগ্রপন্থী ইস্যুতেই আওয়ামী লীগ পশ্চিমাদের কাছেও অবস্থান করে নিয়েছে। আসিফ নজরুল মনে করেন, উগ্রপন্থার ইস্যু নিয়েই বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপট এখন পরিবর্তন হয়েছে এবং সেটা আওয়ামী লীগের জন্য সহায়ক হয়েছে।

“এখন বিশ্ব রাজনীতিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বা গণতন্ত্র রপ্তানির চেয়ে সন্ত্রাস মোকাবেলা, জঙ্গি মোকাবেলা বা ইসলামী জঙ্গিবাদ মোকাবেলার এজেন্ডা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তিত ফোকাসটা আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য সুবিধাজনক হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ. টি. ইমাম ব্যাখ্যা করছেন ভিন্নভাবে। সরকারের সুবিধাজনক অবস্থানের পেছনে স্থির লক্ষ্যে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে এগুনোর কথা তিনি তুলে ধরেন।

“একদিকে বিএনপির সহিংস আন্দোলন, ৯০ দিনের টানা অগ্নি সন্ত্রাস বন্ধ করা অন্যদিকে জঙ্গিদের উত্থান ঠেকানো, এসবই একসাথে করতে হয়েছে। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ উন্নয়নমূলক কাজগুলোতেও জনগণের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। সেকারণেই সরকারের প্রতি মানুষের বিশ্বাস জন্মেছে।”

তবে গত বছরে জঙ্গি হামলার ঘটনাগুলো এবং হিন্দুদের ওপর আক্রমণসহ নেতিবাচক কিছু বিষয় আওয়ামী লীগকে সমালোচনার মুখে ফেলেছে। অন্যদিকে, সব দলের অংশ গ্রহণে একটা নির্বাচনের প্রশ্ন রয়ে গেছে। সেটাই আওয়ামী লীগের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন এম এম আকাশ।

“অংশগ্রহণমূলক একটা নির্বাচন করতেই হবে। তাকে এই পরীক্ষায় জিততে হবে যে, বিএনপির জোটের চেয়ে আওয়ামী লীগের জোট বেশি জনপ্রিয়। এটা যতদিন প্রমাণ করতে না পারবে, লোকে ভাববে যে আওয়ামী লীগ কৌশলে ধূর্ততার সঙ্গে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। এটা প্রকৃত বিজয় নয়।”

আওয়ামী লীগও সব দলের অংশ গ্রহণে আগামী সংসদ নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই সেই নির্বাচন করার পক্ষেই শেষ পর্যন্ত দলটির অবস্থান থাকবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

সূত্র : বিবিসি

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট