আমাদের প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিকভাবে স্বৈরতন্ত্রের মালিক : আমীর খসরু

প্রকাশিত: ১১:১২ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০১৮

আমাদের প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিকভাবে স্বৈরতন্ত্রের মালিক : আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিকভাবে স্বৈরতন্ত্রের মালিকের স্বীকৃতি পেয়েছেন। আর গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের মালিক হয়েছেন।’

শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) ‘দুর্নীতি-দুঃশাসন বিরোধী দিবস’ ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন, বিচার বিভাগ ও মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত। মানুষ ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। শাসকের পছন্দের বিচারপতি দিয়ে বিচার বিভাগ চলতে পারে না। বর্তমানে শাসকগোষ্ঠী অন্যায়ভাবে জালিয়াতির মামলা দিয়ে ১৮ কোটি মানুষের নেত্রীকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। সরকার খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে একদলীয় শাসন কায়েম করতে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুর্নীতির মাধ্যমে সরকার দেশের বড় অঙ্কের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এখন আমানতকারীদের টাকাও ব্যাংক থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। ১ লাখ টাকা তুলতে গ্রাহকদের সময় লাগে তিন দিন। এটা কেন? একমাত্র সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে হয়েছে। সুতরাং জনগণ এখন সরকারকে দুর্নীতির সার্টিফিকেট দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিদায়ও হবে অনিবার্য।’ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে সরকারের প্রতি তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের খেলা বন্ধ করুন, তাকে মুক্তি দিন।’

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপিকা রেহানা প্রধান বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনের ফাঁদ পাতানো হলে জনগণই তা রুখে দেবে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, এনপিপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান প্রমুখ।

আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন : আমীর খসরু

‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন যে আমাদের প্রমাণ করতে হবে এখন, আমরা দুর্নীতি করি নাই। মানে, আপনি চিন্তা করেন কী পর্যায়ের… তারা বলেছেন কথা, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কথা… তারা প্রমাণ করবে, এখন উল্টো বলছে যে বিএনপিকে নাকি প্রমাণ করতে হবে। এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগ, কারণ তাদের হাতে তো কিছু নাই। আর বিএনপির হাতেও কিছু নাই। এটা হচ্ছে তারা আত্মরক্ষার জন্য করেছেন, কারণ তারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন।’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী নাগরিক দল আয়োজিত ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের’ জন্য আলোচনা সভায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেন।

বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘সৌদি আরবে জিয়া পরিবারের সম্পদ নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন খালেদা জিয়া, তার জবাবের অপেক্ষায় আছে বিএনপি।’

সৌদি আরবে জিয়া পরিবারের সম্পদ নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে গত ২০ ডিসেম্বর উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন খালেদা জিয়া এরই প্রতিক্রিয়া জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘যে পরিমাণ দুর্নীতি, তার খুব কমই এখানে তুলে ধরা হয়েছে। দুর্নীতির পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি। যেগুলো কাগজে এসেছে, যেগুলো তদন্তাধীন এবং দুর্নীতির যে কঠিন সত্যগুলো বেরিয়ে আসবে, তার শুরু মাত্র। আইনি নোটিশকে আমরা আইনের মাধ্যমেই মোকাবিলা করব।’

এ সময় বিএনপি নেতা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ‘টার্গেট’ করে এগোচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রিত অবস্থার মধ্যে রেখে আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়া যাতে অংশগ্রহণ করতে না পারে, নির্বাচনে ওনার ভূমিকা যাতে না থাকে, সেটাই তারা (আওয়ামী লীগ) বেছে নিয়েছে।’

‘আমি তাদের অনুরোধ করছি, সেই পথ পিচ্ছিল, সেই পথে আপনারা চলবেন না। একবার চলেছেন, বাকশাল করে একদলীয় সরকার করে, আপনাদের অনেক উচ্চমূল্য দিতে হয়েছে। এইবার এই পিচ্ছিল পথে যদি চলেন, আগামী দিনে আরো অনেক উচ্চমূল্য দিতে হতে পারে।’

খালেদা জিয়ার মামলার কথা উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই মামলাগুলো বিচারের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো মামলা নয়। এই মামলাগুলো পুরোপুরিভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিচার বিভাগের অধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগ যাতে স্বাধীন ভূমিকা পালন করতে না পারে, সে জন্য প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

এ সময় বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘আওয়ামী কারখানা থেকে তৈরি কতগুলো মামলা, এসব অভিযোগের তারা আজ পর্যন্ত একটা সত্যতা দিতে পারেনি। আমরা উকিল নোটিশ দিয়েছি, উকিল নোটিশের জবাবের অপেক্ষায় আছি।’

আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ প্রমুখ।