খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রের মুক্তি নিশ্চিত করতে আন্দোলনের বিকল্প নেই : টেলিকনফারেন্সে তারেক রহমান

প্রকাশিত: ৭:৪২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০১৮

খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রের মুক্তি নিশ্চিত করতে আন্দোলনের বিকল্প নেই : টেলিকনফারেন্সে তারেক রহমান

 বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান বলেছেন- তৃণমুল নেতাকর্মীরাই বিএনপির প্রাণ। অতীতেও দলের জন্য তৃণমুল নেতাকর্মীদের রয়েছে গৌরবোজ্জল ভুমিকা। দেশ ও জাতির চরম ক্রান্তিলগ্নে তৃণমুল নেতাকর্মীদেরকে অতীতের চেয়েও বেশী ভুমিকা পালন করতে হবে। ফ্যাসিস্ট সরকার সিলেটের জননেতা এম. ইলিয়াস আলী, ছাত্রদল নেতা দিনার, জুনেদ, আনসার আলী সহ দেশের অনেক নেতাকর্মীদের গুম করেছে। নিরীহ নেতাকর্মীদের উপর চালাচ্ছে সীমাহিন জুলুম নিপীড়ন। চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন নস্যাত করতে এবং নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে দিতেই অবৈধ বাকশালী সরকার ষড়যন্ত্রমুলক মামলায় তিন বারের সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখেছে। উদ্দেশ্য ছিলো দেশনেত্রীকে কারাগারে রেখে বিএনপির মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি করে পাতানো নির্বাচনে অংশ নিতে দলকে বাধ্য করে। শহীদ জিয়ার সৈনিকদের ইস্পাত কঠিন ঐক্যের কারণে সরকারের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাত হয়েছে। আমাদের সামনে দেশনেত্রীর মুক্তি এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ছাড়া কোন পথ নেই। আর তা কেবলই কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সম্ভব। তাই সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে চুড়ান্ত আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত হবে।
গতকাল শনিবার আগামী ১০ এপ্রিলের সিলেট বিভাগীয় সমাবেশ সফলের লক্ষ্যে সিলেট জেলা বিএনপির প্রতিনিধি সভায় টেলিকনফারেন্সে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন। নগরীর সোবহানীঘাটস্থ আগ্রা কমিউনিটি সেন্টারে সিলেট জেলা বিএনপি আয়োজিত প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট জেলা সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিনিধি সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও, সিলেট বিভাগীয়, সিলেট জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ, জেলার সকল উপজেলা ও পৌর বিএনপি নেতৃবৃন্দ এবং জেলা অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন- দেশ-জাতি এবং বিএনপি আজ কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিএনপি এমন কঠিন পরিস্থিতির সম্মূখীন হয়েছে। এমন দুঃসময়ে দলের নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের ভালবাসা ও ত্যাগ বিএনপিকে সকল ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করছে। যে গণতন্ত্রের জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছিল স্বাধীনতার কিছুদিন পরই সেই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার কায়েম করা হয়েছিল। জাতির সংকটময় মুহুর্তে একটি রাজনৈতিক পট-পরিবতর্নের পর মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাই বিএনপি এবং গণতন্ত্র একই সূত্রে গাথা। বিএনপি মানুষের কল্যানের রাজনীতি করে, গণতন্ত্রের রাজনীতি করে, উন্নয়নের রাজনীতি করে তাই বিএনপিকে নিয়ে স্বৈরাচারী শাসক গোষ্ঠীর এত ভয়। তারা জানে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। আর এজন্যই তারা ষড়যন্ত্রমুলক মামলার ফরমায়েসী রায়ে গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখেছে। যাতে বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী ভোটারবিহীন নির্বাচনের মতো আরো একটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে পারে। কিন্তু তাদের সেই ষড়যন্ত্র কখনোই সফল হবেনা। দেশে বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবেনা।
মোহাম্মদ শাহজাহান আরো বলেন- শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন মহান স্বাধীনতার ঘোষক আর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলেন গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলনের সর্বাধিনায়ক। শহীদ জিয়া মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন আর বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। মুুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যেমন স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে তেমনী আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মুক্তিও নিশ্চিত হবে। দেশ ও দলের দুর্দিনে তৃণমুল নেতাকর্মীর যে আশ্বাস দিয়েছেন তা দিয়েই জনগণের বিজয় নিশ্চিত হবে। সকল ক্ষেত্রে দলের ঐক্য সুসংহত করুন বেশী দিন অপেক্ষা করতে হবেনা কয়েক মাসের মধ্যেই দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হবে। যে