ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইরান

প্রকাশিত: ৭:৪৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৪, ২০২৪

ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইরান

সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের একটি কনস্যুলার ভবনে বিমান হামলায় দুই জেনারেলসহ রেভল্যুশনারি গার্ডের সাত সদস্য নিহত হয়। এই হামলার জন্য ইরান ইসরায়েলকে দায়ী করে প্রতিশোধ নেওয়া শুরু করেছে। এই প্রতিশোধের শুরুতেই ইরান ২০০টির বেশি ড্রোন-মিসাইল ছুড়েছে ইসরায়েলে। এই প্রথম শনিবার (১৩ এপ্রিল) রাতে তেহরান সরাসরি ইসরায়েলের ভূখণ্ডে একের পর এক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো।

বিবিসি জানায়, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ইরান ২০০টিরও বেশি ড্রোন, ক্রুজ মিসাইল এবং ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুড়েছে।

তবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং এই অঞ্চলের মিত্ররা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনগুলোর বড় অংশকে প্রতিরোধ করতে পেরেছে, কয়েক ডজন ড্রোন ও মিসাইল ইসরায়েলি ভূখণ্ডের বাইরেই গুলি করে নামানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

ইরান, লেবানন ও ইয়েমেনের ত্রিমুখী এই হামলা চালায় ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড (আইআরজিসি), লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী।

ত্রিমুখী এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে সাইরেন বেজে ওঠে ইসরায়েলের রাজধানী জেরুজালেম ও উত্তরাংশে। ভূখণ্ডের দিকে ধেয়ে আসা শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে দেশটির বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ইসরায়েলের নিরাপত্তায় তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র আটকেও দিয়েছে তারা।

ইতোমধ্যে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি ফুটেজ থেকে ইসরায়েলের রাতের আকাশে দেখা মেলে আলোর ঝলকানির। পাশাপাশি বিস্ফোরণের শব্দও পাওয়া যায়।

যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইসরায়েলের দিকে ধেয়ে আসা কিছু ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করেছে তারা। তবে কোথায়, কীভাবে এসব ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে, সেসব তথ্য এখনও জানা যায়নি।

এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা ইরনা বলছে, তেহরান ইসরায়েলের দিকে প্রথম দফায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। দেশটির রাজধানী জেরুজালেমের একাধিক লক্ষ্যবস্তু টার্গেট করে এসব ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী বিশদভাবে কিছু না জানালেও দেশটির আর্মি রেডিওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শতাধিক ড্রোন ইসরায়েলের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সহায়তায় আটকে দেওয়া হয়েছে।

আরেক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, মার্কিন সামরিক বাহিনী ইসরায়েলের দিকে আসতে থাকা ইরানি বেশ কয়েকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে ঠিক কোথায় কতগুলো ড্রোন আটকে দেওয়া হয়েছে, তা জানা যায়নি।

ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ বলছে, শনিবার রাতের এ হামলা ও বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্ক বিরাজ করছে ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে। তবে হামলা ঠেকাতে এই মূহুর্তে তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোদমে কাজ করছে। যেকোনো ধরণের পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

এদিকে হোয়াইট হাউজও বলছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় মার্কিন নিরাপত্তা টিমের সদস্যরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে। পাশাপাশি অন্য মিত্র রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ১৩ জনকে হত্যা করে ইসরায়েল। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) ৭ জন সদস্য রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আইআরজিসির বিদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী ইউনিট কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিও রয়েছেন। তিনি সিরিয়া ও লেবাননে কুদস ফোর্সের কার্যক্রম পরিচালনার নেতৃত্বে ছিলেন।

এই হত্যাকাণ্ডের বদলা নিতে ইসরায়েলে হামলা চালানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল ইরান। এ নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া নাগরিকদের ইসরায়েল ভ্রমণের বিষয়ে সতর্ক করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ইসরায়েলে অবস্থানরত দেশটির কূটনীতিক এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের তেল আবিব, জেরুজালেম ও বিরশেবা এলাকার বাইরে যাতায়াত নিষিদ্ধ করে।

ইরানের হুমকির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলকে ‘লৌহবর্মের’ মতো সহায়তা দিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।


 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট