ট্রাম্পের ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে মুসলিম-ইহুদি জোট গঠন

প্রকাশিত: ৫:১২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০১৬

ওয়াশিংটন : ট্রাম্প প্রশাসনের ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষায় বিশিষ্ট আমেরিকান মুসলিম ও ইহুদিদের সমন্বয়ে ওয়াশিংটনে একটি নতুন কাউন্সিল বা জোট গঠন করা হয়েছে।

চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ের প্রাক্কালে নতুন এই জোট গঠন করা হয়। এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এডভোকেসি সংগঠন ‘আমেরিকান ইহুদি কমিটি’ এবং উত্তর আমেরিকার ইসলামিক সোসাইটি।

মুসলিম-ইহুদি সম্পর্কিত আমেরিকান ইহুদি কমিটির পরিচালক রবার্ট সিলভারম্যান বলেন, ‘নির্বাচনের ফলাফলে মুসলিম-ইহুদি উপদেষ্টা পরিষদের কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না।

সিলভারম্যান হাফিংটন পোস্টকে বলেন, ‘আসলে, চলতি বছর জুড়েই এটি গঠনের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এটি মোটেই ট্রাম্পের বিজয়ের কোনো প্রতিক্রিয়া নয়। বরং এটা আমাদের দেশে বিভাজনের একটি প্রতিক্রিয়া।’

কাউন্সিলের উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়েছে দুই ধর্মের ৩০ জন বিশিষ্ঠ নেতাদের সমন্বয়ে। এদের মধ্যে রয়েছেন ধর্মীয় নেতা, ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন পণ্ডিতেরা। কাউন্সিলের কো-চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছেন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ‘হেনরি সেইনের’ সিইও স্ট্যানলি বার্গম্যান এবং ‘ইথান অ্যালেনের’ প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক কাথুয়ারি।

সিলভারম্যান বলেন, ‘এই গ্রুপটিতে মূলত ব্যবসায়ীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গ্রুপটির ফোকাস প্রাথমিকভাবে সংলাপ নয়। এর পরিবর্তে প্রস্তাবনার খসড়া নীতি নিয়ে এটি কাজ করবে।’

কাউন্সিল মনোযোগ দিচ্ছে অভ্যন্তরীন নীতির উন্নয়নে যা এর কংগ্রেসে উত্থাপন করা হয়েছে। গত ৩ নভেম্বর নিউইয়র্ক সিটিতে এর প্রথম পরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সিলভারম্যান বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের এজেন্ডায় উদ্বাস্তু সমস্যা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অভিবাসনের মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে কর্মক্ষেত্রে ধর্মপালনের জন্য যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা থাকার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও হেইট ক্রাইম বা ঘৃণা অপরাধ আইনের উন্নতি।’

তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলের নীতির এজেন্ডা উপস্থাপনের জন্য আসছে ১ ফেব্রুয়ারি ক্যাপিটল হিলে একটি সার্বজনীন সভা আহ্বান করা হয়েছে। কংগ্রেসের সদস্যরা সবাইকে এতে উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।’

আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাপারে সিলভারম্যানের মন্তব্য ‘আমরা খারাপ কিছু অনুমান করতে চাচ্ছি না। আমরা নতুন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে চাই কিন্তু আমরা খুবই সতর্ক থাকব। সেখানে যে কোন ধরনের ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে আমরা এক হয়ে লড়াই করব।’

সিলভারম্যান বলেন, ‘কাউন্সিলের ফোকাস থাকবে ধর্মান্ধতা, যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা এবং আমেরিকান সমাজে উভয় গ্রুপের অবদান হাইলাইট করা। এছাড়াও, আমেরিকান মুসলিম ও ইহুদিদের মধ্যে প্রচলিত কুসংস্কারের মোকাবিলা করা।’

গ্রুপটি ধর্মীয় অধিকার রক্ষা এবং ঘৃণা অপরাধের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী আইন করার বিষয়টি বিবেচনা করছে।

সিলভারম্যান আরো বলেন, ‘ইহুদির ইয়ারমার্ক পরা কিংবা মুসলিমদের হিজাব পরাতে কেউ তার প্রতি অগ্নিমূর্তি হয়ে তার দিকে তেড়ে যাবে কিন্তু তা ঠেকানোর জন্য বর্তমানে নির্দিষ্ট কোন আইন নেই। রাজ্য ও ফেডারেল লেভেলে হেইট ক্রাইম আইন থাকলেও তার প্রয়োগ করা হচ্ছে না।’

কেবল ধর্মের ভিত্তিতে অভিবাসীদের নিষিদ্ধ করার কোনো প্রচেষ্টার বিরোধিতা করা হবে বলেও গ্রুপটির সদস্যরা জানান।

নতুন এই কাউন্সিলের একজন উপদেষ্টা, ইতিহাসবিদ এবং ‘ডিনায়িং দ্যা হলোকাস্ট’ বইয়ের লেখক ডেবোরা ই. লিপস্টুয়াড বলেন, ‘মুসলিম ও ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে এটি বেশ সহায়ক হবে।’

কাউন্সিলের সদস্য এবং ‘উইমেন ইসলামি ইনিশিয়াটিভ এবং ইকুয়িটির’ নির্বাহী পরিচালক ডেইজি খান বলেন, ‘গ্রুপটির মূল লক্ষ্য দুই বিশ্বাসের সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্মান ও সহানুভূতি বৃদ্ধি এবং অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনা  এবং সম্ভাব্য সঙ্কট প্রতিরোধে নিজেদের সমষ্টিগত জ্ঞান ব্যবহার করা।’

‘নুশানতারা ফাউন্ডেশনের’ সভাপতি এবং নতুন কাউন্সিলের সদস্য ইমাম শামসী আলী পুনর্ব্যক্ত করেন যে, গ্রুপটি ট্রাম্পের একটি প্রতিক্রিয়া নয়।  এটি ইহুদি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি শক্তিশালী গঠনমূলক সংলাপ, পুনর্মিলন এবং অংশীদারিত্বের প্রতিশ্রুতির অঙ্গীকার।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সত্যিই বিশ্বাস করি যে, মুসলমান ও ইহুদিদের মধ্যে শেয়ার করার অনেক কিছু আছে।’

হাফিংটন পোস্ট, কোয়ার্টাইজ অবলম্বনে মো. রাহুল আমীন