কোন মুল্যে ১০ এপ্রিল সিলেট বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে হবে। এর মাধ্যমেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সফলতা নিহিত রয়েছে। সিলেটের কোটি জনতার হৃদয়ের স্পন্দন জননেতা এম. ইলিয়াস আলী, ছাত্রদল নেতা দিনার, জুনেদ ও গাড়ী চালক আনসারী আলী সহ গুমকৃত নেতাকর্মীদের অবিলম্বে অক্ষত অবস্থায় পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ওলামা দল নেতা মাওলানা এখলাছুর রহমানের পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের সুচীত প্রতিনিধি সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্ঠা ড. মো: ইনামুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, বিএনপির কেন্দ্রীয় ও সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: সাখাওয়াত হাসান জীবন, বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম, বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব শফি আহমদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা: শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাসাস এর সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক হেলাল খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মশিউর রহমান বিপ্লব, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক আহŸায়ক এডভোকেট নুরুল হক, সিলেট মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম প্রমুখ।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তিনটি প্রস্তাবনা গৃহিত হয়। প্রস্তাবনা হলো- বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এখন পর্যন্ত যে সকল নেতাকর্মী ইন্তেকাল করেছে তাদের জন্য শোক প্রস্তাব গৃহিত হয়। সভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ মনে করেন সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে তিন বারের সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একটি ষড়যন্ত্রমুলক মামলার ফরমায়েসী রায়ে সাজা দিয়ে কারাগারে আটকে রেখেছে। অবিলম্বে তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। এছাড়া সভায় নিখোঁজ জননেতা এম. ইলিয়াস আলী, ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনার, জুনেদ আহমদ ও গাড়ী চালক আনসার আলী সহ দেশব্যাপী গুমকৃত সকল নেতাকর্মীদের অক্ষত অবস্থায় অবিলম্বে নেতাকর্মীদের মাঝে ফিরিয়ে দেয়ার জোর দাবী জানানো হয়।
প্রতিনিধি সভায় বক্তব্য রাখেন- ওসমানীনগর উপজেলা চেয়ারম্যান মইনুল হক চৌধুরী, কানাইঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরী, বালাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদাল মিয়া, গোয়াইনঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হেকিম চৌধুরী, বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল আহমদ চৌধুরী, জকিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ, বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা জায়গীরদার, বিয়ানীবাজার উপজেলা সভাপতি নজমুল হোসেন পুতুল, গোলাপগঞ্জ উপজেলা সভাপতি নছিরুল হক শাহীন চেয়ারম্যান, জেলা কৃষক দলের সভাপতি সৈয়দ মোতাহির আলী, জেলা তাতী দলের সভাপতি শাহজামাল নুরুল হুদা, জৈন্তাপুর উপজেলা সভাপতি আলহাজ্ব এনায়েত উল্লাহ, গোলাপগঞ্জ পৌর সভাপতি মশিকুর রহমান মহি, কানাইঘাট পৌর সভাপতি কাউন্সিলার শরীফুল হক, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহŸায়ক নিজাম উদ্দিন লস্কর, জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহŸায়ক এডভোকেট আনোয়ার হোসেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন, সিলেট সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ, গোয়াইনঘাট উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম স্বপন, বিশ্বনাথ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া চেয়ারম্যান, ওসমানীনগর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক এসজিএম ফখরুদ্দীন চেয়ারম্যান, জকিগঞ্জ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান, কানাইঘাট উপজেলা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফরিদ আহমদ, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক তাছলিম আহমদ নিহার, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাঈদ আহমদ, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী কাউন্সিলার সালেহা কবির শেপী, জেলা জাসাস সভাপদি জসিম উদ্দিন ও ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সাদিকুর রহমান।
সভাপতির বক্তব্যে আবুল কাহের চৌধুরী শামীম বলেন- সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় যে কোন মুল্যে আগামী ১০ এপ্রিল সিলেট বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ সারাদেশের মধ্যে একটি ইতিহাস সৃষ্টি করবে। বিভাগীয় সমাবেশে জনতার ¯্রােতকে জনসমুদ্রে পরিনত করার মাধ্যমে বাকশালীদের অবৈধ শাসনের ভীত কাঁপিয়ে দিতে হবে।