১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:১৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৮, ২০১৬
নুরুল হক শিপু : মানুষের ভেতরে মানুষ করিতেছে বিচরণ’ গানটির বাস্তবচিত্র এখন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস। খাদিজা এখন সবার অন্তরেই বিচরণ করছেন। সবার একটাই আকুতি, খাদিজা যেন ফেরেন সুস্থ হয়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের পাতায় পাতায় একটি প্রার্থনা, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা খাদিজাকে যেন সৃষ্টিকর্তা সুস্থ করে ফিরিয়ে দেন তাঁর বাবা-মায়ের বুকে। খাদিজার জন্য সব ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে দাঁড়িয়েছেন সিলেটের রাজনৈতিক নেতারাও। সাংবাদিকদের ফেসবুক পাতায় শুধুই দুআ কামনা, আর কেমন আছেন খাদিজা সেই আপডেট তথ্য। সবার একটাই চাওয়া, তাঁর উপর হামলাকারী বদরুল আলমের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়, জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে থাকা খাদিজা যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন।
গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী বলেন, ‘কোনো ভাষা নেই কি বলব। হতবাক সবাই। তবে বলতে পারি বিচার হলে অপরাধ কমবে। কঠিন বিচার চাই বর্বর হামলাকারী বদরুলের।’
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেছেন, ‘শুধু আমি নই; সিলেট আওয়ামী লীগ পরিবার খাদিজার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। খাদিজার উপর হামলাকারী বদরুল মানুষ নামের নরপিশাচ। তাকে মানুষ হিসেবে স্বীকার করা যায় না। তার পরিচয় কী তা বিবেচ্য বিষয় নয়। আমরা চাই তার দৃষ্টন্তমূলক শাস্তি। জনগনের সহযোগিতায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। সে আদালতে সব দায় স্বীকার করেছে। এখন মামলাটি দ্রুত বিচারে নিয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শাস্তি তাকে দেওয়া হোক।’
সিলেট ও হবিগঞ্জের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেত্রী আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘নিঃশব্দের ভেতরে গর্জে ওঠছে অচেনা ভাষা, চেনা রাক্ষস পুরোনো শিকলে বেঁধেছে বর্তমান।…হাতে শৃঙ্খল, বেড়ি দুই পায়ে, মুখে আটকানো তালা।’ প্রিয় কবি, রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর ‘ঘুমিয়ে পড়েছে সব’ কবিতাটির এ কয়টি লাইন বার বার মনে পড়ছে আজ।’
আরেকটি স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘সিলেটের ঐতিয্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে যখন আগুন ধরিয়ে দেয়া হলো। ছাই হয়ে গেলো প্রাণের ছাত্রাবাস। তখন অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নির্দেশনা ছিল-‘অপরাধী যে বা যারাই হোক, চেহারা দেখার দরকার নেই, দল-পদবি দেখার দরকার নেই। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিন।’ দুঃখজনক হলেও সত্য, তারপরও কিছু ব্যক্তির চেষ্টায়, অপরাধীর ব্যক্তিগত দায় দলের নামের সাথে মিশিয়ে, অপরাধীকে বাঁচাবার চেষ্টা করতে পূর্বেও দেখা গেছে। এতে করে, কিছু ব্যক্তি বিশেষের ফায়দা হলেও হতেও পারে; তবে গণমানুষের মনে, দল-দলের দীর্ঘ ঐতিয্যের পাতায় কালো দাগ পরেছে।’
তিনি লিখেছেন, খাদিজাকে মৃত্যুর সাথে আজ পাঞ্জা লড়তে হচ্ছে। বদরুল খাদিজাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে যে নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে, তা গোটা দেশবাসী বিবেকবানদের বাকরুদ্ধ করে ফেলেছে। কিন্তু বদরুলের মত নরপশু কীভাবে ছাত্রনেতা হলো, সেটাই দেখার বিষয়। যারা নিজ ক্ষমতা মজবুত করতে এসব অযোগ্যদের নেতা বানায়, তাদেরকে এ দায় নিতেই হবে। নিশ্চয় ঐতিহ্যববাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ তা নিবে না।’
‘মানুষের মতো চেহারার ‘নরপশু’ বদরুলরা নারী সমাজের অদম্যকে ঠেকাতে চায়। ‘না’, খাদিজারা থামবে না। থামতে হবে, বদরুলের মতো অমানুষদের। আমরা সবাই মিলে এসব অপরাধীদের অপকর্মকে প্রতিহত করব। সত্যের পাঁশে থাকব। অপরাধী যত ক্ষমতাবানই হোক, তার শাস্তি জনগণকে সাথে নিয়ে, শেখ হাসিনা সরকার নিশ্চিত করবেনই।’
সিলেট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জজ আদালতের সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট এমাদউল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহীন বলেন, যেহেতু হামলাকারী বদরুল আদালতে দায় স্বীকার করেছে; সেহেতু খাদিজার উপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার দ্রুত চার্জশিট আদালতে প্রেরণ করতে হবে। হামলার আলামত জব্দ করতে হবে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি নিয়ে দ্রুত বিচার করতে হবে। তিনি বলেন, অতীতে সিলেটে অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটেতে। সুষ্ঠু বিচার হয়নি। খাদিজার ঘটনায় বিচার হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটাতে কেউই সাহস করবে না।
সুসাশনের জন্য নাগরিক সিলেটের (সুজন) সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এমসি কলেজ ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেয়া হলো, শাবিতে একটি ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করা হলো, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের উপর হামলা করা হলো-একটি ঘটনায়ও বিচার হয়নি। তিনি বলেন, এসব ঘটনায় বিচার হলে আজ বদরুলের মতো একটা নরপশু জেগে ওঠতে পারত না। তাই খাদিজার উপর হামলাকারী বদরুলের এমন শাস্তি হওয়া প্রয়োজন যাতে ভবিষ্যতে আর এরকম ঘটনা না ঘটে।’
সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, ‘খাদিজাকে হত্যার জন্য হামলা করা হয়েছে। এ হামনা বর্বরোচিত এমন হামলা কেন? একবার কঠিন বিচার হোক, এমনটি আর বাংলার মাটিতে ঘটবে বলে মনে হয় না।’
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, ‘খাদিজার উপর হামলাটা অনানুষিক বর্বর হামলা। এ ঘটনায় অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
১৯৯৫ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর খাদিজার জন্ম। তিনি ২১ পেরিয়েছে মাত্র ২২ দিন পা দিলেন। পড়াশোনায়ও মেধাবী মেয়েটি। হাজী সফির উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ থেকে ২০১২ সালে এসএসসিতে ৪.৩১ জিপিএ পয়েন্ট নিয়ে উত্তীর্ণ হন। দু’বছর পর একই প্রতিষ্ঠান থেকে ৩.৭৫ জিপিএ পয়েন্ট এইচএসসি উত্তীর্ণ হন তিনি। তারপর বিএ’তে ভর্তি হয় সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে। সিলেট শহরতলির আউশা গ্রামের বাড়ি থেকেই তিনি কলেজে আসা-যাওয়া করতেন। ক্লাস শেষেই বাড়ি ফিরে আসতেন। কোথাও আড্ডা দেয়া বা থামাথামির অভ্যাস ছিল না তাঁর। সেই মেয়েটিকে গত সোমবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আর ফিরে যাননি। সেদিন পরীক্ষা দিতে এমসি কলেজে গিয়েছিলেন খাদিজা। ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে পরীক্ষা শেষে ফেরার পথে কলেজ ক্যাম্পাসে তাঁর ওপর চাপাতি দিয়ে হামলা চালান শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ও অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র বদরুল আলম। খাদিজার সুস্থ হয়ে ফিরে আসার অপেক্ষায় আছে তাঁর পরিবার। খাদিজা সুস্থ হয়ে ফিরে যাক সে প্রত্যাশা পুরো বাংলাদেশেরও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাতায় পাতায় এখন খাদিজার জন্য শুভ কামনা। শুধু প্রার্থনা, ‘ফিরে আসবেন খাদিজা’।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D