হযরত শাহজালালের (র.) উরস সম্পন্ন : দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা

প্রকাশিত: ২:৪৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৪, ২০১৬

ভক্ত-আশেকানদের জিকির-আজকার, নানা আনুষ্ঠানিকতা ও আজ ভোরে আখেরি মোনাজাত ও (তবারুক) শিরণী বিতরণের মধ্যে দিয়ে হযরত শাহ জালাল (রহ)-এর দু’দিনব্যাপী উরস সম্পন্ন হয়েছে। অলিকুল শিরোমণি হজরত শাহ জালাল (রহ)-এর উরস উপলক্ষে গত ক’দিন সিলেট নগরীর চিত্র ছিল অন্যরকম। উরস উপলক্ষে সোমবার (২২ আগস্ট) সকাল থেকে ভক্ত-আশেকানরা দলে দলে মাজারে আসতে শুরু করেন।

গতকাল মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) রাত থেকে উরসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী গতকাল সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় মাজারে গিলাফ চড়ানো। চলে বিকাল পর্যন্ত। মাজারে প্রথম গিলাফ চড়ায় মাজার কর্তৃপক্ষ। সকাল ১১টায় গিলাফ চড়ানো হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে।

হযরত শাহজালাল (র.)-এর ৬৯৭ তম পবিত্র ওরস মোবারকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, বাংলাদেশ সরকারের সফল প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে মঙ্গলবার সকালে গিলাফ প্রদান করেছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ।

এসময় উপস্থত ছিলেন- সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক, রাজ উদ্দিন, জুবের খান, আলম খান মুক্তি, আরমান আহমদ শিপলু প্রমুখ।

গিলাফ চড়ানোকালে মাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ, সিলেটের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও হাজার হাজার ভক্ত-আশেকান অংশ নেন।

মাজারে গিলাফ চড়ানো, সন্ধ্যায় পশু জবাই, রাতে কুরআন-খানি, মিলাদ মাহফিল, জিকির-আজকার, ভক্তিমূলক গজল পরিবেশন ছিল উরসের অন্যতম অনুসঙ্গ।

উরসকে কেন্দ্র করে হযরত শাহজালালের (রহ.) মাজার জিকির-আজকারে মশগুল হাজার হাজার ভক্ত, আশেকানের ভিড়ে মিলনমেলায় পরিণত হয়। বাতাসে ভেসে আসে ‘আল্লাহু, আল্লাহু’ ধ্বনি। শামিয়ানা টাঙিয়ে দলে দলে জড়ো হয়েছেন অসংখ্য অনুরক্ত।

কণ্ঠে তাদের ‘সিলেটে প্রথম আজান ধ্বনি বাবায় দিয়াছেৃ’, তুমি রহমতের নদীয়া/দোয়া কর মোরে হযরত শাহজালাল আউলিয়া’, জাল্লে জালাল বাবা শাহজালাল’, ‘সিলেট ভূমি ধন্য হইল বাবা শাহজালালরে ফাইয়া’, ‘ঝাঁকে উড়ে আকাশজুড়ে দেখতে কি সুন্দর/জালালের জালালি কইতর’,- এসব ভক্তিমূলক গান মাতিয়ে রাখছে পুরো এলাকা।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শাহজালালের আশেকান, অনুরক্তদের সঙ্গে সঙ্গে দূর-দূরান্ত থেকে শামিল হওয়া বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠীও মেতেছে ভক্তিমূলক গানের জলসায়। শাহজালালকে (রহ.) উৎসর্গ করে কেউ কেউ বাদ্যযন্ত্রসহকারে আবার কেউ খালি গলায় সুমধুর গানে মাতিয়ে রাখেন আগতদের। শুধু দরগা নয়, মিছিল-স্লোগান করে লাল ফিতা মাথায় বেঁধে ভক্ত-আশেকানদের মাজারে আসার বর্ণিল আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো নগরী।

গত ক’দিন সিলেটে আসা অধিকাংশ যানবাহনের গন্তব্য ছিল হযরত শাহজালালের (রহ.) মাজার প্রাঙ্গণ। এছাড়া সিলেটের বাইরে থেকে ভক্তদের নিয়ে আসা যানবাহন নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ, শাহী ঈদগাহ, কাজীটুলা, আম্বরখানা, চৌহাট্টা, পুলিশলাইনস, টিলাগড়, দর্শনদেউড়ীসহ নগরীর বিভিন্ন খালি জায়গায় রাখা হয়েছে। উরসকে কেন্দ্র করে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না-ঘটে সেদিকে লক্ষ্যে রেখে মেট্রোপলিটন পুলিশ ও র‌্যাব ৯ এর পক্ষ থেকে ছিল ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

উরস উপলক্ষে নগরীতে যাতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে ট্রাফিক ব্যবস্থা ছিল ঢেলে সাজানো। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি মাজার এলাকাসহ আশপাশ এলাকায় সাদা পোশাকের প্রায় দেড় শতাধিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করে।

ইসলাম প্রচারের জন্য হযরত শাহজালাল (রহ.) ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে ৩৬০ সফরসঙ্গী নিয়ে সিলেট আসেন। ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে ১৯ জিলকদ তিনি ইন্তেকাল করেন। সিলেটে তিনি যে টিলায় বসবাস করতেন সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। এই মাজার সারা বছরই ভক্ত আশেকান ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট