সিলেটে কোরআন পুড়ানোর অভিযোগে দুই মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: ৫:০০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৭, ২০২৩

সিলেটে কোরআন পুড়ানোর অভিযোগে দুই মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেপ্তার

সিলেট নগরীর আখালিয়ার ধানুহাটারপাড়াস্থ এলাকায় ৪৫টি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন পোড়ানোর অভিযোগে দুই মাদ্রাসা শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

রোববার (৬ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে এ ঘটনা ঘটে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সিলেট আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান নুরুর রহমান (৫০)। তিনি গোলাপগঞ্জের বসন্তপুর গ্রামের মৃত ফজুর রহমানের ছেলে, বর্তমানে তিনি কোতোয়ালি থানাধীন তপুবন এলাকার সরু মিয়ার বাসায় বসবাস করে আসছেন। এছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানাধীন বাউলাপাড়া এলাকার ইদ্রিস আলীর ছেলে মাহবুব আলমকে (৪৫) গ্রেফতার করা হয়। মাহবুব বর্তমানে কোতোয়ালি থানাধীন ধানুহাটারপাড় এলাকায় থাকেন।

পুলিশ জানিয়েছে- রবিবার বিকালে সিলেটের জালালাবাদ থানাধীন ফতেহপুর মাদ্রাসার শিক্ষক ইসহাক আহমদ এক কার্টুন ও এক বস্তা ভর্তি কোরআন শরিফ দিয়ে যান নুরুর রহমানের কাছে। এসময় তিন কার্টুনের কোরআন শরিফ ছাত্রদের মাঝে বিতরণ ও বস্তার কুরআন শরিফ পুড়িয়ে ফেলতে বলেন।

রবিবার রাত ১০টার দিকে নুরুর রহমান ও মাহবুব আলম বস্তার ৪৫টি কোরআন শরিফ কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে শুরু করেন। এসময় স্থানীয় লোকজন দেখে ফেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং এ দুজনকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ওই এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং জনতার হাত থেকে নুরুর ও মাহবুবকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেয়। এসময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের দিকে ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকেন। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয় এসময়। আহত পুলিশ সদস্যরা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও শর্টগান ব্যবহার করে পুলিশ। পরে রাত ২টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোতোয়ালি থান, জালালাবাদ থানা, সিআরটি ও গোয়েন্দা পুলিশের ৫ শতাধিক সদস্য কাজ করেন। এছাড়া পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব-৯ এর একটি টিমও কাজ করে।

পুলিশ আরও জানায়, অভিযুক্ত নুরুর রহমান ও মাহবুব আলম ছাত্রজীবনে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। নুরুর রহমান কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন। তিনি বর্তমানে জৈন্তাপুর মাদ্রাসার ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক। পাশাপাশি আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

নুরুর রহমানকে বস্তায় করে কুরআন শরিফ দেওয়া ইসহাক সিলেট বেতারের ক্বারি ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের খন্ডকালীন শিক্ষক বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী জানান, কোরআন শরীফ পুড়ানোর অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে ২জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সাথে পুলিশ পুড়ানো কোরআন শরীফ উদ্ধার করেছে। সেই সাথে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

গ্রেফতার দুজন প্রাথমিকভাবে পবিত্র কুরআন শরিফ পুড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন আজবাহার আলী শেখ (পিপিএম)।

তিনি জানান, ঘটনার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ওই স্থানে যাই এবং পরিস্থিতি শান্ত করে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। গ্রেফতার দুজন পবিত্র কুরআন শরিফ পুড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানান, পুলিশ অভিযান চালিয়ে কোরআন শরীফ পুড়ানোর ঘটনায় ২জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এসময় উত্তেজিত জনতার হামলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

এদিকে নগরের আখালিয়া এলাকার ধানুহাটারপাড়স্থ আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ পরিদর্শন করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার মো. ইলিয়াছ শরীফ (বিপিএম-বার, পিপিএম)। সোমবার (৭ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে তিনি এখানে যান। এসময় সঙ্গে ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে এসএমপি কমিশনার বলেন- পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। যাদেরকে আটক করা হয়েছে তারা ছাত্রজীবনে শিবিরের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. ইলিয়াছ শরীফ বলেন- ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করে যারা ঘটনাকে উস্কে দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট