সোমবার জামায়াতের হরতাল

প্রকাশিত: ৩:০৪ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৬

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রতিবাদে সোমবার সারাদেশে আধাবেলা হরতালের ডাক দিয়েছে দলটি।

শনিবার রাতে মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পরে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে এই হরতালের ঘোষণা দেন।

এই বিবৃতিতে ৫ সেপ্টেম্বর হরতালের পাশাপাশি ৪ সেপ্টেম্বর রবিবার মীর কাসেমের শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনায় দেশ-বিদেশে দোয়া দিবসেিও ঘোষণা দেন তিনি।

বিবৃতিতে ডা. শফিকুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘মীর কাসেম আলী সম্পূর্ণ নির্দোষ। সরকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নেতৃত্ব শূন্য করার যে ষড়যন্ত্র করছে তারই অংশ হিসেবে মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুঁলিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘মীর কাসেম আলী ছাত্র জীবন থেকেই এ দেশে কল্যাণধর্মী একটি ইসলামী সমাজ কায়েমের জন্য সংগ্রাম করে গিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। ইসলামী ব্যাংক-বীমাসহ বহু মসজিদ, মাদ্রাসা, বিভিন্ন ইসলামী ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গিয়েছেন।’

জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘বিশেষ করে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নিকট স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে তিনি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ দেশের দরিদ্র মানুষেরা তার কথা আজীবন স্মরণ করবে।’

শুধুমাত্র ইসলামী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কারণেই সরকার তাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে বলেও অভিযোগ করেন শফিকুর রহমান।

বিবৃতিতে তিনি দাবি করেন, ‘মীর কাসেম আলীকে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার মিথ্যা অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। সরকার পক্ষ তার বিরুদ্ধে আনীত কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি। তার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে তার সাথে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’

তিনি বলেন, ‘সরকার পক্ষ তার বিরুদ্ধে যে সব ডকুমেন্ট পেশ করেছেন তাতে কোথাও তার নাম নেই। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে সরকার পক্ষ ঘটনার স্থান, সময় ও তারিখ উল্লেখ করে যে ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেছেন তাতেই প্রমাণিত হয়েছে তিনি ওই সময় ঘটনার স্থল চট্টগ্রামে নয় বরং রাজধানী ঢাকাতেই ছিলেন।’

সরকারের মন্ত্রীরা বিচার প্রক্রিয়ায় অবৈধ হস্তক্ষেপ করেছেন মন্তব্য  জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘চট্টগ্রামে ঘটনার স্থানে তার অনুপস্থিতির প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সরকার পক্ষ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য উপস্থাপন করে এবং দফায় দফায় সরকারের মন্ত্রীরা গোটা বিচার প্রক্রিয়ার ওপরে অবৈধ হস্তক্ষেপ করেছেন। এ সব কিছু মিলে মীর কাসেম আলী সম্পূর্ণভাবে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। আমি সরকারের প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতির তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘সরকার প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে মীর কাসেম আলীকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনা আবারো বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলংকজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। জামায়াতে ইসলামীকে নিশ্চিহ্ন করার হীন উদ্দেশ্যেই সরকার মীর কাসেম আলীসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে একের পর এক ফাঁসি দিয়ে হত্যা করছে।’

মীর কাসেমের প্রতি ফোঁটা রক্তের বদৌলতে এ দেশে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন আরো মজবুত ও দৃঢ় ভিত্তি লাভ করবে বলেও মন্তব্য করেন এই জামায়াত নেতা।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘সরকারের ভূমিকা যে অত্যন্ত ন্যক্কারজনক তার বড় প্রমাণ হল গত ৯ আগস্ট রাতে মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমানকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী এক দল লোক জোর পূর্বক বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তাকে তার পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেয়া হয়নি। ব্যারিস্টার আরমান তার পিতার আইনজীবী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন’

ঘোষিত হরতাল কর্মসূচি চলাকালে হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, হজযাত্রীদের বহনকারী যানবাহন, সংবাদপত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট গাড়ি এবং ঔষধের দোকান হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন জানান এই জামায়াত নেতা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট