খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসায় বাধা : পাঁচ দিনেও অনুমতি মেলেনি ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের

প্রকাশিত: ১:০৯ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৬, ২০১৮

খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসায় বাধা : পাঁচ দিনেও অনুমতি মেলেনি ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের

রফিক মৃধা : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা শারীরিক অবস্থা জানতে সাক্ষাতের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনের পাঁচদিন পরও মেলেনি সাক্ষাতের অনুমতি। কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসায় বাধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এদিকে অসুস্থতার কারণে গতকাল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করেনি কারা কর্তৃপক্ষ। : এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের অসুস্থতার কারণে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে নির্ধারিত সাক্ষাৎও বাতিল করা হয়। কারা কর্তৃপক্ষ প্রথমে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে এবং পরে একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। কারাগারে বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে কারা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য আসে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করেন। : এরপর বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তার শারীরিক পরিস্থিতি জানতে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনের পর তার দুটি কপি আইজি প্রিজন ও জেল সুপারের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু আবেদনের পাঁচদিন পরও মেলেনি সাক্ষাতের অনুমতি। এমন পরিস্থিতি নিয়ে কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার প্রকৃত তথ্য পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসন কতটুকু অসুস্থ এ ব্যাপারে সৃষ্ট ধোঁয়াশার মধ্যে তার বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে একচোট বাহাস সেরেছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হবে বলে একটি সংবাদ প্রচারিত হয় গণমাধ্যমে। সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাতে সে সংবাদে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া একা হাঁটতে পারছেন না। তার আগের সমস্যাগুলো আরো বেড়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা খালেদা জিয়াকে কিছু নতুন ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিলেও তিনি তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ নিতে চাইছেন না। : এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ড বেগম খালেদা জিয়ার এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষার সুপারিশ করেছে। এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন বুধবার কারা কর্তৃৃপক্ষের কাছে পৌঁছেছে। মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনটি পাওয়ার কথা সাংবাদিকদের নিশ্চিতও করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, সুপারিশ অনুযায়ী সরকারি যেকোনো একটি ভালো হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়াকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে নেয়া হতে পারে। এ ছাড়া হয়তো তার ব্যক্তিগত চিকিৎসককে কারাগারে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। এরপর গতকাল দিনভর অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে ছোটাছুটি করেছেন বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার। কিন্তু রাত ১০টা পর্যন্ত ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সাক্ষাতের অনুমতি মেলেনি। এ ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার দিনকালকে বলেন, আমরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নামসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি কয়েকদিন আগে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরে খোঁজখবরও নেয়া হচ্ছে নিয়মিত। কিন্তু এখন পর্যন্ত অনুমতি মেলেনি। বিএনপি চেয়ারপারসনের অসুস্থতা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানতে এবং সে অনুযায়ী তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা সাক্ষাতের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছেন। : বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. ফাওয়াজ হোসেন শুভ জানান, চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা অনুমতির অপেক্ষা করছেন। তারা বলেন, আমরা দলের পক্ষ থেকে চেয়ারপারসনের অসুস্থতা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানতে চাই। তার সুচিকিৎসার সুযোগ চাই। : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দিনকালকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপর সরকারি সর্বোচ্চ জুলুম ও নির্যাতন চলছেই। তাকে জামিন ও সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। স্থগিত করে রাখা হয়েছে। তিনি কারাগারে ঘাড়ে, বাঁ হাতে ও পায়ে ব্যথা বোধ করেন। হাত ঝিমঝিম করে। বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্ট জামিন দিলেও সরকারপ্রধানের নির্দেশে সে জামিন স্থগিত করা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। জামিন অধিকারসহ সকল অধিকার কেড়ে নিয়ে তিলে তিলে সরকার তাকে কষ্ট দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছি। : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে সরকারের সকল অপকর্ম, দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের মুখ বন্ধ করতেই সম্পূর্ণ প্রতিহিংসাবশত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন অধিকারসহ সকল অধিকার কেড়ে নিয়ে তিলে তিলে কষ্ট দিচ্ছে সরকার। ৭৩ বছর বয়স্ক এই জনপ্রিয় জাতীয় নেত্রীর এখন প্রকৃত শারীরিক অবস্থা কেমন সেটিও আমরা জানতে পারছি না এবং তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদেরকে সুচিকিৎসা দিতেও বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। মামলায় জামিন পাওয়া মানুষের অধিকার। : এদিকে গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাৎ করেছেন। বুধবার পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পরিত্যক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে তারা এ সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকারীদের মধ্যে রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার বড় বোন সেলিনা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, ভাতিজা অভিক এস্কান্দার, ভাগনে ডা. মো. মামুন, ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলী রহমান ও নাতনী জাহিয়া রহমান। বিকাল সাড়ে চারটা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা সাক্ষাতের পর তারা বাসায় ফিরে যান। তবে কারাগার থেকে বেরিয়ে তারা গণমাধ্যমকে কিছু বলেননি। : সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অনুমতি চেয়েছেন চার বুদ্ধিজীবী। তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মাহবুব উল্লাহ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। বুধবার তারা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আবেদন করেছেন। : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। রায় ঘোষণার পরই নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে সেখানে রাখা হয়।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট