‘মন্ত্রিসভায় বিএনপির প্রতিনিধি থাকবে না’

প্রকাশিত: ১০:০১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০১৮

‘মন্ত্রিসভায় বিএনপির প্রতিনিধি থাকবে না’

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাস আগে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ ভেঙে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি সংসদে যেসব দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে শুধুমাত্র সেসব দল থেকে প্রতিনিধি নিয়ে নির্বাচনকালীন নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন করা হবে। কিন্তু বর্তমান সংসদে বিএনপির কোনো প্রতিনিধিত্ব না থাকায় নির্বাচনকালীন সেই মন্ত্রিসভায় তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকবে না।

শনিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা প্রতিষ্ঠিত নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভারতেশ্বরী হোমসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্ম দিবস ও জাতীয় শিশু দিবস এবং ভারতেশ্বরী ছাত্রীদের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, ছবিসহ ভোটার আইডি কার্ড হওয়ায় ফলে এখন আর জালিয়াতি নির্বাচন করা সম্ভব না। তবে দুই এক জায়গায় গুপ্ত বাহিনী দিয়ে ভোটকেন্দ্র দখল করার সম্ভাবনা রয়েছে। সে জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সারা দেশে কয়েক ধাপে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করার পরিকল্পনাও করা হয়েছে।

মন্ত্রী ভারতেশ্বরী হোমসে প্রিন্সিপাল প্রতিভা মুৎসুদ্দি হলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ছাড়াও কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা, একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক প্রতিভা মুৎসুদ্দি, শ্রীমতি সাহা ও ভারতেশ্বরী হোমসের অধ্যক্ষ প্রতিভা হালদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আগামী অর্থবছরের সম্ভাব্য বাজেটের আকার চার লাখ ৬০ থেকে চার লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৮ সালে মধ্যেই মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। তবে জাতিসংঘ ২০২৪ সালে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।

পরে বিকালে তিনি কুমুদিনী হাসপাতালে আধুনিক আইসিও উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী।

জামায়াত নিষিদ্ধে প্রবলেম আছে : অর্থমন্ত্রী

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের চাওয়া, একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচারের ফয়সালার সময় আদালতের পর্যবেক্ষণ, তার পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয়ের খসড়া তৈরির পরও দেশে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে ‘কিছু সমস্যা’ আছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে একটি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। এ সময় তিনি সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলাকে নিন্দনীয় এবং ন্যক্কারজনক বলে উল্লেখ করেন। তিনি আশা করেন, দ্রুতই ঘটনার বিচার হবে।

তবে কী ‘প্রবলেম’ আছে, তা না উল্লেখ করলেও ‘জামায়াতকে দ্রুত দেশ থেকে বের করে দেওয়ার পক্ষে’ সরকারের ওই বয়োজ্যেষ্ঠ মন্ত্রী।

হামলাকারী ফয়জুরের মামা কৃষক লীগের নেতা, সেদিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রশ্ন তুলেন যে, এই হামলার সঙ্গে আওয়ামী লীগ জড়িত কি না?

আজকের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো জামায়াতের ভাষায় কথা হয়ে গেল। জামায়াত দেশের শত্রু। তাদের এক্ষুনি দেশ থেকে বের করে দেওয়া উচিত।’

অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে জামায়াতের প্রসঙ্গ আসায় একজন সাংবাদিক তখন বলেন, ‘জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের একটি সিদ্ধান্ত আছে। আইন মন্ত্রণালয় এটির খসড়া করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমাও দিয়েছে। তাহলে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে বিলম্ব করছে কেন?’

জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে প্রবলেম আছে। সবকিছু দেখেশুনে আগাতে হচ্ছে।’

এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন জাফর ইকবালের ওপর হওয়া জঙ্গি হামলার ঘটনা এটা প্রমাণ করে কি না যে, দেশে জঙ্গিবাদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে?

জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় জঙ্গিরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। জঙ্গিবাদ দমন হয়েছে। দু-একটি ঘটনা ঘটছে, জঙ্গিরা ধরাও পড়ছে, বিচারও হচ্ছে।’

জাফর ইকবালের ওপর হামলার ব্যাপারে গতকাল রোববার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করেন,‘এই জঙ্গি হামলায় বিএনপির ইন্ধন আছে।’

তবে এই প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেননি অর্থমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনের আগে অর্থমন্ত্রী বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডার এবং বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের একীভূত করার বিষয়ে গঠিত কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন।

গত শনিবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে এক অনুষ্ঠান চলাকালে অতর্কিতে হামলায় ছুরিকাহত হন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এ ঘটনায় মাদ্রাসাছাত্র ফয়জুর রহমানকে সঙ্গে সঙ্গে ধরে ফেলে এবং পিটুনি দেয়। পরে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে।

হামলাকারী ফয়জুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী কুমারগাঁওয়ের শেখপাড়ার বাসিন্দা। তার মূল বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের কলিয়ার কাপনপুরে। ঘটনার দিন রাতেই হামলাকারী ফয়জুর রহমানের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে তার মামা সুনামগঞ্জ জেলা কৃষক লীগের বহিষ্কৃত নেতা ফজলুর রহমানকে আটক করা হয়। পরে তার চাচা চাচা আবদুল কাহার (৫৫), বাবা মাওলানা আতিকুর রহমান ও মা মিনারা বেগমকে আটক করে পুলিশ। এই হামলা নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছে।