এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপের টাকা নিয়ে অধ্যক্ষ উধাও!

প্রকাশিত: ৭:২৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৯, ২০১৬

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের ন্যাশনাল পাবলিক স্কুলের পরিচালক ও অধ্যক্ষ। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ফরম ফিলাপ করার জন্য শনিবার সকাল থেকে সন্ধা অবধি ধর্ণা দিয়েও ওই অধ্যক্ষের দেখা পায়নি। এর ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়াটা।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবদের সুত্রে জানা যায়, উপজেলার বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাট-সুনামগঞ্জ সড়কের পাশে দু’চালা টিনের তৈরী মার্কেট ভাড়া নিয়ে ২০১২ সালে সরকারি অনুমোদপ্রাপ্ত প্রচারণা দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে ন্যাশনাল পাবলিক হাই স্কুল। জেএসসি ও পিএসসি পরীক্ষাই দেয়নি এমন শত শত শিক্ষার্থীকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের সুযোগ করে দেয়ার নামে কয়েক’শ শিক্ষার্থীকে শুরুতেই ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে ওই স্কুলে ভর্তি করা হয়। ১ম থেকে ৯ম শ্রেণীতে অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা পাঠদান করার প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞান, মানবিক শাখায় ভর্তি করা হয় ওইসব শিক্ষার্থীদের। এরপর হাইব্রিড পদ্ধতিতে রেজিষ্টেশন ও ফরম ফিলাপের কথা বলে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের সুযোগ দেয়ার নামে প্রতিমাসে ৩’শ টাকা হারে বেতন, ফরম ফিলাপের কথা বলে কারো কারো নিকট থেকে ৭ হাজার আবার কারো কারো নিকট থেকে অতিরক্তি ২৬’শ করে টাকা নেয়া হয়। নির্বাচনী পরীক্ষায় এক বিষয়ে অকৃতকার্য্য শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ফাঁদে ফেলে ওই অধ্যক্ষ ফরম ফিলাপের সুযোগ দেয়ার নামে ১৭ থেকে সর্ব্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জনপ্রতি হাতিয়ে নেন।
এদিকে এ নিয়ে শনিবার সকাল থেকে সন্ধা পর্য্যন্ত স্কুলের প্রবেশদ্বার তালাবদ্ধ দেখতে পায় শিক্ষার্থীরা। উদ্ভিগ্ন অভিভাবক সহ শিক্ষার্থীরা শরনাপন্ন হয় এলাকার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের নিকট। এ নিয়ে বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে এক বৈঠক হলেও বৈঠকে হাজির হননি ওই অধ্যক্ষ, অবশ্য মঠোফোনে অধ্যক্ষ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করলেও এর দায় চাপিয়েছেন অন্য এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ওপর।
ছাত্রী অবিভাবক বাদাঘাট ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য রাশেদা আক্তার শনিবার গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, আমার মেয়ে ২০১৪ সালে জেএসসি পরীক্ষায় এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে ২০১৫ সালে পাস করে, ২০১৬ সালে তার নবম শ্রেণীতে থাকার কথা কিন্তু আমার মেয়েকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের সুযোগ করে দেয়ার কথা বলে কয়েকদিন আগে এককালীন ২০ হাজার টাকা নিয়েছে অধ্যক্ষ। এখন ফরম ফিলাপের সময় উনি উধাও হয়ে গেছেন।,
ছাত্র অভিভাবক তোতা মিয়া বলেন, আমার ছেলে এক বিষয়ে নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয় কিন্তু গত বুধবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন ও ফরম ফিলাপের কথা বলে অধ্যক্ষ ১৭ হাজার টাকা এককালীন নিয়েছেন। আজ শনিবার এসে দেখি স্কুল তালাবদ্ধ, অধ্যক্ষ উধাও।’
ফরম ফিলাপ থেকে বঞ্চিত হওয়া শিক্ষার্থী মোবারক, বায়জিদ, আনোয়ার, লিমন, শারমিন আক্তার রুপা, নুরেছা বেগম জানায়, একই কায়দায় আমাদের প্রত্যেকের নিকট থেকে ফরম ফিলাপের কথা বলে ১৭ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নেন অধ্যক্ষ, কিন্তু কয়েকদিন ধরেই তিনি আজ-কাল-পরশু বলে বলে সময় ক্ষেপন করে শনিবার স্কুল তালা দিয়ে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন।’ তাদের প্রশ্ন একটাই কেন প্রলোভন দেখিয়ে টাকা পয়সা নিয়ে আমাদের জীবনটা বাদ করে দেয়া হল?
এ ব্যাপারে কথিত স্কুলের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের বক্তব্য জানতে সন্ধায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানালেও ওই প্রতিষ্ঠানের সরকারি নিবন্ধন, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সংখ্যাা, ফরম ফিলাপের নামে প্রতারণামুলক অর্থ আত্বসাতের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন রকম সদুক্তর না দিয়ে বারবার প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। ,
তাহিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শ্রী রমা কান্ত দেবনাথ বলেন, হ্যা বাদাঘাটে ন্যাশনাল পাবলিক স্কুল নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে জানি, ওই স্কুলের কোন রকম সরকারি অনুমোদন নেই, এমনকি এ ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে কেউ প্রতারিত হলে বা প্রতারণা করলে তার খোঁজ-খবর নেয়ার দায়-দায়িত্ব মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের নয়।’

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট